দৈনিক কালবেলা পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেছেন দেশের প্রথিতযশা সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবেদ খান। কাল বৃহস্পতিবার ৩০ জুন নতুন আঙ্গিকে প্রকাশিতব্য এই পত্রিকাটিতে যোগ দেন তিনি। এর আগে তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদেও ছিলেন। ১৯৬২ সালে ১৭ বছর বয়সে ছাত্রাবস্থায় আবেদ খানের সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি হয় দৈনিক ‘জেহাদ’ পত্রিকার মাধ্যমে। ১৯৬৩-তে তিনি দৈনিক ‘সংবাদ’-এ যোগদান করেন। ১৯৬৪ সালে দৈনিক ইত্তেফাক-এ যোগ দেওয়ার মাধ্যমে শুরু করেন এক দীর্ঘ কর্মসাধনাময় অধ্যায়। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘকাল ইত্তেফাক পত্রিকায় তিনি পর্যায়ক্রমে শিফট-ইনচার্জ, প্রধান প্রতিবেদন, সহকারী সম্পাদক ও কলামিস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০০৩ সালে তিনি সম্পাদক হিসেবে দৈনিক ভোরের কাগজে এবং ২০০৫ সালে দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক পদের দায়িত্ব নেন। আবেদ খান দৈনিক সমকালের সম্পাদক হিসেবে ২০১০ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। পরে দৈনিক কালের কণ্ঠের একজন প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে ২০১১ সাল পর্যন্ত এবং ২০১৩ সাল পর্যন্ত এটিএন নিউজের প্রধান সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে ১৯৯৯ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি একুশে টেলিভিশনের সংবাদ ও চলতি তথ্য বিষয়ে প্রধান হিসেবে কাজ করেন। একুশে টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেই এর সঙ্গে যুক্ত হন এবং প্রথম আন্তর্জাতিক মানের সংবাদ উপস্থাপনার উদাহরণ হিসেবে একুশে টেলিভিশনকে প্রতিষ্ঠা করেন। প্রাথমিকভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রযুক্তিগত অবকাঠামোতে অনেক বেশি সীমাবদ্ধতা ছিল। তার পরও টেরেস্ট্রিয়াল ও স্যাটেলাইট টেলিভিশন মিডিয়ায় আধুনিক সাংবাদিকতা এ দেশে তার হাত ধরেই স্পর্শ করেছে জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার বিরল শিখর। তারও আগে ১৯৯৬-৯৯ সালে তার অনুসন্ধানমূলক টেলিভিশন রিপোর্টিং সিরিজ ‘ঘটনার আড়ালে’ টেলিভিশন-সাংবাদিকতার আরেকটি জনপ্রিয় চূড়া। বাংলাদেশ আমলে অনুসন্ধানমূলক রিপোর্টিংয়ের সূচনা হয় তার হাতেই। তার বিখ্যাত ‘ওপেন-সিক্রেট’ সিরিজ আজ পর্যন্ত এ দেশের সাংবাদিকতা জগতে ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে আছে। এ সংক্রান্ত পড়াশোনায় ‘রেফারেন্স’ হিসেবে ‘ওপেন সিক্রেট’-এর বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। এছাড়া, দেশের সংবাদ মাধ্যমে কলামিস্টকে তিনিই পেশায় রূপান্তরিত করেন। সম্পাদকীয় বিভাগে সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের সময়ই তিনি অভাজন ছদ্মনামে তার পাঠকপ্রিয় ‘নিবেদন ইতি’ শিরোনামে কলাম লেখায় মনোযোগী হন; যেটি সে সময় অভাবিত জনপ্রিয়তা পায়। ভোরের কাগজ-এ প্রথম পৃষ্ঠায় ‘টক অব দ্য টাউন’, জনকণ্ঠে প্রকাশিত ‘গৌড়ানন্দ কবি ভনে শুনে পুণ্যবান’, ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে এই প্রতিবেদনগুলোর মধ্যদিয়েই আবেদ খান তুমুল জনপ্রিয়তায় দেশবাসীর কাছে হয়ে ওঠেন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। এক সময় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন যোগ্যতার সঙ্গে। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের এক সময়ের অত্যন্ত জনপ্রিয় উপস্থাপক, বিশিষ্ট আবৃত্তিকার ও সাংস্কৃতিক সংগঠক। ছয় বছর তিনি বাংলাদেশ বেতার-টেলিভিশন শিল্পী সংসদের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৬৪ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত অবিভক্ত সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃত্ব দেন এই গুণীজন। সম্প্রতি সরকারের দেওয়া ‘প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ’ (পিআইবি) চেয়ারম্যান- এর দায়িত্বটি সফলভাবে শেষ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা, প্রবন্ধ, গল্প, শিশুসাহিত্য এবং স্মৃতিকথা নিয়ে এ পর্যন্ত ২০টিরও বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে আবেদ খানের এবং তার বেশিরভাগ লেখাই রাজনীতি বিষয়ক।আবেদ খান একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের গণমাধ্যম সংস্কৃতিতে দীর্ঘকাল ধরে অনবদ্য অবদান রেখে আসছেন। দেশের জন্য যেকোনও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি সর্বদা সক্রিয় ও সোচ্চার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এছাড়াও, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সামাজিক কর্মকা-সহ নানা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি দেশ-বিদেশে বিভিন্ন সম্মাননা ও পুরস্কারে ভূষিত হন।