শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৫ অপরাহ্ন

জীবনের প্রতি নির্মোহ দৃষ্টির ইভান তুর্গেনেভ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

রুশ কবি, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার এবং অনুবাদক ইভান তুর্গেনেভের জন্ম ১৮১৮ সালে। রুশ সাহিত্যকে ইউরোপের অন্যান্য এলাকায় পরিচিত করান তুর্গেনেভ। রাশিয়ার সাহিত্যে বাস্তবতার ব্যবহার প্রচলন করার ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে আছে তাঁর গল্প সংকলন ‘একজন ক্রীড়াবিদের প্রতিকৃতি’। উনিশ শতকের কথাসাহিত্যের অন্যতম প্রধান হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে তাঁর উপন্যাস ‘পিতাগণ পুত্রগণ’। অভিজাত বংশে জন্ম ইভানের। পঞ্চদশ শতকের তাতার মির্জা লেভ তুর্গেনের বংশের ধারা মিশেছে ইভানের পরিবারে। ইভানের মায়ের বংশও ছিল অভিজাত। ইভান, নিকোলাই এবং সেরগেইকে মা লালন-পালন করেন কড়া শাসনের মধ্যে। তাঁদের গড়ে তোলার দিকে ছিল মায়ের সতর্ক এবং সজাগ দৃষ্টি। ছেলেদের দেখাশোনার জন্য তিনি একাধিক বিদেশি পরিচারিকা নিয়োগ করেন। ফলে ছেলেবেলা থেকেই ইভান ফরাসি, জার্মান এবং ইংরেজি ভাষায় পারদর্শিতা অর্জন করেন। ইভানের মানসিক বিকাশের ওপর বাবারও একটা বিশেষ প্রভাব দেখা যায়। বাবা কর্মসূত্রে অনেক সময় বাইরে কাটান। তিনি সন্তানদের প্রতি কড়া ছিলেন না। তবু তাঁর অনুপস্থিতি ইভানের মনে অভিমান তৈরি করে। আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস ‘প্রথম প্রেম’ বড় হতে থাকা ইভানের আবেগী মানসের পরিচয় তুলে ধরে। উচ্চশিক্ষা গ্রহণকালে রাশিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ জার্মানির বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়াশোনা করেন। দর্শন এবং ইতিহাসের পাঠক হিসেবে এ দুটি বিষয়ের প্রতি ছিল তাঁর বিশেষ টান। দার্শনিক হেগেলের মতাদর্শ তাঁর ওপর প্রভাব ফেলে। জার্মান সমাজের বিভিন্ন বিষয় তাঁকে মুগ্ধ করে। সেখান থেকে ফিরে আসার সময় মনে হতে থাকে, রাশিয়ারও উচিত জার্মানির মতো সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলা।
ছেলেবেলায় তুর্গেনেভ অষ্টাদশ শতকের কবি মিখাইল খেরাসকভের কবিতা পড়ে মুগ্ধ হন। অল্প বয়স থেকেই লেখালেখি এবং ছবি আঁকার দিকে ঝোঁক দেখা যায়। তাঁর প্রতিভার লক্ষণ দেখে মুগ্ধ হন তখনকার সময়ের অন্যতম প্রধান রুশ সাহিত্য সমালোচক ভাসারিওন বেলিনস্কি। ইভান তুর্গেনেভ তাঁর নিজের নন্দনতাত্ত্বিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে মিল খুঁজে পান ফরাসি সাহিত্যিক গুস্তাভ ফ্লবেয়ারের মতাদর্শের। চরম বাম কিংবা ডানপন্থী উভয়কেই তাঁরা প্রত্যাখ্যান করেন। জীবনজগতের প্রতিও তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি কোনো কম মতামত ব্যক্ত করে না। তুর্গেনেভের সঙ্গে দস্তয়েভস্কি এবং তলস্তয়ের সম্পর্ক খুব চমৎকার ছিল না। তাঁরা দুজনই পশ্চিম ইউরোপের প্রতি তুর্গেনেভের আপাতপক্ষপাত পছন্দ করেননি। তুর্গেনেভের প্রতি দস্তয়েভস্কি যতটা বিরক্ত ছিলেন, তার চেয়েও বেশি বিরক্ত ছিলেন তলস্তয়। একসঙ্গে প্যারিস ভ্রমণের সময় তুর্গেনেভ সম্পর্কে তলস্তয় লেখেন,‘তুর্গেনেভ অসহ্য।’ মনোমালিন্যের একপর্যায়ে তাঁরা একে অন্যের সঙ্গে সতেরো বছর কথা বলেননি। তবে তাঁদের দুজনের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক অটুট ছিল। অবশ্য তাঁদের দুজনের সঙ্গেই তুর্গেনেভের সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত বন্ধুত্বের বন্ধনে জোড়া লেগেছিল। পুশকিনের ভাস্কর্য উদ্বোধনকালে দস্তয়েভস্কির মর্মস্পর্শী বক্তৃতা শুনে উপস্থিত অন্য সবার মতো তুর্গেনেভের চোখ থেকেও অশ্রু গড়িয়েছিল। অন্যদিকে মৃত্যুশয্যায় শায়িত তুর্গেনেভ তলস্তয়কে সাহিত্যে ফিরে আসার অনুরোধ করেছিলেন। তাঁর অনুরোধ মাথায় রেখে তলস্তয় তাঁর বিখ্যাত উপন্যাসিকা ‘ইভান ইলিচের মৃত্যু’ এবং ‘ক্রয়েটজার সোনাটা’ লিখেছিলেন। তুর্গেনেভ মৃত্যুবরণ করেন ১৮৮৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com