রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝজিয়া নিয়ে চারটি ইউক্রেনের অঞ্চলকে রাশিয়ার সাথে সংযুক্তির ঘোষণা দেন। তিনি মিডিয়ায় ভাষণে বলেন, যে চারটি অঞ্চলের লোকজন চিরদিনের জন্য রাশিয়ার সাথে সংযুক্ত থাকবে, তাদের নাগরিকরা রাশিয়ার নাগরিকে রূপান্তরিত হবে ও সবাই একই রকম সুযোগ সুবিধা পাবে। চারটি এলাকাকে রাশিয়ার ‘নতুন অঞ্চল’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। পুতিন জনগণের গণতান্ত্রিক ইচ্ছার প্রতিফলনের জন্য গণভোটের আয়োজন করেছেন এবং ইউক্রেনের সাথে আলোচনার আহ্বানও জানিয়েছেন। এই সংযুক্তিকরণ নিয়ে সারা বিশ্বে হইচই পড়ে গেছে।
জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এই সংযুক্তিকরণের নিন্দা জানিয়েছেন এটি আন্তর্জাতিক আইনের ‘লঙ্ঘন’ বলে। জাতিসঙ্ঘ সাত মাসের বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধে এটিকে ‘বড় বিপজ্জনক মোড়’ বলে অভিহিত করেছে। গুতেরেস আরো পরিষ্কারভাবে বলেন, ‘হুমকি বা বল প্রয়োগের ফলে অন্য রাষ্ট্রের কোনো ভূখ-ের যেকোনো সংযুক্তি জাতিসঙ্ঘ সনদের স্পষ্ট লঙ্ঘন।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার এই পদক্ষেপ প্রতারণামূলক ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করে এর নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে, জাতিসঙ্ঘের সনদ পদদলিত করছে এবং সর্বত্র শান্তিপূর্ণ দেশগুলোর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সবসময় ইউক্রেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমান্তের প্রতি সম্মান জানাবে।’ ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, ‘ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝজিয়া ও খেরসন অঞ্চল রাশিয়ার অবৈধ সংযুক্তির বিষয়টি আমরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করি ও দ্ব্যর্থহীনভাবে নিন্দা জানাই।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলো দাবি করেছে- এই পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাশিয়া বৈশ্বিক নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। তারা মস্কোকে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে নিয়ম-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা হ্রাস করার ও স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখ-তার জন্য ইউক্রেনের মৌলিক অধিকার, জাতিসঙ্ঘের সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনে বর্ণিত মূল নীতিগুলো লঙ্ঘন করার’ দায়ে অভিযুক্ত করেছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডের লেয়েন বলেন, ‘রাশিয়ান আক্রমণকারীদের অবৈধভাবে দখল করা সমস্ত অঞ্চল ইউক্রেনের ভূমি ও সর্বদা এই সার্বভৌম জাতির অংশ হিসেবেই পরিগণিত হবে। তিনি দাবি করেন, ‘আমি আনন্দিত যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এমন একটি নিপীড়নমূলক রাষ্ট্র বা পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে যা অন্যের স্বার্থের ক্ষতি করে এবং তাদের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও অন্যান্য মৌলিক অধিকারকে হ্রাস করে।’ তা হলে এখন স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, রাশিয়ার যদি অন্যের জমি দখল করা এতই অপরাধমূলক হয় তবে ইসরাইল যে দিন দিন ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করে ভূমি দখল করছে, বসতি নির্মাণ করছে- সে বিষয়ে কি পদক্ষেপ নিয়েছে বিশ্বসভা ও পশ্চিমা জগৎ? কেন ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের জমি দখল করার সুযোগ পাচ্ছে? ১৯৬৭ সালে ইসরাইল ফিলিস্তিনের পূর্ব জেরুসালেম, পশ্চিম তীর ও গাজা স্ট্রিপ দখল করে নেয়, সিরিয়ার গোলান হাইটস ও মিসরের সিনাই উপদ্বীপও দখল করে। পশ্চিম তীর ও গাজা স্ট্রিপ দখল করার সাথে সাথেই ইসরাইল জেরুসালেমের পৌর সীমানায় পশ্চিম তীরের বিরাট অংশ সংযুক্ত করে এবং তাদের আইন-কানুন বলবৎ করে। ইসরাইলি অধিকার গ্রুপ ‘ঞংবষবসবি’ সেলেমবি তাদের প্রতিবেদনে তা প্রকাশ করে।
এই দখল ও সংযুক্তির প্রতিক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জাতিসঙ্ঘের প্রতি পদক্ষেপগুলোকে ‘অবৈধ’ অভিহিত করে প্রস্তাব পাস করার ও ইসরাইলকে প্রকল্পগুলো বাতিল করার আহ্বান জানায়। সে সময় জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে বলা হয়- ‘ইসরাইলের গৃহীত সব আইনি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ, ভূমি ও সম্পত্তির দখল, জেরুসালেমে আইনি অবস্থার পরিবর্তন অবৈধ।’ জেরুসালেমের ঐতিহাসিক অবস্থার পরিবর্তন সাধন করা ধর্মীয় ও প্রতœতাত্ত্বিক অপরাধ। কেন না, এটি হাজার হাজার নবী-রাসূলের শেষ অবস্থান এবং মুসলমান, ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের পবিত্র নগরী। রয়েছে সবার ধর্মীয় অধিকার। তাই এককভাবে এই শহরের অবস্থার কোনো পরিবর্তন করার অধিকার ইহুদিদের নেই। ফিলিস্তিনি ভূখ-ের দখলদারিত্বের অবসান ঘটাতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে কখনোই কোনো বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এ ধরনের দুর্বল প্রতিক্রিয়া ও আরব বিশ্বের নিষ্ক্রিয়তা ইসরাইলি পার্লামেন্টকে ১৯৮০ সালের ২৯ জুলাই দখলকৃত পূর্ব জেরুসালেম এবং ১৯৮১ সালে দখলকৃত গোলান হাইটস সংযুক্ত করতে উৎসাহিত করেছিল। জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ গোলান হাইটসের সংযুক্তিকরণের নিন্দা জানিয়েছে, কিন্তু ইসরাইলকে এই পদক্ষেপ বাতিল করার জন্য চাপ দেয়ার মতো কিছুই করেনি। এটিও একটি কূটনৈতিক ভ-ামি। সবসময়ই দেখা গেছে, এ ধরনের কোনো নিন্দাবাদ বা নিষেধাজ্ঞার পরপর ইসরাইল আবারো একই অপরাধ করছে। সাংবাদিকরা বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর বন্ধ দরজার পেছনে ‘হাসি ও সম্মতি’ কাজ করে চলেছে এবং সংযুক্তিতে সমর্থন দিয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ২০১৮ সালে সিরিয়া ও ফিলিস্তিনের জমি ইসরাইলের অধিগ্রহণের জন্য কুখ্যাত হয়ে আছে। তিনি যথাযথভাবে তেলআবিব থেকে মার্কিন দূতাবাসকে ‘ইসরাইলের শাশ্বত ও ঐক্যবদ্ধ রাজধানী’ জেরুসালেমে স্থানান্তরিত করেছিলেন। এই প্রক্রিয়াটিতে আগের সব প্রেসিডেন্ট অসম্মতি জানান এ জন্য যে, মুসলিম বিশ্বের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক বিষাক্ত হয়ে উঠবে। ট্রাম্প কিছুরই তোয়াক্কা না করে রাজধানী বানান। কিন্তু ট্রাম্পের চালের পর দেখা গেল, আরব বিশ্বের কিছু বড় দেশ বরং ইসরাইলের ‘সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ-এর’ মধ্যে উন্নয়ন ও শান্তি খুঁজে পাচ্ছে।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দখলকৃত পশ্চিম তীর ও জর্দান উপত্যকা সংযুক্ত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন, তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সতর্ক করেছিল যে, এই ধরনের পদক্ষেপ সহিংসতা উসকে দেবে।
অতি সম্প্রতি ১৫টি ইউরোপীয় দেশ ইসরাইলকে পশ্চিম তীরে আরো অবৈধ বসতি স্থাপনের কাজ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। উদ্বেগ প্রকাশ করে তারা বলেছে- ‘নতুন হাউজিং ইউনিটগুলো দুই-রাষ্ট্র সমাধানের পথে অতিরিক্ত বাধা তৈরি করবে।’
পূর্ব জেরুসালেমসহ পশ্চিম তীরকে আন্তর্জাতিক আইনে ‘দখলকৃত অঞ্চল’ হিসেবে দেখা হয়। ফলে সেখানকার সব ইহুদি বসতি অবৈধ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেশির ভাগের মতো, ইইউ ১৯৬৭ সাল থেকে দখল করা অঞ্চলগুলোর ওপর ইসরাইলের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেয়নি। ২০০১ সাল থেকে, ইইউ বারবার ইসরাইলকে সব বসতি স্থাপন বন্ধ করতে ও বিদ্যমান বসতিগুলো ভেঙে ফেলার আহ্বান জানিয়েছে। ইইউ ইসরাইলের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। তারা ঘোষণা দেয়, ইসরাইলি প্রচেষ্টাকে নিরুৎসাহিত করার জন্য কূটনৈতিকভাবে অগ্রসর হবে; কিন্তু আজ পর্যন্ত সেরকম কিছুই দেখা যায়নি। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন কিয়েভ সফর করেছেন, আবার কিছু দিন আগে ইসরাইলও সফর করেছেন। ইসরাইলে তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদি জনগণকে বলির পাঁঠা করার বহু বছর ধরে চলে আসা হুমকিকে আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে দেখছি। আমি জানি, ইসরাইল ইউক্রেনকে টন টন মানবিক সহায়তা ও একটি ফিল্ড হাসপাতাল দিয়ে সহায়তা করেছে এবং আপনি হাজার হাজার ইউক্রেনীয় শরণার্থীকে আপনার ভূমিতে স্বাগত জানিয়েছেন। রাশিয়ানরা একটি গণতান্ত্রিক ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ‘ফবহধুরভরপধঃরড়হ’-এর ঘৃণ্য কার্যক্রম চালাচ্ছে।’ কোনো দেশ কি ইসরাইলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, কিংবা কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে? বরং পশ্চিমারা বর্ণবাদী রাষ্ট্রকে নিঃশর্ত কূটনৈতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমা অনেক রাষ্ট্রে ইসরাইলের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ বয়কট, বিভাজন, নিষেধাজ্ঞা, আন্দোলন বা বিক্ষোভ অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।
অন্য দিকে, রাশিয়া যেসব অঞ্চল সংযুক্ত করেছে তারা রাশিয়ান ভাষায়ই কথা বলে। রাশিয়া গণভোটেরও ব্যবস্থা করেছে। রাশিয়াপন্থী নাগরিকরা সংযুক্তির ও গণভোটের বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। আর ফিলিস্তিনে তার উল্টোটি। আদিবাসী ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর জমি দখল করা হয়েছে, বাড়িঘর ধ্বংস করা হয়েছে, বাসস্থানের অনুমতি প্রত্যাহার করে তাদের হত্যা করা হয়েছে। সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে উচ্ছেদ করা হয়েছে, প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। জাতিসঙ্ঘের সব সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে একা ইসরাইল কখনোই ঘোষণা করেনি যে, তার সীমানা কোথায় অবস্থিত ও কতটুকু; বরং ইসরাইলি গোয়েন্দাদের জন্য তৈরি প্রটোকল বইয়ে ভবিষ্যৎ ইসরাইলের যে মানচিত্র রয়েছে তার মধ্যে মক্কা-মদিনা ব্যতীত সৌদি আরবের অনেক এলাকাও অন্তর্ভুক্ত করে দেখানো হয়েছে। সে ম্যাপে মূল জর্দান, সিনাইসহ মিসরের অনেক এলাকাও রয়েছে; রয়েছে ইরান ও আমিরাতের বড় অংশ। বইটির শুরুতে বলা আছে- ইহুদিরাই সৃষ্টিকর্তার মনোনীত জাতিগোষ্ঠী, তাই তারাই এই বিশ্বকে শাসন করবে। মুসলিম বিশ্বকে তারাই নেতৃত্ব দেবে।
ইসরাইল চলতি মাসের শুরুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে একটি সাংস্কৃতিক চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে। অধিকৃত পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুসালেম ও গোলান হাইটসে নির্মিত অবৈধ বসতির শিল্পীদের বাদ দেয়ার প্রতিবাদে ইসরাইল ক্ষিপ্ত হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সৃজনশীল ইউরোপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক প্রকল্প ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাখ লাখ ডলার অনুদান দেয়। ইইউ ‘ক্রিয়েটিভ ইউরোপ’-এর জন্য মোট দুই বিলিয়ন ডলার রেখেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় আকর্ষণীয় ইসরাইলি অনুষ্ঠান ছড়িয়ে দেয়া হয়, যার অনেকগুলো ইসলামী সংস্কৃতির সাথে সঙ্ঘাতপূর্ণ।
ইসরাইলি ওয়েবসাইট ‘ওয়ালাহ’র প্রতিবেদনে দেখা যায়, ইইউতে নিযুক্ত ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত সরকারের কাছে গোপন বার্তায় চুক্তিটি প্রত্যাখ্যান না করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কেননা, প্রত্যাখ্যান করা হলে ইসরাইলের আর্থিক ক্ষতি হবে।
আইরিশ আইন প্রণেতা রিচার্ড বয়েড ব্যারেট আইরিশ সরকারের সমালোচনা করেছেন। তিনি ইসরাইলের দখলদারিত্বের সাথে রাশিয়ার আগ্রাসনের তুলনা করেছেন। তার ভাষায়- ‘পুতিনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য পাঁচ দিন সময় লেগেছিল; কিন্তু ফিলিস্তিনিদের ওপর ৭০ বছর ধরে নিপীড়নের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি।’ দ্বৈতমান অনুসরণের জন্যও তিনি সরকার ও বিশ্বসভার সমালোচনা করেন।
এই বাম আইনপ্রণেতা সরকারকে উদ্দেশ করে আরো বলেন, ‘ভ্লাদিমির পুতিনের মানবতাবিরোধী অপরাধের বর্ণনা দিতে শক্তিশালী রূঢ় ভাষা ব্যবহার করতে পেরেছেন; কিন্তু ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরাইলি আচরণের বর্ণনা দেয়ার ক্ষেত্রে একই ধরনের ভাষা ব্যবহার করেননি।’ সংসদে তিনি বলেন, ‘বর্ণবাদ’ শব্দটি পর্যন্ত উচ্চারণ করা হয়নি। বয়েড ব্যারেট তার সহকর্মী এমপিদের স্মরণ করিয়ে দেন যে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বর্ণবাদসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে। বর্ণবাদী ব্যবস্থার জন্য পুতিনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা শুরু করা হয়েছে অথচ আরো জঘন্য বর্ণবাদী আচরণের জন্য ইসরাইলের বিরুদ্ধে কিছু করা হয়নি। জেরুসালেমের অবৈধ সংযুক্তিকরণের পর ইসরাইল ‘শহরের ফিলিস্তিনি অধিবাসীদের অবাঞ্ছিত অভিবাসী হিসেবে আচরণ করেছে এবং তাদের এলাকা থেকে বিতাড়িত করার জন্য পদ্ধতিগতভাবে কাজ করেছে। পূর্ব জেরুসালেমে রয়েছে অসংখ্য মুসলমানের বসতি। এখানেই ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিনি রাজধানী হওয়ার কথা, অথচ এখন মুসলমানরা সেখানে অবাঞ্ছিত।
যাই হোক, ইসরাইলের বিরুদ্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি এবং ফিলিস্তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের ইসরাইলি উপনিবেশ থেকে মুক্ত করতে সহায়তা করার জন্য লাখ লাখ ডলার এবং অস্ত্র ঢালা হয়নি যা এখন ইউক্রেনে হচ্ছে। এটি কি সাংঘর্ষিক নয় যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সেই রাষ্ট্রকে সমর্থন করছে, অর্থায়ন করছে ও সশস্ত্র করছে, যারা প্রতিদিন আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে চলেছে? যখন ভুক্তভোগীরা তাদের ভূমির দখলদারিত্ব ও উপনিবেশ স্থাপনের বিরুদ্ধে বৈধ প্রতিরোধ গড়ে তোলে, তখন ‘একই লোক’ তাদের সন্ত্রাসীর লেবেল লাগিয়ে দিচ্ছে, তারাই ঘোষণা করছে যে, রাশিয়া আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে? এ জন্যই পুতিন বলেছেন, এ ধরনের বিষয়ে পাশ্চাত্যের নৈতিক উচ্চ ভিত্তি নেই এবং অবশ্যই গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলার কোনো নৈতিক অধিকারও নেই। লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব ও গ্রন্থকার