আইজিপি পদক প্রাপ্ত রংপুর জেলার কোতয়ালী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, মাদক, জুয়া, বাল্য বিয়ে ঠেকিয়ে দেয়াসহ বিট পুলিশ এবং কমিউনিটি পুলিশিংকে কার্যকার করায় সব মহলে প্রশংসায় ভাসছেন। তার চেষ্ঠায় পুলিশি ভয় জনগনের কাছ থেকে উঠে গেছে। যোগদানের ১ বছর ৯ মাসের মধ্যে জেলার সেরা থানার স্বীকৃতি পেয়েছে কোতয়ালী সদর থানা। তিনি জনবান্ধব এবং জনগণের বন্ধু হিসেবে পুলিশকে উপস্থাপন করতে পেরেছেন। এ কারণে গভীর রাত পর্যন্ত জনগণ কোতয়ালী সদর থানায় এসে সেবা নিতে পারছেন। এছাড়া নারী নির্যাতন সংক্রান্ত মামলার সমাধান, চুরি ডাকাতি, ছিনতাই প্রতিরোধ, তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে মিথ্যা মামলা না নেয়া, স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্য নিরসনে সমঝোতার বৈঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধি হেল্পডেক্স ২৪ ঘন্টা চালু রাখা, ক্লু-লেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন, প্রতিদিন সাজা প্রাপ্ত ও বিভিন্ন মামলার আসামি গ্রেফতার ইত্যাদি কাজ তাকে প্রসংশনীয় করে তুলেছে। এটিকে ভালো চোখে দেখছেন নতুন প্রজন্মের নেটিজেন ও সাধারণ জনগণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে নেটিজেনরা আনন্দ অভিব্যক্তি প্রকাশ করছেন। জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর মোস্তাফিজার রহমান চারটি উপজেলা নিয়ে গঠিত কোতয়ালী সদর থানায় দ্বিতীয় ওসি হিসেবে যোগদান করার পর থেকে আইনশৃঙ্খলায় ফিরে এসেছে নতুন ধারায়। তার সকল কর্মকান্ড জনগণ নির্ভর হয়ে উঠে। চারটি ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে বিট পুলিশের আয়োজনে উঠান বৈঠকে নিজে উপস্থিত থেকে জনগণের মধ্যে পুলিশ ভীতি দূর এবং থানায় সেবার দ্বার সবার জন্য উম্মুক্ত এটি নিশ্চিত করার জন্য বক্তব্য প্রদান করে ব্যাপক আলোচনায় উঠে আসেন তিনি। স্থানীয় জনগণ বলছেন, এরকম ওসি আমরা আগে দেখিনি। পুলিশ হলেও ওসি সাহেব জনগণ ছাড়া কিছু বুঝেন না। তার কাছে জনগণের সেবাই সব। জনগণের সহযোগিতা ছাড়া পুলিশ বাহিনীর পক্ষে অপরাধ দমন করা সম্ভব নয়। এই ভাবনা থেকে তিনি হয়তো পুলিশকে জনবান্ধব করে তুলতে পেরেছেন। কোতয়ালী সদর থানার এসআই আনিছুর রহমান বলেন, নব গঠিত এই থানায় অবকাঠামো অভাবে নানা কষ্ট স্বীকার করতে হয়েছিল। আমাদের ওসি মোস্তাফিজার রহমান স্যার যোগদানের পর কনস্টেবলদের জন্য আধুৃনিক সুবিধাসহ ব্যারাক নির্মাণ, ডাইনিং, কিচেন ও বাথরুম স্থাপন, এসআইদের জন্য আলাদা আলাদা বসার স্থান এবং ওসি স্যারের নিজের রুম তৈরী করেছেন। ওসি স্যার পুলিশের একজন কর্মকর্তা হিসেবে সত্যিই অনন্য চিন্তার মানুষ। তিনি যে থানায় গেছেন সেখানেই জনবান্ধব পুলিশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। কমিউনিটি পুলিশিং কোতয়ালী সদর থানার সভাপতি ইকবাল হোসেন জানান, পুলিশের বিরুদ্ধে বেশী অভিযোগ শোনা যায়, নানাভাবে হয়রানি, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো, টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। যা পুলিশের ইমেজ নষ্ট করছে। কিন্তু পলিশের ইমেজ রক্ষায় কোতয়ালী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজার রহমানের অবদান অবিস্মরনীয়। তিনি পেশাগত দায়িত্ব পালনের সাথে সালিশের মাধ্যমে অনেক মামলার নিস্পত্তি করেছেন। স্বামী- স্ত্রীর বিরোধ মিটিয়ে সংসারে ফেরত পাঠিয়েছেন। জনগণ কোর্ট-কাচারীতে অর্থ ক্ষয় থেকে বেচে গেছেন। এ কারণে পুলিশ সম্মন্ধে ধারণা পাল্টে যাবার গল্প মামলা থেকে নিস্কৃতি পাওয়া নাগরিকরাই তৈরী করে থাকে। কমিউনিটি পুলিশিং কোতয়ালী সদর থানার সাধারণ সম্পাদক বাদশা আলমগীর জানান, পুলিশের দায়িত্ব রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। কিন্তু এখন সামাজিক, রাজনীতিক, পারিবারিক, অর্থনীতিক সব ক্ষেত্রের দায়িত্বটি পালন করতে হয় তাদের। স্বামী-স্ত্রীর ঘরোয়া সমস্যা চলে আসে পুলিশের কাছে। কোতয়ালী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজার রহমানের জনবান্ধব পুলিশ অফিসার হয়ে উঠার পিছনে তাঁর কিছু ভালো উদ্যোগ ছিল। তিনি জনগণের সেবার কাজটি সবার আগে করতেন। ইমেজ তৈরী করে মানুষের মনে গভীর ভাবে বসে যাওয়ার মতো কঠিন কোন কাজ নেই। তাও আবার নানা ভাবে সমালোচিত পুলিশ বাহিনীতে থেকে। কোতয়ালী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান নিজের উন্নত চিন্তার কারিশমা, সর্বোচ্চ মেধা, আন্তরিকতা, নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন এবং পেশাদারিত্বের সাথে নৈতিকতার যুগলবন্দি ঘটাতে পেরেছিলেন। এ কারণে জনগণ, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিক ব্যক্তি, আইনজীবি, ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা, সরকারী কর্মকর্তা, সাংবাদিক সবার কাছে তিনি প্রসংশার পাত্র হয়ে উঠেছিলেন। সূত্রমতে, কোতয়ালী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স এবং এম এ পাশ করার পর ১৯৯৫ সালে এসআই হিসেবে পুলিশ বাহীনিতে যোগদান করেন। পরে সিআইইউ হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে ডিএমপিতে দায়িত্ব পালন করেন। এর পর ২০১০ সালে ওসি হিসেবে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানা, গাইবান্ধা জেলার সদর, সাঘাটা, ঠাকুর গাঁ জেলার বালিয়াডাঙ্গী, কুড়িগ্রামের উলিপুর, রংপুরের বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ থানায় দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালে মানবিক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে পুলিশের সর্বোচ্চ পুরুস্কার আইজিপি পদক প্রদান করা হয়।