শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫১ অপরাহ্ন

রানী এলিজাবেথ : কিছু কথা

মীযানুল করীম
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২২

রানী এলিজাবেথ মারা গেছেন বেশ ক’দিন হলো। এখনো তাকে নিয়ে লেখালেখি শেষ হয়নি। তবে আমাদের বাংলাদেশেও ঢাকা নগরীর সাথে তার সম্পর্ক নিয়ে তেমন লেখা হয়নি। এই রাজধানী শহরের উন্নয়নের লক্ষ্য যা হোক, এ উপলক্ষ রানীর প্রথম বাংলাদেশে আগমন।
প্রথমত, রমনা পার্কের পাকা উঁচু চত্বরের কথা ধরা যাক। এটি রানী এলিজাবেথের জন্য তৈরি করা মঞ্চ। তাকে সেখানে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছিল। তখন পাকিস্তানি আমল ও সম্ভবত জাঁদরেল শাসক স্বঘোষিত ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন। আমার এক সহপাঠী বলত, আইয়ুব খান নাকি রানীর হাত ছাড়তে চাইতেন না। সত্য কি মিথ্যা জানি না। রানী কিন্তু লম্বা দস্তানা পরা থাকতেন অনুষ্ঠানে। তিনি সৌদি আরবে মক্কা-মদিনার দেশে গেলেও সেখানকার ইসলামী নিয়ম-কানুন লঙ্ঘন করেননি। রানীর এ দেশে আগমন উপলক্ষে ফার্মগেটে প্রধান রাস্তা সোজা করা হয়েছিল ’৬১ সালেই। ফলে আজকের ভিআইপি রোড জন্ম নেয়। এটি ক’জন জানেন?
রানী এলিজাবেথের পর যিনি দীর্ঘতম কালের রাজা বা রানী, সেই ব্রুনাইয়ের সুলতান এবার বাংলাদেশে এসে সফর করে গেছেন। তার নাম হাজী হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দিন ওয়াদ্দৌলাহ। বয়স এখন ৭৬ বছর। ক্ষমতায় আছেন ১৯৭০ সাল থেকে। রানী এলিজাবেথ ১৯৫২ সালে ক্ষমতা পেয়ে পরের বছর অভিষিক্ত হন। তিনি ছিলেন বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম ধনী মহিলা। যাই হোক, তার অভিষেক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ (তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান) থেকে যে প্রতিনিধিদল গিয়েছিল, তাদের মধ্যে আমার এক আত্মীয়ও (মায়ের সম্পর্কিত চাচা) ছিলেন। নাম তার খান সাহেব শাহাবুদ্দীন মোহাম্মদ মাহমুদ। তিনি ‘খানবাহাদুর’ হয়েছিলেন পরে। উনি রানীর অভিষেকে যোগ দিয়ে ফেরার পথে তুরস্ক হয়ে আসেন। এসে বই লিখেছেন সফরনামা হিসেবে। তাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে। এলিজাবেথ আসল নাম হলে ডাক নাম হয় সাধারণত লিজ, লিজা, লিসপেথ ইত্যাদি। ব্রিটিশ রানীর ডাকনাম জানা যায়নি। তিনি ১৯৮৪ সালেও আমাদের বাংলাদেশে এসেছেন। তখনো এ দেশের ক্ষমতায় জেনারেল আইয়ুবের মতো আরেক স্বৈরশাসক-এরশাদ। তখন রানী ঢাকার কাছে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার বৈরাগীরচালা গ্রামে আদর্শ কৃষকের বাড়ি দেখেছেন। তবে এসব কিছু সাজানো ব্যাপার। অল্প কয়েকদিন পরই বৈরাগীরচালার রিক্ত-নিঃস্ব ‘বৈরাগী’ দশার কথা পত্রিকায় লিখেছিলাম।
এলিজাবেথ সম্পর্কে একটি কথা চালু আছে। তা হলো- তিনি গাছে উঠেছেন যুবরাজ্ঞীরূপে, আর নেমেছেন রানী হিসেবে। কারণ ১৯৫২ সালে পূর্ব এশিয়া সফরের পথে তিনি ব্রিটিশ উপনিবেশ আফ্রিকার কেনিয়াতে সফরে যান। সেখানে রানী হওয়ার খবরটি পান গাছে চড়ার সময়। রানী নামকরা খেলোয়াড়ও ছিলেন। মালিক ছিলেন অনেক ঘোড়ার যেগুলো রেসের কাজে ব্যবহৃত হতো। বিশাল ব্যবসায় ছিল তার। রানী এলিজাবেথের এক চাকর সম্পর্কে জানা যায়, রানী ব্রিটেনের বাকিংহাম প্যালেসে থাকাকালে এ দুর্গের নানা স্থানে খাবার রাখতেন এবং তা ঘুরে ঘুরে খেতেন। এটিই বিজ্ঞানসম্মত। এক চাকর এটি দেখে চুরি করে তার খাবার খেয়েছিল। সে ধরাও পড়ে যায়। তবে তার শাস্তি সম্পর্কে জানা যায়নি। রানী এলিজাবেথের পিতা ব্রিটিশ সম্রাট ষষ্ঠ জর্জ ও পিতামহ সম্রাট পঞ্চম জর্জ ধূমপায়ী ছিলেন বলে জানা যায়। অতি ধূমপানেই তাদের মৃত্যু ঘটে বলে কথিত আছে। অষ্টম এডওয়ার্ড ব্রিটিশ সিংহাসন ছেড়ে দিয়েছিলেন বংশবহির্ভূত প্রেমিকার জন্য। তিনি এলিজাবেথের জ্যাঠা। তার সিংহাসন পরিত্যাগের দরুন এলিজাবেথের পিতার সম্রাট হওয়া। সেই সূত্রে তিনি নিজে হলেন রানী। মায়ের নাম ‘রানী মাতা এলিজাবেথ’। স্বামী ফিলিপ কিন্তু কোনোদিন রাজা হননি। এখনকার রাজা চার্লস তার ও রানী এলিজাবেথের ছেলে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com