শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৯ অপরাহ্ন

বাড়তি অর্থ দাবি ঠিকাদারের

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০২২

পদ্মা সেতুর রেলপথের নকশা সংশোধন হলো

সমতলে স্থাপন করতে হয় রেলপথ। দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে ঢাকার রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত করতে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে তাই বিশেষ নকশায়। তবে সেতুতে রেলপথ টানতে গিয়ে দেখা যায়, বসানো রেলওয়ে স্ল্যাবগুলোর কোথাও কোথাও অসমতল। নকশার সঙ্গে বাস্তবতার মিল না থাকায় দেখা দেয় জটিলতা। বন্ধ করে দিতে হয় কাজ। প্রায় আড়াই মাস পর অবশেষে পদ্মা সেতুর ওপরে নির্মিতব্য রেলপথের নকশা সংশোধন করেছে প্রকল্পের ঠিকাদার চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি)। সংশোধনীতে বাড়ানো হয়েছে রেলপথের উচ্চতা, অসমতল অংশে মোটা করা হবে ঢালাইয়ের স্তর। তবে এক্ষেত্রে বাড়তি অর্থ দাবি করেছে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান।
রেল সংযোগ প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঠিকাদার নকশা সংশোধনের জন্য বাড়তি অর্থ দাবি করলেও এখনো কোনো প্রস্তাব দাখিল করেনি। প্রস্তাব পেলে সেটি যাচাই করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তাছাড়া নকশা সংশোধনের জন্য বাড়তি অর্থ প্রকল্পের থোক বরাদ্দ থেকেই মেটানো সম্ভব হবে। এজন্য প্রকল্পের মোট ব্যয়ে কোনো প্রভাব পড়বে না বলেও দাবি করছেন তারা।
এদিকে নকশা সংশোধন হওয়ায় দ্রুতই পদ্মা সেতুর ওপর রেলপথ বসানোর কাজ শুরু করতে চাইছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। শিগগিরই কাজ শুরু হলে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের মূল পদ্মা সেতু এবং দুই পাশে আরো ৫৩২ মিটার সংযোগে রেলপথ বসাতে সময় লাগতে পারে প্রায় ছয় মাস। সেতুর নিচে স্প্যানের ভেতরে রেলপথ বসানোর কাজ চলাকালে ওপরের সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচলে কোনো সমস্যা নেই বলেও জানিয়েছেন প্রকল্পের প্রকৌশলীরা।
পদ্মা সেতু ও পদ্মা সেতুর রেল সংযোগকাজ পৃথক দুটি প্রকল্পে বাস্তবায়ন হচ্ছে। মূল সেতুর কাজ করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। গত ২৬ জুন সেতুর সড়কপথে শুরু হয়েছে যানবাহন চলাচল। এখনো সৌন্দর্যবর্ধনসহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন কাজ চলমান। সেতুর স্প্যানের ভেতর দিয়ে রেলপথে সংযুক্ত হবে পদ্মার দুই পাড়। এজন্য বসানো হয়েছে ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাব। তার ওপর স্লিপার বসিয়ে কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে তৈরি করা হবে পাথরবিহীন রেলপথ। এ কাজ পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রকল্পটির মাধ্যমে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে প্রায় ১৭০ কিলোমিটার রেলপথ।
পদ্মা সেতুর ওপরে রেলপথ বসানোর কাজ শুরুর জন্য গত ১৭ জুন সেতু কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি পায় বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্নের পর ২০ আগস্ট সেতুর ওপর রেলপথ বসানোর কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তবে কাজ শুরুর আগে জরিপ করতে গিয়ে বাধে বিপত্তি। জরিপে উঠে আসে, সেতুতে বসানো রেলওয়ে স্ল্যাব কয়েকটি স্থানে অসমতল। কোথাও কোথাও স্ল্যাবের উচ্চতা ৪০-৬০ মিলিমিটার পর্যন্ত বেশি।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রেলওয়ে স্ল্যাবের উচ্চতা নিয়ে এ জটিলতা তৈরি হয়েছে মূলত সেতুর পিয়ারগুলোর ‘সেটলমেন্ট’ করার কারণে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তারা জানিয়েছেন, এ ধরনের অবকাঠামো তৈরির পর পিয়ারগুলো সাধারণত সামান্য ডেবে যায়। পদ্মা সেতুর পিয়ারেও এমন সেটলমেন্ট হয়েছে। তবে সব পিয়ারে সমানভাবে সেটলমেন্ট না হওয়ায় রেলওয়ে স্ল্যাবগুলো কোথাও কোথাও উঁচু-নিচু হয়েছে। ফলে এর ওপর দিয়ে রেলপথ বসালে সেটিও স্ল্যাবের মতোই উঁচু-নিচু হয়ে যেত। এতে ট্রেন চলাচল হয়ে উঠত ঝুঁকিপূর্ণ। এ ঝুঁকি এড়াতে নকশা সংশোধনের উদ্যোগ নেয় প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
সংশোধিত নকশায় কী ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে জানতে চাইলে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, সেতুর ওপরের রেলপথের উচ্চতা আগে আমরা এক রকম চিন্তা করেছিলাম। সে অনুযায়ী নকশা করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে কোনো কোনো জায়গায় উচ্চতায় একটু উঁচু-নিচু হয়ে যেত। নতুন নকশায় মূলত এটাই সমন্বয় করা হয়েছে। নিচু স্থানগুলোয় কংক্রিটের মোটা স্তর দিয়ে সমতল করে ফেলা হয়েছে।
নকশা সংশোধনের কারণে প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঠিকাদার নকশা সংশোধনের জন্য বাড়তি অর্থ চেয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো প্রস্তাব দেয়নি। অবশ্য সংশোধনের কারণে ব্যয় কিছুটা বাড়বে, এটা ঠিক। এটার যৌক্তিক কারণও আছে। তবে এটা খুবই সামান্য। পুরো প্রকল্পের ওপর এর কোনো প্রভাব পড়বে না। থোক বরাদ্দের টাকা থেকেই এ ব্যয় মেটানো সম্ভব বলে আমরা আশাবাদী।
পদ্মা সেতুর রেলপথের নকশা সংশোধন করা হলেও সেটি নিয়ে এখনো দুশ্চিন্তার কথাই বলছেন অবকাঠামো বিশেষজ্ঞরা। বিষয়টি সম্পর্কে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, রেলপথের জন্য সমান উচ্চতার জায়গা প্রয়োজন। রেলপথের তলটা হতে হয় নিখুঁত। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার দুই মাসের মাথায় পিয়ার সেটলমেন্ট হয়েছে। এখন সেতুর ওপর যত যানবাহন চলবে, তত কম্পন হবে। ভারী যানবাহন ও ট্রেন চলাচল শুরু হলে কম্পনের মাত্রা বেড়ে পিয়ার সেটলমেন্ট আরো বেড়ে যেতে পারে।
পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন অবশ্য বলছেন, ভবিষ্যতে আরো পিয়ার সেটলমেন্ট হলেও রেলপথের কোনো সমস্যা হবে না। কেননা সেতু কর্তৃপক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়েছে, ভবিষ্যতে যদি সামান্য সেটলমেন্ট হয়, তাহলে সেতুর বিয়ারিংয়ের মাধ্যমে সেটি সমন্বয় করা সম্ভব।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com