বৃক্ষকে পরিবেশের বন্ধু বলা হলেও কোনো কোনো বৃক্ষের উপকার থেকে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হলে তা ক্ষতিকারক হিসেবেই ধরা হয়। তেমনই দুই প্রজাতির বৃক্ষ ইউক্যালিপটাস-অ্যাকাশিয়া দেখা যায় আবাসিক খ্যাত সবুজের সমারোহ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন জলবাযু পরিবর্তনে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তারকারী এবং দীর্ঘমেয়াদে জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি ইউক্যালিপটাস অধিক পানি শোষণ করে মাটির উর্বরতা নষ্ট করে এবং অ্যাকাশিয়া বৃক্ষে ফুসফুসের রোগসহ বাড়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক পরিপক্ব অ্যাকাশিয়া বৃক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে ব্যাচেলর কোয়ার্টারের সামনে রয়েছে বারোটি, উপাচার্যের বাসভবনের মাঠের পাশে ছয়টি, শহিদ সালাম-বরকত হলের বাগানে বারোটি, কামাল উদ্দিন হলের চারপাশে ষোলোটি, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের পাশে দুটি, ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে চারটি, শারীরিক শিক্ষা বিভাগের সামনে একটি, আল বেরুনী হলের সামনে তিনটি। মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে ছয়টি ইউক্যালিপটাস গাছ রয়েছে। অসংখ্য অ্যাকাশিয়া গাছ বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। জানা যায়, ইউক্যালিপটাসের আদি বাস অস্ট্রেলিয়ায়। সরকারের বন বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশে ১৯৮০ সালের মাঝামাঝি সময়ে ইউক্যালিপটাস, অ্যাকাশিয়া ইত্যাদি বিদেশি বৃক্ষ জ্বালানি এবং আসবাবপত্রের জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়েছে। তবে ২০০৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এক সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই ভিনদেশি গাছের চারা রোপণ, বিপণন ও উৎপাদন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের মতে, ইউক্যালিপটাস এবং অ্যাকাশিয়া গাছকে এক্সোটিজ স্পেসিস বলা হয়। ইউক্যালিপটাস গাছের আসলে অনেকটা অ্যাগ্রেসিভ ন্যাচার আছে। দ্রুত বর্ধনশীল ইউক্যালিপটাস মাটির নিচের মাইক্রো এনভায়রনমেন্টের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। গাছের প্রস্বেদনের মাত্রা ০.৫ থেকে ০.৬ মিলিমিটার এবং এটি জিরোপেট্রিক ন্যাচারের গাছ বলে প্রতিদিন ৫০-৬০ লিটার এবং এক কেজি বায়োমাস তৈরিতে ৭৮৫ লিটার পানি শোষণ করে। সে হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা ইউক্যালিপটাস গাছগুলো বছরে প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার লিটার ভূ-গর্ভস্থ পানি শোষণ করে। ফলে পানিশূন্যতার কারণে মাটি অনুর্বর হয়ে এর আশপাশের অন্যান্য গাছের বৃদ্ধি ও উৎপাদন হ্রাস পায়। বাংলাদেশের জলবায়ু, মাটি ও কৃষিজমির জন্য গাছটির উপকারের চেয়ে ক্ষতির দিকটি বেশি প্রকট। এ গাছের কার্বন-ডাই অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ অতিরিক্ত হওয়ায় পরিবেশে তাপমাত্রা বাড়ে। ইউক্যালিপটাসের পাতা সহজে পচে না এবং এর পাতার টঙ্কি কেমিক্যাল মাটিতে থাকা নাইট্রোজেন পরমাণু ভেঙে দিয়ে ছোট ছোট উদ্ভিদের খাদ্য তৈরির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করে। এতে মাটির পুষ্টি-প্রবাহ হ্রাস পায়। অন্যদিকে অ্যাকাশিয়া গাছে শীতকালে ফুলের রেণু পোলেন ক্যারি করে যা বাতাসে ভেসে বেড়ায় এবং তা নিশ্বাসের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করলে ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা, অ্যালাজি, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন চর্মরোগ সৃষ্টি করে। বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের লোকাল যে গাছগুলো ছিল সে গাছগুলোকে কিন্তু রিপ্লেস করেছে এসব প্রজাতি। যেহেতু গাছগুলো কোনো না কোনো ভাবে লাগানো হয়েছে তাই এ গাছগুলো কেটে নতুন গাছ লাগাতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে আমাদের যত দেশীয় প্রজাতির গাছ আছে যেমন ভেষজ, বনজ, ফলদ সেই গাছগুলো দ্বারা আমরা ঐ গাছগুলোর জায়গায় রিপ্লেস করতে পারি। লেখক: শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়