গত ২৪ মার্চ রাতে রাজধানীর শাহজাদপুর আমতলা নাভানা টাওয়ারের সামনে সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিতে নিহত হন আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু। এসময় জ্যামের কারণে তার গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা বদরুন্নেসা কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া আফরান প্রীতিও সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। সেই ঘটনার সাত মাসের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে সন্তানকে হারিয়ে কেমন আছেন প্রীতির মা-বাবা, কী ভাবছেন পরিবারের সদস্যরা- তা জানার চেষ্টা করেছে বাংলা ট্রিবিউন। গত শনিবার (৫ নভেম্বর) বিকালে প্রীতির বাবা জামাল উদ্দিনের সঙ্গে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউনের। তিনি বলেন, ‘সন্তান বাবা-মাকে ভুলে থাকতে পারে। কিন্তু বাবা-মা সেটা পারে না। প্রীতি মারা যাওয়ার সাত মাস পার হয়ে গেছে। কিন্তু এখনও প্রতিদিনই তার জন্য চোখের পানি ঝরছে। কিছুদিন পরপর মেয়ের কবর জিয়ারত করি।’ জামাল উদ্দিন জানান, প্রীতির একটি পোষা বিড়াল আছে। প্রীতি মারা যাওয়ার পরও বিড়ালটা পরিবারের সঙ্গেই থাকছে। এ বিড়ালটা প্রীতির স্মৃতি হিসেবে সারাদিন ঘুরে বেড়াচ্ছে চোখের সামনে, কাঁদাচ্ছে পরিবারের সদস্যদের। প্রীতির বাবা বলেন, ‘প্রতি মাসে হাজার টাকা খরচ হয় বিড়ালের পেছনে। কিন্তু বিড়ালটা প্রীতির আম্মুর কাছে থাকে সারা দিন। সব সময় প্রীতির কথা মনে করিয়ে দেয়। বিড়ালটা দেখলেই মেয়ের কথা মনে পড়ে।’
তিনি বলেন, ‘আমার এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে প্রীতি বড়। আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে স্বল্প বেতনে চাকরি করি। পরিবার নিয়ে রাজধানীর শান্তিনগরে ভাড়া বাসায় থাকি। এই বেতন দিয়ে ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হতো। কিন্তু প্রীতি পরিবারের হাল ধরতে পড়াশোনার পাশাপাশি শোরুমে চাকরি করে নিজের খরচ চালাতো। এ ছাড়া ছোট ভাইয়ের পড়াশোনার খরচও চালাতো। এতে দেখা যেত ভালো একটা সাপোর্ট পেতাম।’ প্রীতি পরিবারের হাল ধরার স্বপ্ন নিয়ে চলে গেলেন। মেয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা করেন পরিবার। পারিবারিক অসচ্ছলতা আর ভয় থেকে মামলা করেননি বলে জানান জামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে তো চলে গেছে, তাকে তো আর ফেরত পাবো না। এসব চিন্তা করে মামলায় জড়াইনি। আমি হত্যাকান্ডের পর থেকেই আর্থিক সহায়তা চেয়ে আসছিলাম, সেটা পেয়েছি। মামলা করলে সেটা হয়তো পেতাম না।’
আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই সময় ২০ লাখ টাকার স য়পত্র দিয়েছিলেন। সেখান থেকে প্রতি তিন মাস পরপর একটা লভ্যাংশ পাই। এ ছাড়া আরও কয়েকজনের কাছ থেকে প্রায় দুই লাখ ৯০ হাজার টাকা পেয়েছি। গত সপ্তাহে বদরুন্নেসা কলেজে প্রীতির জন্য দোয়া মাহফিল করা হয়। সেখানে কলেজ থেকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।’ জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকা-ের বিচার হলে আমার মেয়ে প্রীতি হত্যার বিচার পেয়ে যাবো। ওই ঘটনা তো টিপুকে নিয়ে। দুর্ভাগ্যক্রমে ওই মর্মান্তিক ঘটনা আমার মেয়ের সঙ্গে ঘটলো।’ জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকা-ের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ওই হত্যাকা-ে গ্রেফতার ২৪ আসামির মধ্যে তিন জন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। এ ছাড়া হত্যাকা-ে ব্যবহৃত অস্ত্র ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন খুব অল্প সময়ের মধ্যে জমা দেওয়া হবে।- বাংলা ট্রিবিউন