সুস্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা যে-কোনো উন্নয়নেরই প্রাথমিক শর্ত। এর জন্যে চাই এক ধরনের শৃঙ্খলা ও সুন্দর পরিবেশ। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমাদের এগোতে হবে। উন্নত দেশ থেকে যখন দেশে ফিরে আসি তখন আমাদের চোখে-নাকে-মুখে আঘাত লাগে। জঞ্জাল-আবর্জনায় ভরে যাচ্ছে আমাদের সুন্দর এই দেশ, বিনষ্ট হচ্ছে আমাদের প্রাকৃতিক, পরিবেশ, সম্পদ ও সৌন্দর্য। রাস্তার দু’পাশে, গ্রামে ও শহরে নিক্ষেপিত হচ্ছে জঞ্জাল, প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ, ফাস্ট ফুডের প্যাকেট। লজ্জার কথা, তথাকথিত ‘শিক্ষিত’ নাগরিকও বাড়ির জঞ্জাল-প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগে মুড়ে ফেলে দিয়ে আসছে প্রতিবেশীসহ নানা জনের বাড়ির সামনে, চলার পথে।
আসলে ব্যক্তিগতভাবে আমরা যতটা পরিচ্ছন্ন, সমাজগতভাবে তার সিকিভাগও নই। জর্জ ট্রাভেলিয়ান ১৮৬৩ সালে ঠিকই বলেছিলেন, ‘আমাদের খাবার পরিবেশকে আরও খারাপ করতে মানুষের চেষ্টার অন্ত নেই।’ কথাটা সত্য নাহলে মাইকের কানফাটা আওয়াজ শোনা যেত না, আলোর দূষণ ঘটত না, পানের পিক আর কফ-কাশি-থুথুতে ভরে যেত না মানুষের আস্তানা। বনের জন্তু-জানোয়ার কথা বলতে পারলে মানুষের উদ্দেশ্যে অবশ্যই বলত, ‘তোরা সবচেয়ে নিকৃষ্ট জন্তু। অথচ আমরা নিজেদের প্রচার করি মানুষ ‘আশরাফ-উল-মুখলুকাত’, স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসাবে। উন্নয়নের প্রাথমিক শর্ত হিসেবে আমরা চাই সুস্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা। এর জন্য শুধু শৃঙ্খলাই আমাদের কাম্য নয়। মানুষের সমাজ ও সভ্যতা বহু শতাব্দীর সাধনার ধন। আদিম বর্বর আরণ্যক জীবন এবং আধুনিক উন্নত জীবনধারা-এই দুই দিগন্তের বিপুল ব্যবধান। এরই মধ্যে সুপ্ত রয়েছে সহস্র যুগের ক্রমোন্নয়ের এক ধারাবাহিক ইতিহাস, যা আমাদের বিস্মিত, বিক্ষুব্ধ করে। বর্বর যাযাবর জীবনের অবসানে মানুষ তার অন্তরের আকাক্সক্ষা ও হৃদয়ের ভালোবাসা দিয়ে রচনা করেছে গৃহ-জনপদ। সেইসঙ্গে সুখী জীবন ও শুভ বুদ্ধির প্রেরণায় সে গড়ে তুলেছে তার সমাজ। এই সমাজের বুকে দাঁড়িয়ে আসুন, আমরা সমবেত কন্ঠে আওয়াজ তুলি: খরাব ধহফ ষবঃ ষরাব ‘বাঁচো ও বাঁচতে দাও।’ আমাদের মধ্যেই রয়েছে সমাজের মর্মবাণী, উন্নত চেতনার উপলব্ধি, সমষ্টির প্রতি কর্তব্য পালনের মধ্যস্ততায় অধিকার, ভোগের যোগ্যতা অর্জনের প্রয়াস আমাদের পবিত্র উদ্দেশ্য, সর্বজনকে কল্যাণমন্ত্রে উদ্বোধিত করা-পরিবেশ দূষণ থেকে ব্যক্তি, সমাজ ও দেশকে রক্ষা করা। বাংলায় যাকে আমরা পরিবেশ বলি, ইংরেজিতে তাকেই বলা হয় ‘এনভায়রন্মেন্ট’। কিন্তু এই শব্দটির ইংরেজদের ধার করতে হয়েছে ফরাসিদের কাছ থেকে। ফরাসি অভিধানে একটি শব্দ আছে ‘এনভায়রনার’। এর অর্থ ‘নির্দিষ্ট পরিমন্ডলীকৃত এলাকা।’ বাংলায় এতগুলো শব্দ ব্যবহার করতে হয়নি। আশেপাশের চারদিক দিয়ে নির্দিষ্ট এলাকাকে আমরা আমাদের মাতৃভাষায় বলি পরিবেশ। সুস্থ পরিবেশ জীবনধারণের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যায়। পরিবেশ একাধিক উপাদান নিয়ে গঠিত হয় যেমন মাটি, পানি, বায়ু, সূর্যরশ্মি। এগুলোকেই আমরা বলি শক্তি, ইংরেজিতে এনার্জি। জৈব এবং অজৈব-সমস্ত উপাদান নিয়ে গঠিত হয়েছে পরিবেশ, যা জীবিত বস্তুসমূহের সৃষ্টির সহায়ক। পরিবেশের যে অজৈবিক উপাদান, তার মধ্যে রয়েছে ভূমন্ডল, পানিমন্ডল, বায়ুমন্ডল। এই উপাদানত্রয় কঠিন, তরল ও গ্যাসীয়। জীবনের সাথে যার যোগ, তাকেই বলি জৈবিক। যেমন মানবজাতি, প্রাণীকূল ও উদ্ভিদ। আর শক্তির প্রসঙ্গে আসে সৌরশক্তি, ভূতাপশক্তি, পানিবৈদ্যুতিক শক্তি, পারমাণবিক শক্তি। আমাদের পরিবেশে রয়েছে চারটি অংশ। যথা: ১) অ্যাটমোস্ফিয়ার, ২) হাইড্রোস্ফিয়ার, ৩) লিথোস্ফিয়ার, ৪) বায়োস্ফিয়ার। আমরা আমাদের মাতৃভাষা বাংলায় স্ফিয়ার-এর অনুবাদ করেছি ‘মন্ডল’-বায়ুমন্ডল, পানিমন্ডল, ভূস্তরীয় মন্ডল, জীবমন্ডল। প্রসঙ্গত বলে নিই, পারিভাষিক শব্দ ব্যবহারে আমরা আগের তুলনায় এখন অনেক সক্রিয় হয়েছি। কারণ, আমরা বেশ বুঝতে পেরেছি, যে ইংরেজি ভাষা আজ আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁেছ গেছে, সেই ভাষার ৮০ শতাংশ শব্দই পরিভাষা-সমৃদ্ধ। তাই আমরাও এখন পারিভাষিক শব্দ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে আমাদের মাতৃভাষাকে সমৃদ্ধ করতে চাই। বায়ুমন্ডলের প্রধান উপাদান নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন। লঘু উপাদান আর্গন, কার্বন ডাই-অক্সাইড। এ ছাড়াও আছে অন্যান্য নগণ্য পরিমাণের গ্যাস। যেমন-নিয়ন, হিলিয়াম, মিথেন, ওজোন, অ্যামোনিয়া, সালফার ডাইক্সাইড, হাইড্রোজেন। বলে নেওয়া ভালো ওজোন গ্যাস সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর বিকিরণ থেকে পার্থিব জীবনকে রক্ষাকবচের মতো বাঁচিয়ে রাখে।
কথাগুলো নিরস হলেও সাধারণ মানুষের পক্ষে এগুলো জেনে রাখা খুবই জরুরি। কারণ, মানুষের সাথে প্রকৃতির যে নিবিড় সম্পর্ক তা ক্রমশ বিষিয়ে তুলছে মানুষ। প্রাকৃতিক বস্তুনিচয়ের অবিরাম ক্ষয় বা নিঃশেষ মানুষ ও প্রকৃতির আন্তঃসম্পর্ককে ধ্বংস করে চলেছে। এর কুফল আমরা বারবার পেয়েছি এবং ভবিষ্যতেও পাব। বিশ্বকে আজ পরিবেশ অবক্ষয় এবং প্রদূষণের মতো বৃহৎ সমস্যার মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের প্রদূষণ, বনজসম্পদের দ্রুত ক্ষয়, দ্রুত হারে জনসংখ্যা বিস্ফোরণ, ঔদ্যোগীকরণের প্রসার, অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ণ, খনির কাজ, ভূমিক্ষয় ইত্যাদি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিবেশতন্ত্রের ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি করেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য মানুষের অনুসন্ধানই মূলত প্রাকৃতিক সম্পদ নির্দয়ভাবে ব্যবহারের জন্য দায়ী। এছাড়াও মানবজাতির বস্তুবাদী, লোভী এবং বিলাসি জীবনযাপনের মনোভাব প্রাকৃতিক সম্পদকে বাছবিচারহীনভাবে শোষণ করছে বা ধ্বংস করছে নির্দয়ভাবে। এই সমস্ত কার্যকলাপই প্রাণীকূলের অস্থিত্বের প্রতি হুমকির সৃষ্টি করছে।
এই ধ্বংসরোধে পরিবেশ রক্ষার জন্য গণসচেতনতা সৃষ্টি করাটা জরুরি। পরিবেশর সমস্যাসমূহের সুষ্ঠু সমাধান অসম্ভব, যদি জনসাধারণের সহযোগিতা পাওয়া না-যায়। বেশ ভালো লাগে, যখন দেখি বিভিন্ন সংগঠন বিশেষ বিশেষ দিনে বেছে নেয় ‘স্বচ্ছ সমাজ, স্বচ্ছ দেশ’ গড়ার লক্ষ্যে পথ পরিক্রমার জন্যে। এতবড় মিছিল। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনেও হয়নি। আবালবৃদ্ধবনিতা এই মিছিলে শামিল হয়ে পা ফেলেছিলেন সর্বজনকে কল্যাণমন্ত্রে উদ্বোধিত করার মহান উদ্দেশ্য নিয়ে, পরিবেশ দূষণ থেকে ব্যক্তি সমাজ ও দেশকে রক্ষা করার পবিত্র সংকল্প নিয়ে। মূল্যবোধ যে এখনও বিলীন হয়নি তার নজির রাখে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও সাহিত্য সংগঠন। আমাদের পরিবেশে যে অবাঞ্ছিত পরিবর্তন দ্রুতবেগে ঘটে চলেছে তার জন্যে আমরাই দায়ী। আমাদের অনেক কার্যকলাপ পরিবেশ-প্রদূষণ ঘটাচ্ছে। এর ফলে বাতাস-পানি, মাটির ভৌতিক, রাসায়নিক এবং জৈবিক গুণাগুণের অভাবনীয় পরিবর্তন ঘটে চলেছে এবং এটা অবশ্য ক্ষতিকারক পরিবর্তন।
বাংলায় ‘প্রদূষণ’ একটি পারিভাষিক শব্দ। ল্যাটিন পলিউশনেম (চড়ষষঁঃরড়হবস) শব্দটি ইংরেজিতে হয়েছে চড়ষষঁ-ঃরড়হ ল্যাটিন ভাষায় শব্দটি অপরিষ্কার বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। বাংলায় প্রদূষণ এসেছে চড়ষষঁ-ঃরড়হ শব্দ থেকে। বস্তুবিদ ওডাম পরিবেশ প্রদূষণের ভারী সুন্দর একটা সংজ্ঞা দিয়েছেন, ‘পানি-স্থল-অন্তরীক্ষের ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক বৈশিষ্ট্যের অবাঞ্ছিত পরিবর্তন, যা জীবন ধারণের পরিবেশ এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশকে বিঘিœত করে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনকে বিষময় করে তোলে তাকেই পরিবেশ প্রদূষণ বলা যেতে পারে।’
আমরা অত্যন্ত অবৈজ্ঞানিকভাবে আবর্জনার দ্বারা পরিবেশগত সমস্যার সৃষ্টি করে চলেছি। আবর্জনা ফেলার স্থানগুলো ক্রমশ দূষিত হয় এবং সেখানে রোগ জীবাণুর বাহক ইঁদুর, মশা, মাছি ইত্যাদি বংশবৃদ্ধি করে। আবর্জনা পচনের ফলে চারপাশের এলাকায় মিথেন গ্যাস নির্গত হয়। আবর্জনার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মাটিমিশ্রিত পানি ভূগর্ভের পানিতে মিশে যায় এবং তা দূষিত হয়। চিকিৎসালয়, নার্সিংহোম, পেপার মিল ও অন্যান্য কারখানার রাসায়নিক দ্রব্য পানিতে মিশ্রিত হয় এবং তা ভূগর্ভের পানিকে প্রদূষিত করে। আবর্জনা জমা করা স্থানের পাশে বসবাস করা মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি একেবারে অবধারিত। এর সাথেই এসেছে শিল্প প্রদূষণ। রাসায়নিক প্রকল্প, কাগজ কল, সুতা এবং কাপড়ের মিল, পেট্রোলিয়াম শোধানাগার, সংশ্লেষিক রাবার উৎপাদন প্রকল্প ইত্যাদির মতো উদ্যোগ থেকে ২০ শতাংশ বায়ু প্রদূষণ হয়। বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকারক এবং বিষাক্ত পদার্থের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে সিলিকোসিস, ভ্রƒণের বিকৃতি, পক্ষাঘাত, চামড়ার অ্যালার্জি, নিউমোকনিওসিস্ ইত্যাদি রোগে ভোগে। বস্ত্র উদ্যোগে শ্রমিকরা নিশ্বাসের সঙ্গে তুলার কণা গ্রহণ করে। আটা মিলে শ্রমিকরা ক্রমাগত গমের কণা, সিমেন্ট অ্যাসবেস্টস তৈরির কারখানায় সিমেন্ট-সিলিকার ধূলিকণা নিশ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করে থাকে। আরও উদ্বেগের কথা, বিশ্বের প্রত্যেক স্থান জলবায়ুর অস্বাভাবিক পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে। এই অসম পরিবর্তনরে ফলে প্রভাবিত হচ্ছে বৃষ্টি, বন্যা, খরা, সাইক্লোন, নদীভাঙন, লবণাক্ততা। এর জন্য মানবসভ্যতা কম দায়ী নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের এইসব ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে মানুষ, প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের উপর। নদীগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। নদীগর্ভের চর এলাকা দিন দিন বাড়ছে। বেশ কিছু নদী ইতোমধ্যে হারিয়ে গেছে এবং পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলো মরুভূমিতে রূপান্তরিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করা যদিও কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ তবুও আমরা কিছু পদক্ষেপ অবশ্যই নিতে পারি। শৌচাগার, বর্জ্য পদার্থের নালা, আবর্জনা থেকে পানীয় জলের উৎস কমপক্ষে ১০-১৫ মিটার দূরে উঁচু জায়গায় স্থাপন করা বিধেয়। বালি, পাথর, কয়লা ব্যবহার করে পানীয় জল পরিশোধন করা যেতে পারে। পরিশোধন না করে পানি পান করা নিরাপদ নয়। রাসায়নিক দ্রব্যসমূহের বিরূপ প্রভাব থেকে পরিবেশকে রক্ষা করার জন্য রসায়নবিদদেরই মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। কল-কারখানার বর্জিত পদার্থ শোধন বা পরিষ্কার করার চেয়ে সৃষ্টি হওয়ার আগেই সেগুলোকে বাধাদান বেশি ভালো। প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন করে ক্রমাগত অত্যধিক লোকসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করতে হবে। অমানবিক অবৈজ্ঞানিক উপায়ে উদ্ভিদ ও প্রাণীর নির্মূলীকরণ রোধে আইন আরও কঠোরতর হলে ভালো। অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নগর-শহর প্রভৃতির পত্তন রোধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সরকারকেই নিতে হবে। কারণ সরকার শুধু ড়ভ ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব, নু ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব নয় ভড়ৎ ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব-ও বটে। প্রযুক্তি বিদ্যার অগ্রগতি হোক, রুদ্ধ হোক, এর অপব্যবহার। কলকারখানার সৃষ্টি হোক কিন্তু যত্রতত্র নয়। কলকারখানার বিকেন্দ্রীকরণ অবশ্যই প্রয়োজন। শব্দ নিয়ন্ত্রণকারী ব্যবস্থা প্রয়োগ করে কলকারখানা ও গাড়ির হর্নের শব্দকে নিয়ন্ত্রিত করতে হবে। আমাদের ভূললে চলবে না, পাশ্চাত্যের অধিকাংশ গির্জা-মসজিদ যে-কোনো ধরনের শব্দ বা ধ্বনি আইনানুসারে নিয়ন্ত্রিত। কলকারখানা থেকে নির্গত ক্ষতিকর পদার্থগুলোকে সরাসরি পানিতে ফেলা বন্ধ করতে হবে। এতে যদি আইনের চোখ রক্তবর্ণ হয়, ক্ষতি নেই কল-কারখানার পর্যাপ্ত ফিল্টার ব্যবহার করতে হবে। যে-কোনো প্রাকৃতিক উপকরণ, যা মানবজীবনে অতি প্রয়োজনীয়, সেগুলোর ক্রমাগত ধ্বংসসাধন রোধ করতে হবে। সবার আগে প্রয়োজন সচেতনবোধ।
১৯৮৭ সাল থেকে একথা যেন শ্লোগান হয়ে দাঁড়িয়েছে ঝঁং-ঃধরহধনষব উবাবষড়ঢ়সবহঃ এর অক্ষম বঙ্গানুবাদ ‘বহনক্ষম উন্নয়ন।’ সব উন্নয়নই কিছু না-কিছু বহন করে। তা ভালো হতে পারে, মন্দও হতে পারে। আসলে ‘পরিবেশ এবং উন্নয়নের বিশ্ব সংস্থা’র (ডঈঊউ) উদ্যোগে ‘বার্টল্যান্ড রিপোর্ট-আওয়ার কমন ফিউচার’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে ঝউ-র ধারণাটি গুরুত্ব লাভ করে। এই ধারণার মূল কথা: এমনই এক সৃজনমূলক উন্নয়ন, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত রাখবে এবং বর্তমানের সাথে ভবিষ্যতের ধনাত্মক (চড়ংরঃরাব) ঐক্য রক্ষা করবে। ১৯৭২ সালের জুন মাসে ব্রাজিলের রিও-ডি-জেনেরো-তে ঊধৎঃয ঝঁসসরঃ বা ধরিত্রী সম্মেলন উপরোক্ত ধারণাটি ব্যাপক গুরুত্ব লাভ করে। এই সম্মেলনে পরিবেশ উন্নয়নের উপর যে ২৭টি নীতি গৃহীত হয় তা এককথায় পরিবেশ তথা জীববৈচিত্র্যকে যে-কোনো আঘাত বা দুর্যোগ থেকে রক্ষা করার নীতি। উন্নত, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত-সব দেশই এই নীতিকে স্বাগত জানিয়েছে। লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট। ( দৈনিক ইনকিলাবের সৌজন্যে)