মিথ্যা ও গায়েবি মামলার প্রতিবাদে শেরপুরে সংবাদ সম্মেলন করেছে জেলা বিএনপি। শনিবার ১৮ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় জেলা শহরের রঘুনাথ বাজারস্থ জেলা বিএনপির কার্যালয়ে ওই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় এক লিখিত বক্তব্যে জেলা বিএনপির সভাপতি মাহমুদুল হক রুবেল বলেন, অঘোষিত দেউলিয়াত্বের মুখে পতিত নিশিরাতের সরকার যূগে ওঠা জনরোষ থেকে বাঁচতে ক্রমেই হিংস্র হয়ে উঠছে। দ্রব্যমূল্যের চরম উর্ধ্বগতি, নজিরবিহীন লোডশেডিং, জ্বালানি সংকট, সীমাহীন লুটপাট, অর্থপাচার, নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশ যখন প্রতিবাদমুখর, তখন অবৈধ দখলদার সরকার জোরপূর্বক ক্ষমতায় থাকতে বেসামাল ও দিশেহারা হয়ে উঠেছে। বিগত ২০১৮ সালের ন্যায় আবারও কাল্পনিক মামলা দেওয়া ও বিনা গ্রেফতারী পরোয়ানায় অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে নির্যাতন শুরু করেছে। আপনারা জানেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য গত এক যুগ ধরে র্যাব, পুলিশসহ আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, সিভিল প্রশাসন ও বিচার বিভাগ সহ রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে বিরোধীমত দমন, নিশ্চিত পতন, চলমান গণবিস্ফোরন, জনরোধ ঠেকাতে অতীতের ন্যায় আবারও বেপরোয়া হয়ে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারন মুক্তিকামী মানুষদের গ্রেফতার ও নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে। ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা, মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, নজির বিহীন দুর্নীতির ফলে সরকার ঘোষিত আসন্ন দুর্ভিক্ষ। থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষার এক মহৎ লক্ষ্য নিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের মানুষ নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করছে। এই আন্দোলনকে অব্যাহত রাখতে এদেশের জনগণ সত্যের পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে আন্দোলন ও সাংগঠনিক কর্মকান্ডে আন্তরিকভাবে অংশ গ্রহণ করছে। আসন্ন দুর্বার গণআন্দোলন ও নিশ্চিত গণঅভ্যুত্থান আঁচ করতে পেরে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন শেখ হাসিনার অবৈধ সরকার। ফলে নিজেদের স্বার্থে আবারও আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাড় করাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ১৮ই নভেম্বর, চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পাশাপাশি সাংগঠনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শ্রীবরদী উপজেলা তাঁতী দলের কর্মী সভা অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করে নেতাকর্মী ঘরে ফিরে যাওয়ার পথে কোনরূপ উস্কানী ছাড়া ১৫ জন নেতাকর্মীকে অতি উৎসাহী কিছু পুলিশ সদস্য গ্রেফতার করে।সাবেক এই সংসদ সদস্য আরো বলেন, আপনারা ইতিমধ্যেই লক্ষ্য করেছেন দেশের প্রত্যেকটি উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় সমাবেশে সাধারন মানুষের উপচে পড়া ভীড়। সমাবেশগুলোতে যাতায়াতের সমস্ত পথ রোধ করেও ঠেকানো যাচ্ছে না সাধারন জনতার অংশগ্রহণ। এমনকি সমাবেশের দুই-তিন দিন আগে থেকেই সাধারন মানুষ সহ নেতাকর্মীরা রাত দিন অবস্থান করছেন সরকার বিরোধী এই গণ সমাবেশগুলোতে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল। আপনারা লক্ষ্য করছেন মিথ্যা মামলা, হামলা, জেল-জুলুম, গুম-খুন, ক্রস ফায়ার ও রাজপথে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেও জনগণের কণ্ঠ ও উপস্থিতি রোধ করা যাচ্ছেনা । এদেশের মুক্তিকামী সাধারন মানুষ মৌলিক অধিকার আদানের ঘরে বসে না থেকে রাজপথে নেমে এসেছে। যা শেরপুর জেলার রাজপথেও লক্ষনীয় । এই অবৈধ সরকারকে ইতিমধ্যে প্রত্যাখ্যান করেছে। কাজেই সময় অল্প, আর কোন পথই এই অবৈধ সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে পারবে না। তাই প্রশাসনের ভাইদের বলছি এদেশের সাধারন মানুষের সাথে আর অন্যায় করবেন না, সত্য ও ন্যায়ের বিরুদ্ধে যাবেন না, জনগণের বিপক্ষে অবস্থান করবেন না। যদি আপনাদের এই অন্যায় অনাচার অব্যাহত থাকে, তবে আমরা শেরপুরের সাধারন জনগণ ও সকল নেতকর্মীদের সাথে নিয়ে পাল্টা কর্মসূচী দিতে বাধ্য হবো। এতে করে যদি শান্ত শেরপুর অশান্ত হয়ে উঠে এর সকল দায়ভার আপনাদেরকেই নিতে হবে। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে, সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া ছাড়া আমাদেরও আর কোন পথ নেই যা সময়ের দাবীও বটে। শেরপুর জেলার এই মুক্তিকামী জনগনকে দমানোর জন্য অবৈধ সরকার এরই মধ্যে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে, যার অংশ হিসেবে পুলিশ সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বিনা উস্কানীতে শ্রীবরদী তাঁতীদলের কর্মীসভা শেষে বাড়ী ফেরার পথে আকস্মিক হামলা চালিয়ে ১৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে জেলা হাজতে পাঠানো হয়েছে এবং ৩৬ জন নাম উল্লেখ করে ৩০/৪০ জন অজ্ঞাত নামা আসামী করে ১৯০৮ সনের বিস্ফোরক দ্রব্যাদী আইনের ৩/৪ ধারা এবং পেনাল কোড এর ১৪৩/১৮৬/৩৩২/৩৫৩/৫০৬(২)/৩৪ ধারায় মিথ্যা ও কাল্পনিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। যাহার মামলা নম্বর- শ্রীবরদী জি.আর নং- ৩৩৫/২২। এদের মধ্যে আটকৃতরা হলেন আঃ করিম জানু, চঞ্চল মিয়া, মোঃ আব্দুল হান্নান, সাইফুল ইসলাম ওরফে আলিম উদ্দিন, মোঃ াজাহার আলী, মোঃ আব্দুল হাকিম, মোঃ ইসমাইল হোসেন, মোঃ শিপন মিয়া, মোঃ আল আমিন, মোঃ কাজল মিয়া, মোঃ সামসুল মিয়া, মোঃ আব্দুর রহিম, মোঃ জসিম উদ্দিন, মোঃ শাহা আলম মিয়া, মোঃ শাহজাহান এবং আসামী করা হয়েছে শেরপুর জেলা তাতীদলের আহ্বায়ক লালন মোল্লা ও সদস্য সচিব রোমান আহাম্মেদ সহ হাস্যকর ভাবে পঙ্গু শয্যাসায়ী মোঃ সামসুজ্জামান স্বপনকে ২৮ নং আসামী এবং শেরপুর সদরের গাজির খামার ইউনিয়ন ও পাকুড়িয়া ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের নামেও ২০১৮ সালের ন্যায় মিথ্যা ও গায়েবী মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমি শেরপুর জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আটককৃত নেতাকর্মীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের আহবান জানাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এড মুখলেছুর রহমান জীবন, এস এম শহিদুল ইসলাম, সহ-সাধারন সম্পাদক আওয়াল চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রশীদ পলাশ, আবু রায়হান রুপন, ছাত্রদলের সভাপতি শওকত হোসেন সহ জেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।