আমরা নিজেদের যতই ভদ্রলোক প্রমাণের চেষ্টা করি না কেন, যতই জ্ঞানী, শিক্ষিত দাবি করি না কেন, নিজেকে যতই সচেতন নাগরিক হিসাবে অহংবোধ করি না কেন, পরচর্চায় আমরা কিন্তু সবাই অভ্যস্ত। কেউ কম কেউ বা বেশি। পরনিন্দার আরবি শব্দ ‘গীবত’। অর্থাৎ অপরের দোষ খুঁজে বের করে অন্যকে বলা। কারো ব্যাপারে কোনো কথা সত্য বা মিথ্যা হোক, অন্য লোকের সম্মুখে প্রকাশ করলে, যার সম্বন্ধে বলা হলো, সে যদি অসন্তুষ্ট হয় তাহলে তাকে পরনিন্দা বলে। পরনিন্দা কবীরা গুনাহ। এটা আমরা অনেকে জানার পরও পরনিন্দা করার স্বভাব থেকে নিজদের মুক্ত রাখতে পারি না। পরনিন্দা করার মধ্যে যেন একটা আলাদা আনন্দ। একটা অন্য রকম শান্তি। এক প্রকার লোকের এরূপ স্বভাব আছে, তারা মানুষের পিছনে তার দোষের বিষয় অন্যের কাছে বাড়িয়ে বলে তৃপ্তি লাভ করে। অবশ্য কোনো কোনো পরনিন্দাকারী এরূপও পাওয়া যায়, যে নিজ থেকে কোনো কিছু না বাড়িয়ে, না কমিয়ে মানুষের প্রকৃত দোষটুকু প্রকাশ করে দেয়। কিন্তু কথা হলো, মানুষের দোষত্রুটি তার অসাক্ষাতে অন্যের নিকট প্রকাশ করা, তা সত্য হোক আর মিথ্যা হোক, দু’টোই পরনিন্দা। একদা নবী করিম (সা.) সাহাবায়ে কেরামদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি জান গীবত (পরনিন্দা) কী? সাহাবারা আরজ করলেন, এ স¤পর্কে আল্লাহ এবং তার মনোনীত রসুলই (সা.) ভালো জানেন। তিনি বললেন, তোমরা ভাইয়ের সম্বন্ধে এমন আলোচনা কর না, যা সে অপছন্দ করে। সাহাবারা আরজ করলেন, যে বিষয়ের আলোচনা করা হয় তা যদি তার মধ্যে বিদ্যমান থাকে? তিনি বললেন, সে বিষয় তার ভিতর বিদ্যমান থাকলে এবং তা অন্যের কাছে বললেও তা গীবত হবে। আর না থাকলে আরো বড় গুনাহ অর্থাৎ অপবাদ হবে।
মানুষের দোষত্রুটির বিষয় তার অসাক্ষাতে আলোচনা করে তা দ্বারা ঐ ব্যক্তির কোনো উপকার বা সংশোধন তো হয়ই না বরং ঐ স¤পর্কে তার পক্ষ থেকে কোন জবাব থাকলে তা প্রকাশের সুযোগ হয় না। এতে ঐ লোক স¤পর্কে মানুষের ভুল ধারণা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহতায়ালা বলেন, যে ব্যক্তি গীবত করে, সে যেন মৃত ভাইয়ের মাংস ভক্ষণ করে। পবিত্র হাদীস শরীফে আছে, গীবতকারীর পুণ্য যার গীবত করা হয়েছে, তার নিকট চলে যায়, তার পাপ গীবতকারীর পাপের সঙ্গে যোগ করে দেওয়া হয়। কিছু মানুষ কুৎসা রটনা করে, পিছনে লেগে পড়ে, কারো অবর্তমানে তার সমালোচনা বা দোষ বর্ণনার মাধ্যমে পরনিন্দা করে। এ পরনিন্দা মানুষ কেন করে তার কারণ জানতে হলে দেখা যায় নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য অপরের নিকট প্রতিপক্ষকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। হিংসার কারণে কেউ পরনিন্দা করে থাকে। কারো উন্নতি কিংবা ভালো দেখে অথবা মানুষকে তার স¤মান ও প্রশংসা করতে দেখে অন্য কিছু করতে না পেরে তার দোষত্রুটি প্রকাশ করে, যাতে মানুষ তার প্রতি বিরাগভাজন হয়ে তার স¤মান ও প্রশংসা করা থেকে বিরত থাকে। আগে থেকে যদি কেউ বুঝতে পারে যে অমুক ব্যক্তি তার স¤পর্কে অমুক ব্যক্তির কাছে তার দোষ প্রকাশ করবে তখন সে পূর্বে তার পরনিন্দা করে সে ব্যক্তিকে তার প্রতি বিষিয়ে তোলে, যাতে তার কথা ঐ ব্যক্তির কাছে গ্রহণযোগ্য না হয়। কেউ কারো দেখাদেখিতে তাল মিলাতে গিয়েও পরনিন্দা করে। নিজের সঙ্গী কারো স¤পর্কে কেউ মন্দ আলোচনা করলে তখন সে নিজেও তার বন্ধুত্ব হারানোর ভয়ে অথবা সে তার উপর নারাজ হবে এ ভয়ে তার পরনিন্দাকে সমর্থন করে। কেউ কেউ কোনো কারণ ছাড়াই কারো প্রতি অপরের মন বিষিয়ে তোলার জন্য দোষ বর্ণনা করে। মনে রাখতে হবে, কারো প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রুপ বা তার কার্যকলাপ নিয়ে হাসাহাসি করাও পরনিন্দা।
কারো দৈহিক, চারিত্রিক, বংশগত, পেশাগত, ব্যক্তিগত, ত্রুটি অথবা কাজ, আচার-আচরণের কথা বর্ণনা করা অথবা নিন্দা করাও পরনিন্দা। আবার এটা শুধু মুখে বলার উপর নির্ভর করে না, বরং আকার ইঙ্গিতে অপরের দোষ প্রকাশ করাও পরনিন্দা। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, একদা এক মহিলা রসুল (সা.) এর কাছে আগমন করলো, যখন সে চলে গেলো তখন আমি বললাম, যে মহিলাটি এখানে এসেছিল সে বেঁটে। রসুল (সা.) বললেন, তুমি গীবত করলে। হাদীস শরীফে এসেছে, শ্রোতা ও পরনিন্দাকারীদের একজন কোন জ্ঞানী, গুণী, বিদ্বান, ইমাম, কামেল, ফাজেল অথবা যে কোনো শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তির কাছে কারো স¤পর্কে নিন্দা করছে, তিনি কোনো প্রকার বাধা প্রদান না করে নীরবে শুনতেন, কোনো প্রতিবাদ করতেন না। কারণ, পরনিন্দা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করাও পরনিন্দা এতে পরনিন্দাকারী আরোও উৎসাহিত হয়।
পরনিন্দা যে ব্যভিচারের চেয়ে ঘৃণ্য এ সত্যটি যাদের জানা নেই তারা এ কাজটি করলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু যারা পরনিন্দা স¤পর্কে, পরনিন্দার কুফল বা ভয়াবহ পরিণতি স¤পর্কে অবগত আছেন তাদেরও দেখি এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সতর্কতা নেই। কেউ কাউকে তুচ্ছজ্ঞান করে পরনিন্দা করেন, কেউ হিংসার বশবর্তী হয়ে, কেউ তার স^ার্থের উপর আঘাত হওয়ার সাথে সাথে পরনিন্দায় লিপ্ত হন। অনেকে কারো জ্ঞান, প্রতিভা, মেধাকে সহ্য করতে না পেরে অন্যদের তার নিন্দার মাধ্যমে নিজের হিংসার যন্ত্রণাকে লাঘব করার প্রয়াস চালায়। অনেককে দেখি কারো মত ও আদর্শের পরিপন্থী হলে পরনিন্দা করতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করে না। কেউ শিক্ষা, জ্ঞান, প্রতিভা, মানে, গুণে, স¤মানে অনেক নি¤œ পর্যায়ের মানুষ হওয়া সত্ত্বেও বা সমাজের প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা না থাকা সত্ত্বেও, কারো সহযোগিতায় উপরের সারিতে চলে আসার সুযোগ হলে এরা সত্যিকার শিক্ষিত, জ্ঞানী, গুণী, প্রতিভাবান, ব্যক্তিদের নিন্দায় তৎপর হয়ে উঠে। এরূপ চরিত্রের লোকেরা কখনো কখনো এমন বলে বসে, অমুক ব্যক্তিতো এ স¤পর্কে একেবারে অজ্ঞ, ওর চেয়ে আমি অনেক বেশি জ্ঞানী। অনেকে বুঝতে পারে না এরা নিজেদের দুর্বলতা ঢাকার জন্য এ ধরনের ঘৃণ্য তৎপরতা চালায়। আবার কেউ কেউ বলে অমুক এরকম কাজ করেছে, অথচ খবর নিয়ে দেখা যায়, বক্তব্যটি স¤পূর্ণ মিথ্যা।
অনেক লোকের মধ্যে আবার এরূপ স^ভাব দেখা যায়, যারা লজ্জ¦া দেওয়ার জন্য কারো দোষত্রুটির বিষয় লোকের স¤মুখে তাকে বলে এবং এভাবে বলে সে গর্বানুভব করে। এটা কিন্তু পরনিন্দার মতো একটি দোষের বিষয়। কারণ মানুষকে এভাবে লজ্জা দেয়া কোনো ক্রমে উচিত নয়। রসুল আকরাম (সা.) বলেন, ‘তুমি যদি মোমেন, মুত্তাকীর দোষকে গোপন করতে না পার, আল্লাহও কিয়ামতের দিন তোমার দোষকে গোপন রাখবে না।’
আমি আমার জীবনে একটি বিষয় বেশি লক্ষ করলাম, তা হলো, কেউ তার অন্যায়, অপরাধ ও ভুলকে অন্যের গাড়ে চাপিয়ে দিতে চায়। বাস্তব জীবনের অনেক ক্ষেত্রে দেখলাম, কারো কোনো কাজে ভুল হয়ে গেলে, অন্যায়কে স^ীকার করে না, সে অন্যদের পরনিন্দায় লিপ্ত হয়ে বুঝাবার চেষ্টা করে, এটা আমার ভুল বা অন্যায় নয়, এটা অমুকের ভুল বা অন্যায় এবং সে তার এ ভুল বা অন্যায় আরেকজনের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার জন্য তার বিরুদ্ধে আরো কিছু কল্পকাহিনীর সৃষ্টি করে।
আমরা বেশ ক’জন বন্ধু মাঝে মধ্যে আড্ডায় বসি। আড্ডায় হাসি, ঠাট্টা, তামাশা, বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। ক্রীড়া, সাহিত্য, সংস্কৃতি, টেলিভিশন, নাটক ও বিভিন্ন সামাজিক আলোচনা থাকলেও রাজনৈতিক আলোচনাকে আমরা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। এরই মধ্যে অবশ্য দু-একজন বন্ধুর অনুপস্থিতিতে বেশ কিছু নতুন মুখের আবির্ভাব ঘটেছে। আমি কি বিবেকের আদালতে দাঁড়িয়ে এ কথাটি বলতে পারি যে, আমাদের আড্ডায় পরনিন্দা হয় না? কোনো বন্ধু কোনো কারণে আড্ডায় অনুপস্থিত থাকলে আমরা কি তার সমালোচনায় মুখর হই না? আড্ডার কথা এ জন্য উল্লেখ করছি, আমি নিশ্চিত জানি, আমাদের মতো এ রকম আড্ডা অনেকেই দিয়ে থাকেন। বিভিন্ন স্থানে এরূপ আড্ডার আসরের সংবাদ আমাদের কানে আসে। অনেকে এমন আছেন, আড্ডায় কোনো কারণে উপস্থিত থাকতে না পারলে তার রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জীবনকে উপভোগ করার জন্য এ ধরনের আড্ডার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই আড্ডায় পরনিন্দায় লিপ্ত হওয়া এবং দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করা বা পরিবারকে সময় দেয়ার কথা ভুলে যাওয়া কোন অবস্থাতেই ঠিক না। কারণ, একথা ভুলে গেলে চলবে না, আড্ডা অনেক সময় দা¤পত্য কলহের জš§ দিতে পারে। তাই বেয়ার্ড টেলর এর একটা বাণী আমাদের সব সময় স্মরণ রাখা উচিত সেটি হলো, ‘রাজা হোক আর প্রজা হোক সে সুখী যে তার গৃহে শান্তি খুঁজে পায়’।
আমার স্কুল জীবনের এক ঘটনা। আমি তখন সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। স্কুল ছুটির পর একদিন বিকালে বাড়ির ভিতরের রুমে গল্পের বই পড়ছিলাম। হঠাৎ আমার ক্লাসের এক বন্ধুকে আমার সামনে দন্ডায়মান দেখে আমি অবাক। কারণ, আমার এলাকার দু’একজন ছাড়া ঢালাওভাবে কেউ ঘরের ভিতরে আসতে পারে না। আমি বন্ধুকে কিছুটা অবাক নয়নে জিজ্ঞেস করলাম, তুই এখানে কীভাবে এলি? বন্ধু জবাবে বললো, কেন, তোর আব্বা বললেন, তুই এখানে আছিস। আমি ব্যাপারটি বুঝতে পারলাম, আব্বা বৈঠকখানায় পত্রিকা পড়ছিলেন বন্ধুটি ক্লাসমেট বলাতে আব্বা সরাসরি তাকে ভিতরের রুমে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আমি বন্ধুর সাথে প্রয়োজনীয় আলাপ সেরে বিদায় করলাম। কিন্তু আব্বার উপর আমার রাগ হলো। কারণ, এ বন্ধুটির কিছু চারিত্রিক দিক আমার জানা ছিল। সে কোনো বন্ধু-বান্ধবের বাসায় গেলে সেখানকার কোনো দোষত্রুটি, কোনো ঘটনা জানলে বা কোনো দৃশ্য চোখে পড়লে স্কুলে এসে অন্যান্য বন্ধুবান্ধবকে তা প্রকাশ করে। এমনকি কারো বোন স¤পর্কে মন্তব্য করতেও সে সংকোচবোধ করে না। তাই আব্বাকে বললাম, আপনি ওকে ভিতরে পাঠিয়ে দিলেন কেন, আমাকে এখানে ডাকলেই তো পারতেন। আব্বা বললেন, কেন, ছেলেটা তোমার ক্লাসমেট না? আমি হ্যাঁ বলার সাথে সাথে আব্বা বললেন, তাহলে অসুবিধাটা কোথায়? আমি একটু গম্ভীর হয়ে বললাম, ছেলেটা একটু অন্য রকম। আমার সহজ, সরল, অমায়িক পিতা হঠাৎ রেগে গিয়ে বললেন, কী বললে, ছেলেটা ভালো না? ছেলেটা ভালো না হলে তুমি ওর সাথে স¤পর্ক রাখলে কী করে? ছেলেটা এ বাসায় এলো কী করে? প্রশ্নবাণে আমি আহত পাখির মতো আব্বার স¤মুখ থেকে পালিয়ে গেলাম। সেদিন আব্বার কাছ থেকে একটা শিক্ষা আমি পেয়েছিলাম। তাহলো যাদের সাথে আমার স¤পর্ক বিদ্যমান পারতপক্ষে আমি তাদের নিন্দা করি না। আর খারাপ ছেলেদের সাথে মেলামেশা করি না।
আমরা সুরা হুমাযা এর প্রথম আয়াতটি বঙ্গানুবাদ করলে দেখতে পাই ‘দুর্ভোগ প্রত্যেকের, যে পশ্চাতে ও স¤মুখে লোকের নিন্দা করে’। শুধু এ আয়াতটি ব্যাখ্যা করতে গেলে আমরা পরনিন্দা স¤পর্কে অনুধাবন করতে পারি। হুজুরে আকরাম (সা.) এরশাদ করেছেন, তোমরা গীবত থেকে অত্যন্ত সতর্ক থাক, পুরাপুরিভাবে তা পরিহার কর, কেননা গীবত ব্যভিচারের চাইতে ঘৃণ্য। কারণ, ব্যভিচারী ব্যক্তি আল্লাহর কাছে তওবা করলে তিনি ক্ষমা করে দিবেন, কিন্তু গীবতের জন্য গীবতকৃত ব্যক্তির মার্জনা ব্যতীত আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। অতএব, পরনিন্দা করে থাকলে প্রথমত বান্দার নিকট থেকে ক্ষমা আদায় করে নেয়া উচিত। হাদিস শরীফে আছে, ‘কিয়ামতের দিন পরনিন্দাকারীর চেহারা পিছন দিকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।’
পরনিন্দা এবং এ ধরনের আরো কিছু দোষত্রুটি কারো থাকলে অনেক সময় সহানুভূতির দৃষ্টি দিয়ে তাকে সংশোধন করে দেওয়া একটি মহৎ গুণ এবং মনুষ্যত্বের পরিচায়কও বটে তবে তার নিয়ম এই যে, দোষী ব্যক্তিকে একান্ত গোপনে ডেকে কিংবা তার নিকটে উপস্থিত হয়ে এরূপ বলতে হয় যে, আপনার অমুক কাজটি নিতান্ত অন্যায় বা অনুচিত, এটা পরিহার করুন। এতে ঐ লোকের দোষমুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং প্রকৃতপক্ষে এভাবে মানুষকে সংশোধন করা সম্ভব হয়।
তবে এরূপ লোক আছে, যারা সমাজের অনুসরণীয় ব্যক্তি, যেমন আলেম, ফাজেল বা সমাজের এরূপ গণ্যমান্য ব্যক্তি, যাদের মানুষ ভক্তি, শ্রদ্ধা করে এবং একান্ত মহৎ লোক বলে বিনা দ্বিধায় তাদের যাবতীয় কাজকর্ম উত্তম ও নির্দোষ ভেবে গ্রহণ করে। এ রূপ লোকের মধ্যে কোনো গোপন দোষ থাকলে তা দ্বারা প্রতারিত হতে পারে বলে যদি কেউ মনে করে তাহলে মানুষের কল্যাণার্থে এদের বিষয় লোকদের জানিয়ে দিলে তাতে কোন অপরাধ হবে না বরং এটি একটি উত্তম ও সৎকার্য মনে করতে হবে। কারণ, এতে মানুষ ঐ সমস্ত ভন্ড তপস^ীদের প্রবঞ্চনা থেকে রক্ষা পেতে পারে। আমাদের এটা জেনে রাখা দরকার ধর্ম, রাষ্ট্র, জাতি ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর, কারো এ রকম কাজের দোষত্রুটির কথা প্রকাশ করা পরনিন্দার অন্তর্ভুক্ত নয়। অত্যাচারী শাসকের দুঃশাসনের বর্ণনা বা খোদাদ্রোহী কর্মকা- মানুষের সামনে তুলে ধরা পরনিন্দা নয়, বরং কর্তব্য। অত্যাচারী শাসকের সামনে হক কথা বলা উত্তম ইবাদত।
পরনিন্দা স¤পর্কে এটুকু লিখে এ বিষয়ের উপর একটা উপসংহার টেনে আজকের লেখাটি শেষ করবো ভাবছি, এমন সময় আমার লেখার টেবিল থেকে কিছু দূরে রাখা স্টিল আলমিরার সংযুক্ত আয়নাটির উপর আমার চোখ পড়লো। মনে হলো দর্পণের বিম্বিত প্রতিচ্ছবিটি আমাকে বলছে ‘পরনিন্দা নিয়ে অনেক কথা তো লিখলে, কোরআন, হাদীসের উদাহরণ দিলে, তুমি কি বলতে চাও, তোমার মধ্যে পরনিন্দা করার স^ভাবটি নেই? তুমি কি কোনো সময় কারো নিন্দা করো না? তোমার জীবনের অভিধান থেকে পরনিন্দা শব্দটি কি মুছে গেছে? তুমি কি বলতে চাও তোমার আজকের এ লেখাটার মধ্যে কারো প্রতি কোনো প্রকার পরোক্ষ নিন্দা নেই এবং তোমার আগামী লেখাগুলোতে কারো প্রতি কোনো প্রকার নিন্দা থাকবে না? তুমি কি ইদানিং উত্তম চরিত্রের অধিকারী হয়ে গেলে?’ আমি চমকে উঠলাম। আমার সমস্ত শরীর কেঁপে উঠল। মুহূর্ত বিলম্ব না করে আমি আয়না থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম। পরনিন্দা নিয়ে আর বেশি কিছু লেখার সাহস আমি হারিয়ে ফেললাম। লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট। জীবন সদস্য-বাংলা একাডেমী ঢাকা ও সিলেট প্রেসক্লাব।