শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৫ অপরাহ্ন

উলিপুরে পত্রিকা বিক্রেতা ভুট্টো এখন ভাপা পিঠা বিক্রেতা

উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২২

এক সময়ের উচ্চস্বরে নতুন নতুন শিরোনামে পত্রিকা বিক্রেতা ভুট্টো এখন ফুটপাতের ভাপা পিঠা বিক্রেতা। তাঁর আপন চাচা পায়ে হেটে বিশ্ব ভ্রমনকারি ওসমান গনি শখ করে নাম রেখেছিলেন জুলফিকার আলি ভুট্টো। বাবা-মায়ের রাখা নাম আবু মুত্তালিব। সবার প্রিয় ডাক ভুট্টো। ভুট্টোর বর্তমান বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুর পৌরসভাস্থ নারিকেল বাড়ি তিস্তার পাড়। জন্মস্থান চিলমারী উপজেলার বোনবোন দিয়ার খাতায়। পিতা মাতার ছয় সন্তানের সর্ব কনিষ্ঠ ভুট্টো পিতার হাত ধরেই উলিপুরে ১৯৭১ সালে চলে আসেন। ৭১রে পাক সেনারা তার পৈত্রিক বাড়িটি পুড়িয়ে দেয় এরপর ব্রহ্মপুত্র কেড়ে নেয় শেষ ঠিকানার আশ্রয়কেন্দ্রের মাটিটুকু। যৌবনের সিড়িতে পা দিয়ে পিতা-মাতার মতেই বিয়ে করেন ভুট্টো, এরপর তিন সন্তানের জনক হন তিনি। দীর্ঘ এই ৬০ বছরের জীবনে কর্ম হিসেবে শুরু করেছিলেন বাইসাইকেলের মেকারি দিয়ে। খুব বেশিদিন সে পেশায় টিকে থাকতে পারেন নি। এরপর শুরু আরেক জীবন চায়ের দোকানে মিচিয়ার হিসেবে। এভাবে মাইক অপরারেটর, তারপর ভিসিআর অপারেটর হিসেবে কাজ করে সংসার চালান। যুগের চাহিদায় পাল্টাচ্ছিলেন কর্ম আর কর্মক্ষেত্র। রমজান মাস আসলে মুসলিমদের ভোরের পাখি হিসেবে নিজেকে বিলিয়ে দেন। মধ্যরাত থেকে তার মোটা গলার আওয়াজে জেগে যায় প্রিয় রোজাদার ভাই-বোনেরা। পুরো মাস শেষে বাড়ি বাড়ি ঘুরে মুষ্টির চাল তুলে চলে যায় তার কিছুদিন। বর্ষার মৌসুমে পুকুর মালিকের সাথে চুক্তি করে মাছ মেরে আবার সে মাছ বাজারে বিক্রি করেও সংসার চালান অদম্য এই মানুষটি। ৯০’র দশকে শুরু করেন পত্রিকা বিক্রি, এ পেশায় জীবন জীবন চলে যায় ১৫ বছর। আস্তে প্রযুক্তির উত্থানে পত্রিকা পড়ার মানুষের সংকট বাড়তে থাকে এবং বেঁচা বিক্রিতে ভাটা পড়তে থাকে। একবার উলিপুরের স্থানীয় এক নেতার নিউজ প্রকাশ হয় পত্রিকায় সেই নিউজের শিরোনাম ধরে কাগজ বিক্রির সময় ওই নেতার পাতিগুন্ডাদের পিটনের শিকারও হন ভুট্টো। আস্তে আস্তে থেমে যায় পত্রিকা বিক্রি বদলাতে থাকে কর্ম আর কর্মক্ষেত্র। কখনো কখনো রাজমিস্ত্রির যোগালি দিয়েও পরিবার চালিয়েছেন, চেষ্টা করেছেন নিজ সন্তানদের সুশিক্ষিত করবার। ইতোমধ্যে তার বড় সন্তান ডিগ্রি পাশ করে চট্রগ্রামের একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে কর্মরত আছেন। এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন, আরেক মেয়ে ২০২২ সালে এসএসসি পরিক্ষা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) রাত তখন ১০টা ফুটপাতে দেখা হয় ভুট্টোর সাথে তখন তিনি জানান, পত্রিকা বিক্রির দিনগুলোতেই বেস ভালোই ছিলাম, পত্রিকার বাজারে ধস নামায় আমি এখন পথে বসেই ভাপা পিঠা বিক্রি করে সংসার বাঁচাই ও বাঁচি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com