শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৩ অপরাহ্ন

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২২

মহান বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের দশম দিন আজ । একাত্তরের এ দিনটি ছিল শুক্রবার। এদিন ঢাকার আশপাশের সকল এলাকাই শত্রুমুক্ত হয়েছিল। শত্রুমুক্ত হয়েছিল কুমিল্লার লাকসাম। লাকসামে সেদিন পাঁচ শতাধিক পাকিস্তানী সেনা আত্মসমর্পণ করেছিল। পরদিন পাকিস্তানবাহিনীর ঢাকায় ফিরে আসার চেষ্টা সবদিক দিয়ে ব্যর্থ হয়। মুক্তিবাহিনী ঢাকা দখল করে নেয়ার জন্য এদিন প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছিল। ভৈরব বাজার থেকে মিত্রবাহিনীর ৫৭ নম্বর ডিভিশন ঢাকার দিকে অগ্রসর হয়েছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বা লীয় প্রধানের পক্ষ থেকে এদিনই পাকিস্তানী বাহিনীকে অস্ত্রশস্ত্রসহ আত্মসমর্পণের অনুমতি দেয়া হয়। এদিন আরো যেসব এলাকা মুক্ত হয় তাহলো ভোলা, ময়মনসিংহ, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল ও মধুপুর, মুক্তাগাছা, নড়াইলের বালিয়া, নড়াইল, নরসিংদীর রায়পুরা, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ, মাদারীপুর ইত্যাদি। একাত্তরের এই দিনে খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছে দায়িত্ব পালন করছিলেন বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন। শত্রুবাহিনীর আক্রমণে প্রতিরোধ গড়ে সেদিন শহীদ হন এই যোদ্ধা।
এদিন পাকিস্তানী সেনারা যুদ্ধের মাঠে দ্রুত তাদের নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকে। ফলে সৈন্যদের মনোবল ভেঙে পড়ে। যুদ্ধে পরাজয়ের আশঙ্কায় লে. জেনারেল নিয়াজী পালাবার পাঁয়তারা করে। তার গোপন এই অভিসন্ধি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি ফাঁস করে দেয়। এদিন মিত্রবাহিনীর জঙ্গি বিমানগুলো ঢাকা বেতার কেন্দ্রের ওপর আক্রমণ করে এবং কুর্মিটোলার ওপর বারবার রকেট হামলা অব্যাহত রেখে নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপন করে। সম্মিলিত বাহিনী উত্তরা লের যুদ্ধে সর্বাত্মক সাফল্য অর্জন করেছে। মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়ে দিনাজপুর, রংপুর ও সৈয়দপুরের শত্রুবাহিনীকে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
একাত্তরের এদিন থেকেই মূলত স্বাধীনতা যুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় ঘনিয়ে আসতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকরা ‘বিজয় কবে হবে’ প্রশ্নের উত্তর পেতে শুরু করে।
দৈনিক পাকিস্তান ও আজাদের খবর অনুযায়ী, অবস্থা বেগতিক দেখে লে. জেনারেল নিয়াজী তার দুর্বলতা ঢাকার জন্য আজ কন্টিনেন্টাল হোটেলে (বর্তমানে বন্ধ হোটেল রূপসী বাংলা) গিয়ে দম্ভভরে বলেন, কোথায় বিদেশী সাংবাদিকরা, আমি তাদের জানাতে চাই, আমি কখনো আমার সেনাবাহিনীকে ছেড়ে যাবো না। অন্যদিকে আজ সরকারিভাবে বলা হয়, পাকিস্তান সরকার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি মি. আগাশাহী জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব মি. উথান্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সৈন্য প্রত্যাহারের কথা ব্যক্ত করে। চীনের অস্থায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মি. চি পো ফেই বলেন, ভারতের কার্যকলাপে তার সম্প্রসারণবাদী নগ্নরূপ প্রকাশ হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, সমাজতন্ত্রী সাম্রাজ্যবাদীরা নির্লজ্জের মতো ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের ত্রাণকর্তার ভূমিকা গ্রহণ করে বর্বরোচিত কাজ করছে।
এদিকে, এদিন চীনা বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার একটি সমালোচনা প্রকাশিত হয় দৈনিক পাকিস্তানে। সিনহুয়া ভারতের বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদান পাকিস্তান বিভক্ত করে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করার ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করে। সমালোচনায় বলা হয়, এতে মদদ দিচ্ছে সামাজিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তি সোভিয়েত সরকার। ভারত এপ্রিলের দিকে কতিপয় বিচ্ছিন্নতাবাদীকে একত্রিত করে তথাকথিত অস্তিত্বহীন বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা করে। ( গ্রন্থনা: ইবরাহীম খলিল )




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com