আজ ১৬ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) নতমস্তকে আত্মসমপর্ণ করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। আজ বাঙালি জাতির গৌরবের দিন। বিশ্ব মানচিত্রে লাল-সবুজের পতাকার স্থান পাওয়ার দিন। যেসব বীর সন্তানের প্রাণের বিনিময়ে এই পতাকা ও মানচিত্র এসেছে, তাঁদের শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমেই এই দিবসের মহিমা প্রকাশ পাবে আজ। এবার বিজয়ের ৫১তম বার্ষিকী। বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকেই রাজধানীসহ সারা দেশে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, সড়কদ্বীপ ও মোড় আলোকসজ্জিত করা হয়েছে। আজ সকালে জাতীয় পতাকা শোভা পাবে আঙিনায়। গতকাল থেকেই ঢাকার অলিগলিতে মাইকে বাজতে শোনা যায় বঙ্গবন্ধুর রেকর্ড করা ভাষণ ও মুক্তির গান।
আজ ১৬ ডিসেম্বর প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। প্রতিবছর মতো এবারও সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ কবরেন। এরপর সরকারের দায়িত্বশীল, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনৈতিক ও প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। অংশ নিবেন বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা। এরপরই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিওতে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী আলাদা বাণী দিয়েছেন।
জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত জাতীয় স্মৃতিসৌধ: মহান বিজয় দিবসে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। আজ শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) প্রথম প্রহরে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে সৌধ প্রাঙ্গণ। দিবসটি পালনে সবুজে ঘেরা ১০৮ হেক্টর জমির ওপর নির্মিত স্মৃতিসৌধ এলাকাটি গণপূর্তের কয়েকশ কর্মীর নিরলস পরিশ্রমে পেয়েছে এক নতুন রূপ। রং তুলির নতুন সাজে আর আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে ধুয়েমুছে চকচকে করা হয়েছে স্মৃতিসৌধ চত্বরের প্রতিটি স্থাপনা। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা গেছে, সৌধে প্রবেশের প্রধান ফটকে এবার নতুনত্ব আনা হয়েছে। বড় করে বঙ্গবন্ধু, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি দেওয়া হয়েছে।
স্মৃতিসৌধ চত্বরের চারপাশের টবে শোভা পাচ্ছে নানা ধরনের রঙ্গিন ফুল আর পাতা বাহারের গাছ। নিরাপত্তার জন্য ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ, উচ্চ মাত্রার সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা হচ্ছে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ডগ স্কোয়াড দিয়ে প্রত্যেকটি স্থানে তল্লাশি করা হচ্ছে। জাতীয় স্মৃতিসৌধের দায়িত্বরত গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘মহান বিজয় দিবসে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দসহ লাখো মানুষ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এজন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধকে প্রায় এক মাস ধরে ধুয়েমুছে, রং তুলির আঁচড় ও রঙ-বেরঙের ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। সেই সঙ্গে স্মৃতিসৌধে আগত দর্শনার্থীসহ সকলের নিরাপত্তা ও কোনো প্রকার অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এখানকার পুলিশ ও আনসার ক্যাম্পকে সর্বোচ্চ সকর্মকতামূলক অবস্থানে রাখা হয়েছে।’ সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘মহান বিজয় দিবস ২০২২ উপলক্ষে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত। গণপূর্ত বিভাগের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সকল সংস্কার কাজ সম্পূর্ণ করে নবরূপে রূপদান করা হয়েছে। শীতকালীন ফুল নানা রকম বৃক্ষের মাধ্যমে সাজানো হয়েছে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ। ইতিমধ্যে ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পুরো সাভার উপজেলা, বিশেষ করে স্মৃতিসৌধ এলাকায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে।’
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। এদিন জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আসবেন। এই লক্ষ্যে সাভার স্মৃতিসৌধ এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি। ইতিমধ্যে আমরা সর্বসাধারণের প্রবেশ বন্ধ রেখেছি। পাশাপাশি এলাকায় যে জনবসতি আছে তাদের নাগরিকত্ব ফরম দিয়েছি। নতুন কোনো লোকের এলাকায় প্রবেশাধিকার নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে৷’
তিনি আরও বলেন, ‘পাশাপাশি আমরা নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ওয়াচ টাওয়ার দিয়েছি। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ করছে। আমাদের প্রায় সাড়ে তিন হাজার পুলিশ সদস্য এই সৌধ এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। আমরা সৌধ এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দিয়েছি। সাভারের আমিনবাজার থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’