ভোটের মাধ্যমে অথবা সকলের মতামতের ভিত্তিতে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন করার নিয়ম থাকলেও কোনো কিছুরই তোয়াক্কা না করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিজের পছন্দের প্রার্থীকে সভাপতি নির্বাচিত করতে গোপনে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি গঠন করে তা শিক্ষাবোর্ড থেকে অনুমোদন এনেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি জানার পর বিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষকেরসহ শিক্ষক কমনরুমে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শুখানপুকুরী ইউনিয়নের লাউথুতি এস.সি উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। বিক্ষুব্ধ অভিভাবকদের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নবীন চন্দ্র বর্মন নিজের স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে কারও মতামত না নিয়ে গোপনে এ ম্যানেজিং কমিটি গঠন করে তা বোর্ড থেকে অনুমোদন এনেছেন। তবে কবে নাগাদ কমিটি অনুমোদন এনেছেন, কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি কারা, অভিভাবক সদস্য কারা-এর কোনটিরও সঠিক উত্তর দিতে পারেননি লাউথুতি এস.সি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নবীন চন্দ্র বর্মন। বিদ্যালয়ের অভিভাবকদের দাবি, প্রধান শিক্ষকের গোপন কমিটি বাতিল করে সকলের মতামতের ভিত্তিতে নতুন কমিটি ঘোষণা করতে হবে, তা না হলে বিক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের আর এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পাঠাবেন না। মহেন্দ্র বর্মন নামে বিদ্যালয়ের এক অভিভাবক জানান, সভাপতি নির্বাচন নিয়ে সমস্যা দেখা দেওয়ায় গত এক বছর ধরে শুকদেব চন্দ্র বর্মন নামে এক ব্যক্তি এডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে দুই দফায়(৬ মাস+ ৬মাস করে) এক বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এই ডিসেম্বর মাসেই ওই এডহক কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। প্রধান শিক্ষক মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ব্যক্তি সুবিধা পেতে কাউকে না জানিয়ে গোপনে নিজের পছন্দের প্রার্থী সুধীর চন্দ্র শর্মাকে সভাপতি বানিয়ে কমিটি অনুমোদন করিয়েছেন। একই সুরে কথা বলেন, সতিশ চন্দ্র বর্মন, কলিন চন্দ্র, অনিল চন্দ্র বর্মন, গৌরাঙ্গ ও মোজাম্মেল হোসেন নামে বেশ ক’জন অভিভাবক। তারা জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সময়মতো বিদ্যালয়ে আসেন না, নানা অনিয়মের সাথে জড়িত, আগামীতে বিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্য করতেই এ ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি। আমরা এই কমিটি মানি না এবং কমিটি বহাল রাখলে আমরা আমাদের সন্তানদের অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করাবো। শুখানপুকুরী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি ধর্ম নারায়ণ রায় জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একজন চতুর প্রকৃতির লোক। তাকে একাধিকবার কমিটির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আপনি এ এলাকার জনপ্রতিনিধি, আপনাকে বাদ দিয়ে কি কোন কিছু করা যাবে। যখন কমিটি গঠন করা হবে, তখন আপনাকে আমি ডেকে নিবো। কিন্তু এখন শুনছি তিনি নাকি গোপনে টাকা-পয়সা খরচ করে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি অনুমোদন করে এনেছেন। আমরা এলাকাবাসি এ কমিটি মানি না। বিদ্যালয়ের উন্নয়নের স্বার্থে বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও স্থানীয়দের মতামতের ভিত্তিতে কমিটি ঘোষণা করতে হবে। নিজের অপকর্ম ঢাকতে তিনি এমনটা করেছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে কথা বললে, তারা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান। এ ব্যাপারে লাউথুতি এস.সি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নবীন চন্দ্র বর্মনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে ম্যানেজিং কমিটি কবে গঠন হয়েছে, কবে অনুমোদন হয়েছে এবং কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি ও অভিভাবক সদস্য কারা এসব কোনকিছুরই সদূত্তর দিতে পারেন নি তিনি। এ বিষয়ে সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রহমান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ দেখা দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, সকলের মতামতের ভিত্তিতে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা না হলে সেটা বৈধতা পায় না। আমরা চাই সকলের মতামতের ভিত্তিতে সেখানে একটি সর্বসম্মত ম্যানেজিং কমিটি হোক।