ফ্রান্সের জনগণ প্রথম থেকেই ফরাসি রাজা এবং তাঁর রাজতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত ছিল। ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুন জিরন্ডিন দলের নেতৃত্বে প্রায় ৮ হাজার মানুষের বিশাল মিছিল টুইলারিজ রাজপ্রাসাদ আক্রমণ করে। আক্রমণের ফলে প্রাশিয়ার সেনাধ্যক্ষ ডিউক অব ব্রান্সউইক একটি ঘোষণার মাধ্যমে ফরাসি জাতিকে সতর্ক করেন। তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে, কেউ যদি ফরাসি রাজ পরিবারের কোন ক্ষতি করতে চায় তাহলে তার চরম শাস্তি হবে। কিন্তু মানুষ এই ঘোষণার কোনরূপ প্রতিক্রিয়া না করে অবশেষে ফারসি রাজা ষোড়শ লুই-কে গিলোটিনে হত্যা করেন। নিন্মে ফরাসি রাজা ষোড়শ লুইয়ের মৃত্যুদ- সম্পর্কে আলোচনা করা হল –
রাজতন্ত্রের অবসানের দাবি: ব্রান্সউইকের ঘোষণায় বিপ্লবীরা সন্দেহ করে যে, ফরাসি রাজপরিবার বিদেশের সাথে ষড়যন্ত্র করে দেশীয় বিপ্লবীদের ধ্বংস করতে চায়। এর ফলে সাধারণ মানুষ আরও উন্মত্ত হয়ে ওঠে এবং ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দের ১০ আগস্ট দ্বিতীয়বার রাজপ্রাসাদ আক্রমণ করে। এই ঘটনাকে ঐতিহাসিক লেফেভর ‘দ্বিতীয় ফরাসি বিপ্লব’ বলে অভিহিত করেছেন। এই সময় প্রায় ৮০০ রক্ষীকে বিপ্লবীরা হত্যা করে। এরফলে রাজপরিবার আতঙ্কিত হয় এবং নিকটবর্তী আইনসভা কক্ষে আশ্রয় নিলে উন্মত্ত জনতা আইনসভা আভিযান করে রাজতন্ত্রের অবসানের দাবি জানায়।
রাজার বিচার: ফ্রান্সের উন্মত্ত জনতার চাপে আইনসভা রাজাকে বরখাস্ত করে এবং বিচারের উদ্দেশ্যে তাকে টেম্পল দুর্গে বন্দি করে রাখা হয়। এই সময় রাজার বিচারকে কেন্দ্র করে জিরন্ডিস্ট ও জ্যাকোবিনদের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। জিরন্ডিস্ট দল রাজার মৃত্যুদ-ের বিরোধী ছিল, পরিবর্তে তারা গণভোটের মাধ্যমে রাজার অন্য শাস্তির দাবি জানায়। কিন্তু উগ্র বামপন্থী জ্যাকোবিন দল রাজার মৃত্যুদ-ের জোরালো দাবিতে অনড় থাকে। জ্যাকোবিন নেতা রোবসপিয়ার বলেছিলেন, রাষ্ট্রকে বাঁচাতে গেলে রাজাকে মৃত্যুদ- দিতে হবে। রাজার মৃত্যুদ-: শেষপর্যন্ত সামান্য ভোটের ব্যবধানে জাতীয় আইনসভা রাজার মৃত্যুদ-ের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের ২১ জানুয়ারি ফরাসি রাজা ষোড়শ লুইয়ের গিলোটিনে মু-চ্ছেদ করা হয়। রাজার মৃত্যুর ফলে গোটা ইউরোপ স্তম্ভিত হয়েছিল। মূল্যায়ন: ষোড়শ লুইয়ের মৃত্যুদ- ভবিষ্যতে রাজার ষড়যন্ত্রকে বিনষ্ট করেছিল। বলা যায়, ফ্রান্সের গণনিরাপত্তার জন্যই ষোড়শ লুইয়ের মৃত্যুদ- প্রয়োজন ছিল। এপ্রসঙ্গে ঐতিহাসিক হ্যাজেন বলেছেন, ফরাসি সিংহাসনের তুলনায় রাজা ফাঁসির মঞ্চে বেশি মহান ছিলেন।