মোহাম্মদ নজিবর রহমান সাহিত্যরতেœর (১৮৬০-১৯২৩) অবদান মুসলিম কথাশিল্পী হিসেবে উল্লেখযোগ্য। তিনি সমাজ জীবনের ভাষাচিত্র অঙ্কনে ছিলেন শিল্পকুশলী। নজিবর রহমান তার সাহিত্য সাধনায় ঊনিশ-বিশ শতকের সন্ধিক্ষণে গ্রামীণ সমাজের হিন্দু মুসলমানের মিলিত জীবন চিত্র বিশ্বস্ততার সাথে চিত্রিত করেছেন।
জন্ম ও বংশ পরিচয়: মোহাম্মদ নজিবর রহমান সাহিত্যরতœ বৃহত্তর পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ মহকুমার (বর্তমান জেলা) শাহাজাদপুর (উপজেলা) থানার চরবেলতৈল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। অবিভক্ত ভারতবর্ষের পূর্ববঙ্গের উত্তরাঞ্চলে যমুনার তীরবর্তী নি¤œ সমতল ভূমিবেষ্টিত এই চরবেলতৈল গ্রাম। গ্রামের প্রায় দক্ষিণপার্শ্ব ঘেঁষে বয়ে গেছে হুরাসাগর নামে পরিচিত নদী। বর্তমানে মৃতপ্রায়-ভরাট ক্ষীণস্রোতা এই নদীর সোনার জলে সকালবেলা ঝলমল করে চরবেলতৈল গ্রাম।
নজিবর রহমান অবিভক্ত ভারতবর্ষের ঊনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর সঠিক জন্ম সাল নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। এ সম্পর্কে প-িতবর্গ বিবিধ মত ব্যক্ত করেছেন। মুহম্মদ এনামুল হক উল্লেখ্য করেন, নজিবর রহমানের জন্ম সাল ১৮৭৮। মুস্তফা নূরুল ইসলামও এই মত সমর্থন করেছেন। মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন এবং আ. কা. শ. নূর মোহাম্মদ তাঁর জন্ম সাল ১৮৬০ বলে মত প্রকাশ করেন। মযহারুল ইসলাম এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন : ‘‘যতদূর জানা গেছে কাল নির্ণয়ের স্বপক্ষে তেমন উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ সম্পর্কে যেসব নির্ভরযোগ্য প্রমাণপঞ্জি হস্তগত হয়েছে তার মধ্যে লেখকের আত্মীয়-স্বজনদের মৌখিক বিবরণ ও পত্রাদির একটি বিশেষ মূল্য রয়েছে বলে মনে হয়। এসব প্রামাণিক তথ্যে তার জন্ম বাংলা ১২৬০ থেকে ১২৬৬ সালের মধ্যে বলে বলা হয়েছে। এই বাংলা সালকে খ্রিষ্টীয় অব্দে রূপান্তরিত করে নজিবর রহমানের জন্ম কাল ১৮৫৪ হতে ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী কোন এক সময় বলে ধরে নেয়া হয়েছে। সাহিত্যিক নজিবর রহমানের জন্মস্থান আমার পাশের গ্রামে বসবাসরত হলেও অনেক খোঁজ খবর নিয়ে তাঁর উপযুক্ত জন্ম তারিখ জানা যায়নি। তবে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখক সাহিত্যিকদের আলোচনা টুকুই তুলে ধরা হয়েছে।
তবে গোলাম সাকলায়েন, আনিসুজ্জামান ও আব্দুল কাদির নজিবর রহমানের জন্ম সাল ১৮৬০ উল্লেখ্য করেছেন। নজিবর রহমানের জন্মভিটা চরবেলতৈল গ্রামে গবেষণা তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে সাহিত্যরতেœর ভ্রাতুষ্প্রৌত্র সৈয়দ শুকুর মাহমুদের নিকট হতে অনেকেই দুর্লভ তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। নজিবর রহমানের জন্মসাল সম্বন্ধে তিনি বলেন, ‘নজিবর রহমানের চাচাতো ভাই অর্থাৎ জয়েদউদ্দীনের বড় ছেলে মহিরউদ্দীন বলতেন মিয়া ভাই (নজিবর রহমান) মাঘ মাসের ৮ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। সৈয়দ শুকুর মাহমুদ আরো উল্লেখ্য করেন যে, নজিবর রহমান চাকরি সূত্রে চরবেতৈল ছেড়ে হাটিকুমরূলে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন এবং তার পুত্র-পৌত্র সবাই সেখানেই থাকেন। এর ফলে বিভিন্ন গবেষক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক চরবেলতৈল এলে তিনিই তাদের সহযোগিতা করেছেন। তিনি পারিবারিক সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের উল্লেখ্য করে বলেন, নজিবর রহমান ১৮৬০ সালের ২২ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। বিভিন্ন প-িতদের তথ্যের অভিমত ও সর্বশেষ পারিবারিক সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে নিঃসন্দেহে বলা সঙ্গত যে নজিবর রহমান ১৮৬০ সালের (৮ই মাঘ মোতাবেক) ২২ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন।
নজিবর রহমানের পিতার নাম জয়েনউদ্দিন সরকার ও মাতার নাম সোনাভান বিবি। পিতা-মাতার নামের প্রসঙ্গেও প-িত ও সমালোচকদের দ্বিমত লক্ষ করা যায়। নজিবর রহমানের এক জামাতা (পূর্বে যিনি ছাত্র ছিলেন) বলেছেন- নজিবর রহমানের পিতার নাম জয়েন উদ্দিন সরকার ও মাতার নাম সোনাভান বিবি। সাহিত্যরতেœর জন্মভিটা প্রত্যক্ষ করে, প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ ও বংশলতিকা সূত্রে তাঁর পিতা-মাতার নাম জয়েন উদ্দিন সরকার ও সোনাভান বিবি হিসেবে পাওয়া যায়।
বাল্যকাল ও শিক্ষাজীবন: নজিবর রহমানের বাল্যকাল নগর সভ্যতার সান্নিধ্য-বঞ্চিত গ্রামীণ পরিবেশে অতিবাহিত হয়। জানা যায় বাল্যকাল থেকেই তিনি অত্যন্ত নিরীহ ও শান্ত-শিষ্ট প্রকৃতির ছিলেন। এ কারণে সবাই তাঁকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। নজিবর রহমানের বাল্যকাল সম্বন্ধে তাঁর এক জামাতা (পূর্বে যিনি ছাত্র ছিলেন) বিভিন্ন সময় উল্লেখ্য করেন- ‘‘নজিবর রহমানের স্মরণশক্তি ছিল যেমন প্রখর, লেখাপড়া শিক্ষার প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল তেমনি বেশি। তিনি বাল্যকালে গ্রামের পাঠশালা থেকে বিশেষ কৃতিত্বের সাথে উচ্চ প্রাথমিক পাস করেন এবং কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে জেলাওয়ারী হিসেবে মাসিক তিন টাকা করে সরকারি বৃত্তি লাভ করেন। তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালেই বাড়িতে পিতার নিকটে কুরআন শরীফ পড়া শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন।
গ্রামের পাঠশালা হতে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের পর নজিবর রহমান লেখাপড়া করেন শাহজাদপুরের মধ্যবাংলা ছাত্রবৃত্তি বিদ্যালয়ে, এই ছাত্রবৃত্তি বিদ্যালয় হতে মোহাম্মদ নজিবর রহমান ‘মধ্যবাংলা’ পাস করেন। ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষায় পাস করার পর তাঁর পিতার মৃত্যু হয়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও আর্থিক অনটনে নজিবর রহমানের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বিঘিœত হয়। এমতাবস্থায় পিতৃহীন নজিবর রহমানের পক্ষে উচ্চ শিক্ষা লাভ করা আর সম্ভব হয়নি। বাধ্য হয়ে তিনি মাসিক সাত টাকা বেতনে নিজ গ্রামের পাঠশালায় শিক্ষকতা শুরু করেন। নজিবর রহমান শাহজাদপুরে জায়গীর থেকে লেখাপড়া করতেন। এই জায়গীরদার ভদ্র লোক ছিলেন শাহজাদপুর এন্ট্রাস স্কুলের ফারসি ভাষার শিক্ষক। তাঁর কাছে প্রত্যহ রাতে নজিবর রহমান উর্দু ও ফারসি শিখতেন। এছাড়াও জানা যায়, তিনি স্ব-প্রচেষ্টায় সংস্কৃত ভাষাতেও ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। নজিবর রহমান এরপর জায়গীরদার ভদ্র লোকের সুপারিশক্রমে ঢাকার নবাব স্যার সলিমূল্লাহর (১৮৬৬-১৯১৫) সহায়তায় ঢাকার নর্মাল স্কুলে ভর্তি হন। এ স্কুলের সবাই সরকারি ভাতা পেত এবং নজিবর রহমান হাত খরচের জন্য নবাব কর্তৃক আর্থিক সাহায্য পেতেন। তিনি এ সময় সাহিত্যচর্চায় বেশ সুনামও অর্জন করেন। তৎকালে তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ছোটগল্প, প্রবন্ধ ও ভ্রমণ কাহিনী লিখতেন। সাহিত্যচর্চায় তাঁর পারদর্শিতা ও নর্মাল স্কুলের চূড়ান্ত পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে প্রথম বিভাগে পাস করে ‘সাহিত্যরতœ’ উপাধি লাভ করেন। নর্মাল স্কুল পাস করার পরেই নজিবর রহমানের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপ্তি ঘটে। শিক্ষার প্রতি তীব্র আকর্ষণ ও অতৃপ্ত জ্ঞান-তৃষ্ণার চাহিদা উন্মুক্ত করে দেন তাঁর পিতৃব্য মুন্সী জয়েনউদ্দীন আহমদ। বলা যায় এই গুণীস্বজ্জনের সাহচর্য ও সান্নিধ্য নজিবর রহমানের সাহিত্যিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। নজিবর রহমান তাঁর ‘বাল্যজীবনের শিক্ষার পথ প্রদর্শক’ পিতৃব্যের এ ঋণ কৃতজ্ঞচিত্তে ‘গরীবের মেয়ে’ উপন্যাসে স্বীকার করেছেন।
কর্মজীবন: দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা শেষে ১৯১৭ সনে তিনি হাটিকুমরুলে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেখানেই শিক্ষকতা করেন। নজিবর রহমান সলঙ্গা ত্যাগ করে হাটিকুমরুলে এসেছিলেন ১৯১৭ সালে। তিনি ‘সলঙ্গা মধ্য ইংরেজি বিদ্যালয়টি’ হাটিকুমরুলে স্থান্তরিত করেন এবং হাটিকুমরুলে বিদ্যালয় স্থাপন করে তাঁর চাকরি স্থানান্তরিত করেন। সলঙ্গাতে এখনো নজিবর রহমানের স্মৃতি-বিজড়িত বিদ্যালয়টি রয়েছে। নজিবর রহমান হাটিকুমরুলে একটি বালিকা বিদ্যালয়ও স্থাপন করেন এবং স্ত্রী রহিমা খাতুনকে শিক্ষকতার দায়িত্ব দেন।নজিবর রহমানের কর্মজীবন শুধু শিক্ষকতার মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতিও আগ্রহী ছিলেন। তাঁর ‘আনোয়ারা’ ও প্রেমের সমাধি’ উপন্যাসে চাকরি অপেক্ষা ব্যবসা-বাণিজ্য বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। তাছাড়া তিনি রাজশাহীতে চাকরিকালীন সময়ে তামাক ব্যবসায় লাভবান হয়েছিলেন। পারিবারিক সূত্রে জানা যায় তিনি একজন ভাল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ছিলেন এবং ভাঙ্গাবাড়িতে অবস্থানকালে নিজ অর্থে কুইনাইন ট্যাবলেট কিনে গরীব রোগীদের দিতেন।
বিবাহ ও পারিবারক জীবন: বিবাহ ও পারিবারিক জীবন নজিবর রহমানের দাম্পত্য জীবন সরলরেখায় অগ্রসর হয়নি। নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও স্ত্রী বিয়োগের বিষাদাত্মক পরিস্থিতির মুখোমুখি তিনি দাঁড়িয়েছেন। নজিবর রহমান তাঁর দীর্ঘ জীবনে তিন পুত্র ও চার কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন। তাঁর প্রথম স্ত্রী নিঃসন্তান ছিলেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভে জন্ম গ্রহণ করে আমিনা খাতুন ও গোলাম বতু। গোলাম বতু রাজশাহী কলেজ থেকে বি.এ পরীক্ষা দিয়ে অসুস্থ অবস্থায় বাড়ি এসে রেজাল্ট প্রকাশের পূর্বে (বিশেষ কৃতিত্বের সাথে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন) ১৯২২ সালে অকাল প্রয়াত হন। তৃতীয় স্ত্রীর গর্ভে জন্ম নেয় মীর হায়দার রহমান, জাহানারা খাতুন ও উম্মিশিরি রওশনারা খাতুন। মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও মমতাজ মহল শেষপতœীর গর্ভজাত। নজিবর রহমান শেষ জীবনে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুলে বসতি স্থাপন করেন এবং স্থায়ীভাবে সপরিবারে বসবাস করতে থাকেন।
কাব্যগ্রন্থ, রচনাবলী ও সাহিত্যকর্ম: ‘বাংলা মুসলিম গ্রন্থপঞ্জী’ ও বাংলা ভাষায় মুসলিম লেখক-গ্রন্থপঞ্জী’ সূত্রে জানা যায় নজিবর রহমানের প্রকাশিত গ্রন্থ নয়খানা এবং অপ্রকাশিত পা-ুলিপির সংখ্যা চারটি। নজিবর রহমানের প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো- নাট্যধর্মীঃ বিলাতী বর্জন রহস্য (১৯১৪), উপন্যাসঃ আনোয়ারা (১৯১৪), চাঁদ তারা বা হাসন গঙ্গা বাহমণি (১৯১৮), প্রেমের সমাধি (১৯১৮), পরিণাম (১৯১৮), গরীবের মেয়ে (১৯২৩), ছোটগল্প- আখ্যান : দুনিয়া আর চাই না (১৯২৩)। চাঁদ তারা উপন্যাসে হিন্দু মুসলিম উভয় ধর্মের মহানুভবতার দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন। বঙ্গভঙ্গের পর প্রথম মহাযুদ্ধের উষ্ণ আবহের মাঝে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল নিদর্শন হিসেবে হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে ‘চাঁদ-তারা বা হাসন গঙ্গা বাহমণি’ বাংলার ঘরে ঘরে পঠিত একটি উপন্যাস।
নজিবর রহমানের প্রথম উপন্যাস ‘আনোয়ারা’য় (১৯১৪) এমনি একটি নদীবেষ্টিত গ্রামের বর্ণনা লক্ষ্য করা যায়। নজিবর রহমানের জন্মভিটা প্রত্যক্ষ করার প্রেক্ষিতে বলা যায় এ তথ্য সাদৃশ্যপূর্ণ। ‘আনোয়ারা’ উপন্যাসে লক্ষ্য করা যায় : ‘‘ভাদ্র মাসের ভোরবেলা। স্বর্গের ঊষা মর্ততে নামিয়া ঘরে ঘরে শান্তি বিলাইতেছে। তাহার অমিয় কিরণে মেদিনী-গগন হেমন্তবর্ণে রঞ্জিত হইয়াছে : উত্তরবঙ্গের নি¤œ-সমতল গ্রামগুলি সোনারজলে ভাসিতেছে….’’।
শেষ জীবন: নজিবর রহমানের মৃত্যুসময়ে তাঁর ছাত্র (পরবর্তী কালে জামাতা) পাশে ছিলেন। নজিবর রহমানের মৃত্যুকাল হিসেবে তিনি উল্লেখ্য করেন ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে অক্টোবর তারিখে ৬৫ বছর বয়সে হাটিকুমরুলে স্বীয় বসতবাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৯২৫ সালে নজিবর রহমানের জীবনাবসান সম্বন্ধে মোহাম্মদ মতীয়ার রহমান, আ.ক.শ নূর মোহাম্মদ, নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদ সুফিয়ান ও মুহম্মদ মনসুর উদ্দিন একমত পোষণ করেন। নজিবর রহমানের মৃত্যুর পর কলিকাতা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘ছোলতান’ (নব পর্যায়)-এর ৮ম বর্ষ ২৩ সংখ্যা ৯ কার্তিক ১৩৩০ বঙ্গাব্দ, ২৬ অক্টোবর ১৯২৩ সাল শুক্রবারে (২২ পৃষ্ঠায়) একটি শোক সংবাদ প্রকাশিত হয়। ‘শোক সংবাদটি নি¤œরূপ: পাবনা (বর্তমান সিরাজগঞ্জ জেলা) হাটিকুমরুল নিবাসী কবি মৌলবী নজিবর রহমান সাহেব গত কয়েক মাস নানাবিধ জটিল পীড়ায় আক্রান্ত থাকিয়া গত বৃহস্পতিবার বেলা ৭/৮ ঘটিকার সময় সংসারের সমুদয় মায়া ছিন্ন করত: ইহলোক পরিত্যাগ করিয়া অনন্তধামে চলিয়া গিয়াছেন। উনি একজন প্রসিদ্ধ সাহিত্যিক ছিলেন। তাঁহার রচিত বিলাতী বর্জন রহস্য, আনোয়ারা, হাসন-গঙ্গা-বাহমনি’ গরীবের মেয়ে, মুসলমান সমাজের কতিপয় পাঠ্যপুস্তক রহিয়াছে। ইহার ন্যায় শান্ত, ধীর, উদারচেতা ও বিনয়ী লোক জগতে দুর্লভ বলিলে অত্যুক্তি হয় না। তাঁহার মৃত্যুর সংবাদ শুনিয়া শোক প্রকাশের জন্য অনেক স্কুল, মাদ্রাসা ও মক্তবাদি বন্ধ ছিল।
উল্লেখ্যিত শোক সংবাদ অনুযায়ী নিঃসন্দেহে বলা যায় নজিবর রহমান ১ কার্তিক ১৩৩০ বঙ্গাব্দ হিসেবে ১৯২৩ সালের ১৮ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার সকাল ৭/৮ টায় ৬৩ বৎসর বয়সে পরলোক গমন করেন। সমাজ সচেতন সাহিত্যশিল্পী মোহাম্মদ নজিবর রহমানকে তাঁর হাটিকুমরুলস্থ বসত বাড়ির উত্তর-পশ্চিম কোনায় সমাধিস্থ করা হয়। আত্মপ্রচার বিমুখ সমাজ দরদী কথাশিল্পী নজিবর রহমানের সমাধির ভগ্ন প্রাচীরের কয়েকটি ইট এখনো অরক্ষিত অনাদৃত অবস্থায় শেষচিহ্ন বহন।