নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও হাতিয়া উপজেলা এবং চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলায় এবার পরীক্ষামূলক আবাদে খরা সহিষ্ণু, স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন ও উচ্চ ফলনশীল আউশ ধানের জাত বিনাধান-১৯ প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ফলন দিয়েছে। এ জাতের ধান প্রতি হেক্টরে গড়ে ৫.৩১ মেট্রিক টন উৎপাদিত হয়েছে। গত ১৬ আগষ্ট নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর উপজেলার চরক্লার্ক ইউনিয়নের কেরামতপুর গ্রামের কৃষক বেলালের জমিতে উৎপাদিত বিনাধান-১৯ কেটে পরিমাপ করে মাঠ দিবস থেকে বিনার বিজ্ঞানী, কৃষি সম্প্রসারণবিদ ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এ তথ্য জানান। এ জাতের ধান চাষে সার ও বালাইনাশক সাশ্রয় হয়। খরা সহিঞ্চু ও স্বল্প জীবনকালের এ ধান পরিবর্তিত জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবেলা করে বাম্পার ফলন দিয়েছে বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। সুবর্ণচরে অবস্থিত বিনা উপকেন্দ্র সূত্র জানিয়েছে, চলতি আউশ মৌসুমে বিনা উপকেন্দ্র, নোয়াখালীর মাধ্যমে নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম জেলায় মোট ২২০ একর জমিতে এ ধানের আবাদ করে কৃষক। প্রথমবার আবাদ করেই দুই জেলার কৃষক বাজিমাত করেছেন। সুবর্ণচরের কেরামতপুর গ্রামে ১২০ জন কৃষক এ ধান চাষ করেছে ১২০ একর জমিতে। এ গ্রামের কৃষক বেলাল উদ্দিন, সোহাগ, সেকান্তর, মফিজ মিয়া ও চাঁন মিয়াসহ শতাধীক কৃষক বলেন, বিনা উপকেন্দ্র নোয়াখালী আমাদেরকে বীজ, সার, বালাইনাশক বিনামূল্যে দিয়েছেন। তাঁদের পরামর্শে এ জাতের ধান চাষে সেচসহ অন্যান্য খরচ খুবই কম লেগেছে। স্থানীয় ও অন্যান্য আউশ ধানের তুলনায় এ ধান অনেকগুন বেশি ফলন দিয়েছে। এ জাতের ধান সরু। তাই বাজারে বেশি দাম পেয়ে আমরা আরো বেশি লাভবান হবো বলে আশা করছি। তারা আরও জানান, বিনার বিজ্ঞানীদের পরামর্শে আমরা এবার নিজেরা বীজ সংরক্ষণ করে তা দিয়ে আগামী বছর চাষ করবো এবং পুরো নোয়াখালীতে এই ধানের চাষাবাদ সম্প্রসারণে অন্যান্য কৃষকদেরকে সহযোগীতা করব। তারা আরও জানান, আগে তারা শুধু মাত্র দুই মৌসুমে ধান চাষ করতো। কিন্তু এখন বিনার সহযোগীতায় তারা তিন মৌসুমে বিনাধান-১৯সহ তিন ধরনের ধান চাষ করার সুযোগ পেয়েছে। গত এক যুগ ধরে কৃষকেরা বোরো ধান চাষের পরে তাদের জমি গুলো পতিত অবস্থায় ফেলে রাখতো। এখন বিনার সহযোগীতায় পতিত জমিতে চাষাবাদ করতে পেরে তারা ভীষন খুশি। বিনা উপকেন্দ্র, নোয়াখালীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শেফাউর রহমান বলেন, আগামীতে আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জলাবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকবেলা করা। সে জন্য আমাদের বিজ্ঞানীরা সময়োপযোগি বিভিন্ন ফসলের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করছেন। খরা সহিষ্ণু, স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন ও উচ্চ ফলনশীল আউশ ধানের জাত বিনাধান-১৯ আবাদ করে কৃষকরা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন পেয়েছে। এখন বিনা প্রশাসনকে অনুরোধ করবো বিএডিসি’র মাধ্যমে এ জাতের বীজ অধিক পরিমাণে উৎপাদন করে ডিএই’র মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে। বিনাধান-১৯ এর উদ্ভাবক বিশিষ্ট পরমাণু কৃষি বিজ্ঞানী এবং বিনার সুযোগ্য পরিচালক প্রশাসন ও সাপোর্ট সার্ভিস ড. মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ধান চাষে পানির অপচয় রোধ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। তাই কম সেচে আবাদযোগ্য আউশ মৌসুমে বিনাধান-১৯ এর আবাদ সম্প্রসারণ করতে হবে। বিনাধান-১৯ পরিবর্তিত জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবেলা করে কাঙ্খিত ফলন দিতে সক্ষম। সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, বোরো মৌসুমে সেচ কাজে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করা হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে পানির অপচয় হয়। ফলে পরিবেশে বিপর্যয় নেমে আশার আশঙ্কা রয়েছে। পরিবেশ রক্ষা ও জলাবায়ুর ঝুঁকি মোকাবেলায় পানি সাশ্রয়ী আউশ ও আমন মৌসুমের বিভিন্ন জাতের ধানের আবাদ সম্প্রসারিত করতে সরকার কৃষককে উদ্ধুদ্ধ করছে। বিনাধান-১৯ জাতের ধান পরিবেশ বান্ধব। এ ধানের আবাদ বৃদ্ধি পেলে ধানের উৎপাদন বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে এবং এ অঞ্চলসহ সারাদেশে শস্য নিবিড়তা বৃদ্ধি পাবে। বিনার বিজ্ঞানীরা বিনাধান-১৯’র সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কাজ করার আহবান জানান। তারা আরোও জানান, এক্ষেত্রে যাবতীয় সহযোগীতার প্রয়োজন হলে বিনা উপকেন্দ্র সকল কৃষকের পাশে থাকবে সব সময় । অন্যদিকে কৃষকসহ অন্যান্য অংশীজনদের বিনাধান-১৯সহ বিনা উদ্ভাবিত অন্যান্য কৃষক বান্ধব প্রযুক্তিসমুহ সম্প্রসারণের মাধ্যমে চাষের প্রতি আগ্রহী করানোর জন্য সকলকে আহবান জানান। কৃষকরা বলেন, করোনার মধ্যেও জীবনের ঝুঁকি উপেক্ষা করে বিনা উপকেন্দ্র নোয়াখালীর বিজ্ঞানীগণ নিবিড়ভাবে কৃষকদের পাশে থেকে সহযোগিতার ফলে আমরা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন পেয়েছি। বারটানের নোয়াখালী কার্যালয়ের অফিস প্রধান ড. মোহাম্মদ জহির উল্যাহ (এসএসও) বলেন, আউশ মৌসুমে বিনাধান-১৯ এর যে ফলন পাওয়া গেল তা এ মৌসুমে অন্য জাতের ধানের তুলনায় অনেক বেশি। যেহেতু বাংলাদেশের মানুষ শর্করার উৎস হিসাবে ভাত বেশি খায়, তাই ভাত খাওয়ার সময় প্লেটের অর্ধেক পরিমাণ ভাত নিয়ে বাকি অর্ধেক শাক, মিশ্র সবজি, ঘন ডাল, আমিষ (মাছ/মাংশ/ডিম) দ্বারা পূর্ণ করতে হবে। এতে সুষম পুষ্টি পাওয়া যাবে। যতটা সম্ভব ধানকে মেশিনে কম পরিষ্কার করা উচিত। এতে ধানের খোসার নীচে চালের গায়ে বিদ্যমান ভিটামিন, খাদ্য আঁশ ও তেল অক্ষুন্ন থাকবে। এ চাল খেতে পারলে শরীরের কোষ্টকাঠিন্য দূর হবে। ঘুমানোর তিন ঘণ্টা পূর্বে রাতের খাবার খেয়ে নেয়া উচিত।