শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
খেলাধুলার মাধ্যমে মাদককে সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে হবে-মাফরুজা সুলতানা মাইলস্টোন কলেজে নবম শ্রেণির বালিকাদের অংশগ্রহণে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত বিদেশি প্রভুদের নিয়ে বিতাড়িত স্বৈরাচার ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে: তারেক রহমান সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সুপারিশ  ‘বিবেচনায় রয়েছে’: বদিউল আলম ১৬ বছর বঞ্চিতদের এবার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বইমেলয় স্টল বরাদ্দের দাবি ইসির অগাধ ক্ষমতা থাকলেও প্রয়োগে সমস্যা ছিল: বদিউল আলম আমাদের শিক্ষা কর্মসংস্থান খোঁজার মানুষ তৈরি করছে, যা ত্রুটিপূর্ণ: প্রধান উপদেষ্টা সেন্টমার্টিন: ‘স্থানীয়দের জীবিকা বনাম পরিবেশ রক্ষা’ আ. লীগ-জাপা নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাবিতে কফিন মিছিল ১৫ বছরের জঞ্জাল সাফ করতে সময় লাগবে: মির্জা ফখরুল

শিক্ষার্থীরা কেন আত্মহত্যা করছে

মুনশী আবদুল মাননান
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

আত্মহত্যা মানবজাতির অতি পুরাতন সমস্যাগুলোর একটি। কবে, কখন প্রথম আত্মহনের ঘটনা ঘটেছিল, সেটা সঠিক ও সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব নয়। বিশ্বের এমন কোনো দেশ ও জনপদ নেই, যেখানে অতীতে আত্মহনের প্রবণতা বা আত্মহত্যা দেখা যায়নি। আর এখন তো বিশ্বব্যাপী আত্মহত্যার প্রতিযোগিতা চলছে বলেই মনে হয়। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশনের (আইএএসপি) মতে, প্রতি বছর বিশ্বে ৭ লাখ ৩ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হিসাবে, এ সংখ্যা প্রায় ৮ লাখ। মানুষের সভ্যতা-সংস্কৃতি, শিক্ষা-বিজ্ঞান, দর্শন-শিল্পকলা ইত্যাদির অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হওয়ার পরও নিজেই নিজের জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটানোর প্রবণতা কেন বাড়ছে, কেন আত্ম-বিনাশকারীর সংখ্যা বাড়ছে, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। বাংলাদেশ আত্মহত্যাপ্রবণ একটি দেশ। অতীতের চেয়ে এখন প্রতি বছর আত্মহত্যার প্রবণতা ও আত্মহত্যার সংখ্যা বেশি হতে দেখা যাচ্ছে। একাধিক গবেষণা থেকে জানা যায়, গত ৬ বছরে অন্তত ৭০ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) আত্মহত্যার বছরওয়ারী পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০১৬ সালে ১০ হাজার ৭৪৯ জন, ২০১৭ সালে ১০ হাজার ২৫৬ জন, ২০১৮ সালে ১১ হাজার জন, ২০১৯ সালে ১০ হাজারের বেশি জন, ২০২০ সালে ১৪ হাজার ৪৩৬ জন এবং ২০২১ সালে ১১ হাজারের বেশি জন আত্মহত্যা করেছে। গত বছরের হিসাব না পাওয়া গেলেও আন্দাজ করা যায়, উল্লেখিত কোনো বছরের চেয়েই এ সংখ্যা কম হবে না। সব বয়সী মানুষকেই আত্মঘাতী হতে দেখা যায়। কিশোর-কিশোরী থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা কেউই বাদ যায় না। সাম্প্রতিককালে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা অধিক বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তবে কতজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার শিকার হচ্ছে তার নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। সম্প্রতি আঁচল ফাউন্ডেশন নামের একটি বেসরকারি সংস্থা শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার বিষয়ে একটি তথ্য-পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। ‘স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা, সমাধান কোন পথে’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২২ সালে ৪৪৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এর মধ্যে স্কুল ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থী রয়েছে ৩৪০ জন, কলেজ ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থী রয়েছে ১০৬ জন এবং মাদরাসার শিক্ষার্থী রয়েছে ৫৪ জন। আঁচল ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ। সংস্থাটি আমাদের দেশ ও সমাজের একটি উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরেছে। বিষয়টিকে একটি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং সমস্যার সমাধানে কিছু করণীয় নির্দেশ করেছে। লক্ষণীয়, আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে মেয়ে বা নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি, ৬৩ দশমিক ৯০ শতাংশ। আরো দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী শিক্ষার্থী, যাদের সংখ্যা ৪০৬ জন (মোট আত্মহত্যাকারীর ৭৬ দশমিক ১২ শতাংশ)। কী কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে সেটা জরুরি ভিত্তিতে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি বা আত্মহত্যার সংখ্যা বৃদ্ধির মধ্যে দেশ ও সমাজের জন্য একটা বিশেষ বার্তা আছে। সেটি হলো, শিক্ষার্থীরা ভালো নেই। কেন ভালো নেই কিংবা কীভাবে তাদের ভালো রাখা যায়, সেটা জানা ও দেখা দেশ ও সমাজের আবশ্যিক কর্তব্য বটে। শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রধান কারণ অর্থাৎ কী কী কারণে শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যায় প্ররোচিত হয়েছে এবং আত্মহনের পথ বেছে নিয়েছে, আঁচল ফাউন্ডেশনের তরফে তা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মান-অভিমানের কারণে আত্মহত্যা করছে। আরো একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যা করেছে। পরীক্ষায় যারা অকৃতকার্য হয়েছে, তাদের একটি অংশও আত্মহত্যা করছে। কয়েক জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে শিক্ষকদের দ্বারা অপমানিত হয়ে। চারজন আত্মহত্যা করেছে ফেসবুকে আপত্তিকর ছবি দেয়ার কারণে। এ ছাড়া অতি তুচ্ছ ও অনেকের দৃষ্টিতে হাস্যকর কারণেও কেউ কেউ আত্মহত্যা করেছে। যেমন কেউ গেম খেলতে বাধা দেয়ায়, কেউ মোবাইল ফোন কিনে না দেয়ায়, কেউবা মোটরসাইকেল কিনে না দেয়ায় আত্মহত্যা করেছে। বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতে, সন্তানদের যথাযথভাবে দখভাল করা মা-বাবার অপরিহার্য কর্তব্য হলেও অনেক মা-বাবা সেটা করে না বা করতে পারে না। ক্যারিয়ার গঠন কিংবা অর্থ রোজগারের নেশায় তারা সর্বদা ব্যস্ত থাকে। মা-বাবার ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হয়ে সন্তান-সন্ততি একাকী বোধ করে। অনেকে অসহায় ও অনিরাপদ ভাবতে থাকে নিজেদের। বিভিন্ন ধরনের নেশা বা অনাচারেও কাউকে কাউকে লিপ্ত হতে দেখা যায়। এ সময় শিক্ষার্থীদের উত্তম সঙ্গ ও সহায়তা দিতে পারে শিক্ষকরা। এ থেকেও তারা বঞ্চিত। আগের মতো শিক্ষক-শিক্ষার্থী সুসম্পর্ক নেই প্রায় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই। বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে-মেয়ের মধ্যে নানা প্রবণতা ও অবস্থা তৈরি হয়। এ সময় মা-বাবা, পরিবারের সদস্য ও শিক্ষকদের সান্নিধ্য ও কথাবার্তা তাদের অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে পারে। বলা হয়, শিশুকালে সন্তানের মা-বাবাই সবচেয়ে বড় বন্ধু। আর কৈশরে বন্ধু শিক্ষকরা। এই দুই অতিপ্রয়োজনীয় বন্ধুর নৈকট্য, ¯েœহ, ভালোবাসা, উপদেশ-পরামর্শ থেকে শিক্ষার্থীদের একাংশ বঞ্চিত। শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা দমাতে মা-বাবা ও শিক্ষকদের ভূমিকাকে ইতিবাচক করার বিকল্প নেই। তাদের উভয়ের মধ্যকার সম্পর্ক হতে হবে ঘনিষ্ঠ, শ্রদ্ধাপূর্ণ ও বন্ধুসুলভ। এছাড়া বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সন্তানের মানবিক বিকাশ ত্বরান্বিত করতে প্যারেন্টিং খুবই কার্যকর, যা এখন নেই বললেই চলে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীদের আচার-আচরণ যান্ত্রিক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, যা তাকে মানবিক পর্যায়ে উন্নত করতে হবে।
খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার সুযোগ সৃষ্টি ও বৃদ্ধি ইতিবাচক প্রবণতা তৈরিতে ভালো ভূমিকা রাখতে পারে। আত্মহত্যার জন্য একাকিত্ব, বঞ্চনা, হতাশা, জীবন সম্পর্কে উদ্দীপক মনোভাবের অভাব ইত্যাদি দায়ী। জীবন যে সবচেয়ে প্রয়োজনীয়, সবচেয়ে দামি, আল্লাহর শ্রেষ্ঠতম নেয়ামত এসব বিষয়ে প্রকৃষ্ট ধারণা থাকলে কারো পক্ষে আত্মহননের পথ নির্বাচন করা কখনোই সম্ভব হতে পারে না। ধর্মীয় শিক্ষা, মহান ব্যক্তিদের জীবনীসহ উপযুক্ত গ্রন্থাদি পাঠ, উত্তম চরিত্রের মানুষের সান্নিধ্য ও অনুসরণ সকল প্রকার অপপ্রবণতা ও কুচিন্তা থেকে মানুষকে সুরক্ষা দিতে পারে। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এক সময় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক ছিল। ধর্মচর্চার অনুকূল পরিবেশ ছিল। ইতোমধ্যে স্কুল-কলেজ থেকে ধর্মীয় শিক্ষা বাদ দেয়া হয়েছে। সমাজে ধর্মীয় পরিবেশের অবনতি ঘটেছে। সাধারণত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষা লাভ করে। তারা অনেক কিছুই পড়ে, ধর্মীয় শিক্ষা বাদে। আগে পাঠ্য বিষয়ের মধ্যে ধর্মের প্রবর্তক, নবী-রাসূল (সা.)-এর জীবনী ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, মহান নেতা, কর্মবীর-দানবীরদের কর্ম ও অবদান সম্পর্কে পড়ানো হতো। এখন এসব বিষয় বাদ দেয়া হয়েছে। ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী ধর্মীয় মূল্যবোধহীন, আদর্শহীন ও ব্যক্তিত্বহীনভাবে বেড়ে উঠছে। স্বাভাবিকভাবেই তাদের একাংশ নিরালম্ব হয়ে আত্মহত্যার প্রবণতার ফাঁদে পড়ছে এবং নিজে জীবনকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে।
শিশু-কিশোর ও তরুণ-যুবা বয়সীরা জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। তারাই রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, বৈজ্ঞানিক, সাংস্কৃতিক, কর্মকা-সহ সকল ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবে। তাদেরই একাংশ যদি আত্মহত্যাপ্রবণ, হতাশ, হঠকারি মনোভাবসম্পন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে বেড়ে ওঠে, বেঁচে থাকে কিংবা আত্মহত্যা করে জীবন বিসর্জন দেয়, তাহলে জাতির ভবিষ্যৎ কী? সরকারের ভাষায়, দেশে উন্নয়নের জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। একের পর এক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। দেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটছে। প্রশ্ন উঠতে পারে, যাদের জন্য এই উন্নয়ন প্রয়াস, সেই নতুন প্রজন্ম যদি হতাশা, নিরাশা, অথর্ব, আত্মবিনাশী হয়ে উঠে তবে এই উন্নয়ন-উত্তরণ দিয়ে কী হবে? এটি একটি গুরুতর প্রশ্ন। এ প্রশ্নের উত্তর রাষ্ট্র পরিচালক, শিক্ষাবিদ ও সচেতন শিক্ষিত নাগরিকদেরই দিতে হবে।
আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মান বোধসম্পন্ন ও আত্মসচেতন কারো পক্ষে আত্মহত্যা করা সম্ভব নয়। আল্লাহর ওপর নিঃশর্ত আত্মসমর্পিত কোনো ব্যক্তি অতি দুর্ঘট পরিস্থিতিতেও আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় আনতে পারে না। ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মহত্যা মহাপাপ। অন্যান্য ধর্ম মতেও তাই। ইসলামে হত্যা ও আত্মহত্যা নিষিদ্ধ ও গুরুতর অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত। প্রথম মানব হযরত আদম (আ.)-এর দুই পুত্র কাবিল-হাবিলের দ্বন্দ্বের পরিণতিতে মানব ইতিহাসে প্রথম হত্যাকা- সংঘটিত হয়। কাবিল হাবিলকে খুন করে। এ ঘটনা উল্লেখ করে আল্লাহ পাক বনি ইসরাইলের জন্য এই বিধান দেন যে: নরহত্যা ও ধ্বংসাত্মক কাজের জন্য কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন পৃথিবীর সকল মানুষকেই হত্যা করল। আর কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করল সে যেন পৃথিবীর সকল মানুষের প্রাণ রক্ষা করল। (সূরা মায়িদা, আয়াত ৩২)। উল্লেখ্য, শুধু বনি ইসরাইল নয়, সমগ্র মানবম-লীর জন্যই আল্লাহর এ বিধান প্রযোজ্য। হত্যা ও আত্মহত্যার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। কাউকে হত্যা করা আর নিজে আত্মহত্যা করা একই বরাবর। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, হত্যা করার প্রবণতা যাদের মধ্যে আছে তারাই আত্মহত্যা করে। অন্যের ঘাতক ও আত্মঘাতক উভয়ই সমান। আমাদের দেশসহ বহু দেশে আত্মহত্যা হত্যাপরাধের সঙ্গে তুল্য। হত্যাকারী সমুচিত সাজা প্রাপ্ত হয় আর আত্মহত্যকারী জীবিত না থাকায় সাজা পায় না, পার্থক্য কেবল এটুকু। ইসলামের দৃষ্টিতে জীবনের মালিক আল্লাহ। তারই ইচ্ছায় ও নির্দেশে জীবনের ইতি ঘটে। তাই আল্লাহর দান জীবনকে আত্মহত্যার মাধ্যমে বিনাশ করার অধিকার ও এখতিয়ার কারো নেই, থাকতে পারে না। মহানবী (সা.) বলেছেন: তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের মধ্যে এক ব্যাক্তি আহত হয়েছিল, তীব্র ব্যথায় বিচলিত হয়ে সে ছুরি দিয়ে নিজের হাত কেটে ফেলে। ফলে এত রক্ত পড়ে যে, সে মারা যায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, আমার বান্দা নিজেকে ধ্বংস করতে জলদি করেছে, তাই তার প্রতি আমি জান্নাত হারাম করে দিয়েছি। বোখারি-মুসলিম। মহানবী সা. আরো বলেছেন, যে আত্মহত্যা করে তার পরকালীন শাস্তিÍ, অনন্তকাল সে নিজেকে হত্যা করতে থাকবে। আর সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে। আবু হোরায়রা বর্ণিত এক হাদিসে আছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজের গলা নিজে চিপে প্রাণ হরণ করে সে জাহান্নামেও নিজের গলা চিপে ধরবে। আর যে বর্ম দ্বারা আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামেও নিজেকে বর্ম দ্বারা আঘাত করতে থাকবে। বোখারি। ইসলামের এই সতর্কবাণী বা হুঁশিয়ারি যে অবগত হয়েছে, শাস্তির ভয়ঙ্করতা উপলব্ধি করেছে, জীবনের অনন্ত পরিণতির কথা শুনতে পেরেছে, তার পক্ষে আত্মহত্যা করা কীভাবে সম্ভব? ঈমান আত্মহত্যার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক। পরিবারে ও শিক্ষায়তনে যারা ঈমান অর্জনের শিক্ষা পেয়েছে ও অর্জন করেছে, তারাই নিজেদের অবস্থান উন্নীত করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, শিক্ষার্থীসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধির মৌলিক কারণ ঈমানের দুর্বলতা এবং পারিবারিক, সামাজিক, মূল্যবোধের শোচনীয় অবক্ষয়। তাই আত্মহত্যা রোধের কার্যকর উপায় হলো, ঈমান সুদৃঢ় করার শিক্ষা, ইসলামী মূল্যবোধের চর্চা পারিবারিক-সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ নিশ্চিত করা। আমাদের শিক্ষব্যবস্থার ইসলামী শিক্ষার পুনঃপ্রতিষ্ঠা এই প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত জরুরি। এটা খুবই উদ্বিগ্ন ও বিচলিত হওয়ার বিষয় যে, শতকরা ৯২ ভাগ মুসলমানের এই দেশে আত্মহননেচ্ছা ও আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেখানে ইসলামে মৃত্যু কামনা করা পর্যন্ত নিষিদ্ধ, সেখানে মানুষ আত্মহত্যা করে কীভাবে? ইসলামের অনুশাসন পুরোপুরি অনুসরণ ও মেনে চলার মধ্যে এ সমস্যার সমাধান বিদ্যমান রয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com