ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনজীবীরা সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে আদালতে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে জেলা সার্কিট হাউসে জেলা জজ ও আইনজীবীদের সঙ্গে সভা শেষে তিনি একথা বলেন। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সোমবার থেকে আইনজীবীরা আদালতে যাবেন।’ এসময় মন্ত্রীকে আইসিটি আইনে রংপুরের সময় টিভির সাংবাদিককের মামলার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি এ ব্যাপারে জানেন না বলে জানান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানবীর ভূঞা বলেন, ‘মন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের সভা ফলপ্রসূ হয়েছে। মন্ত্রী আমাদের টিনসেট ভবনটি দ্রুত বিল্ডিং করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’ আদালতের যাওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমরা আগামীকাল (সোমবার) সাধারণ সভায় বসবো। সেই সভা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে আদালতে যাওয়ার বিষয়ে।’ বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, আইনসচিব গোলাম সারোয়ার, জেলা জজ শারমিন নিগার, জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের-৩ বিচারক রবিউল হাসান, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ নজরুল ইসলাম, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আল আমিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানভীর ভূঞা, সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, সাবেক সভাপতি শফিউল আলম ও নাজমুল হোসেন, আইনজীবী মাহবুব আলম প্রমুখ।
বৈঠকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতের অচলাবস্থা নিরসনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
প্রসঙ্গত, শীতকালীর ছুটির আগে গত ১ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতের শেষ কার্যদিবস ছিল। ওই দিন তিনটি মামলা না নেওয়ায় ১ জানুয়ারি থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জন শুরু করেন আইনজীবীরা। ২ জানুয়ারি বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের সঙ্গে আইনজীবীদের বাদানুবাদের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে বিচারকের সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগে গত ৪ জানুয়ারি আদালতের কক্ষ ও প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে একদিনের কর্মবিরতি ও মানববন্ধন পালন করে জেলা বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন। এ ঘটনার পর গত ৫ জানুয়ারি থেকে পুরো আদালত বর্জনের কর্মসূচি শুরু করেন আইনজীবীরা। তারা জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের অপসারণ ও জজ আদালতের নাজির মমিনুল ইসলামের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরনের অভিযোগে সভাপতিসহ তিন আইনজীবীকে ১৭ জানুয়ারি উচ্চ আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। এছাড়াও আন্দোলন চলাকালে জেলা ও দায়রা জজের বিরুদ্ধে অশালীন স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে গত ১১ জানুয়ারি ২১ আইনজীবীকে হাইকোর্টে তলব করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে গত ১২ জানুয়ারি রাতে ঢাকায় আইনমন্ত্রীর বাসভবনে বৈঠক করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারা।
বৈঠকে আইনমন্ত্রী আইনজীবীদের তিনটি দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে আদালতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আইনজীবীরা। মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ২৪ জানুয়ারির মধ্যে জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের অপসারণ ও জজ আদালতের নাজির মমিনুল ইসলামের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে গত ১৫ জানুয়ারি থেকে দুই আদালত ব্যতীত (জেলা জজ শারমিন নিগার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ ফারুকের আদালত) সব আদালতে ফিরে যান আইনজীবীরা। এতে আদালতের অচলাবস্থা দূর হয়। গত ২৪ জানুয়ারির মধ্যে আইনজীবীদের দাবি পূরণ না হওয়ায় তারা ওইদিন বিশেষ সাধারণ সভা করে তাদের কর্মসূচী ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন। ৩০ জানুয়ারি মধ্যে দাবি পূরন না হওয়ায় আইনজীবীরা কর্মসূচী ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন। গত মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) আইনজীবীরা তাদের দাবি পূরণ না হওয়ায় বিশেষ সাধারণ সভা করে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব আদালত বর্জনের ঘোষণ দেন। এদিকে এক মাসের বেশি সময় ধরে আইনজীবীদের আদালত বর্জনের ফলে শত শত বিচারপ্রত্যাশী সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন।