ভেপিংয়ের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো বিভিন্ন সংগঠন ও এনজিও প্রায় সময় যুক্তি হিসেবে ভেপিংয়ের কারণে ক্যানসার এবং হৃদরোগ হয় এমন গবেষণার তথ্য হাজির করেন। কিন্তু যখন প্রশ্নবিদ্ধ গবেষণা পদ্ধতি এবং সুনির্দিষ্ট ফলাফল না পাওয়ায় বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক জার্নাল এই গবেষণাগুলো প্রত্যাহার করে নেয়া হয় তখন তারা এই বিষয় কোন প্রকার মন্তব্য করেন না বরং নীতিনির্ধারকদের ভুল তথ্য দিয়ে ভেপিংকে ব্যান করতে উদ্বুদ্ধ করছে। এই ধরণের স্বার্থান্বেষী প্রচারণা জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি হুমকি এবং প্রধানমন্ত্রীর ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার পরিপন্থী। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। ধূমপান ছাড়ার ক্ষেত্রে ভেপিং সবচেয়ে সহায়ক মাধ্যম, বিশ্বের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এমন তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার পরও, ভেপিং-বিরোধী সংগঠন ও এনজিও তাদের প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে। তাদের দাবি, ভেপিংয়ের কারণে ক্যানসার ও হার্ট অ্যাটাক ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় । কিন্তু দুটি প্রধান গবেষণা যা এই দাবিগুলির উৎস ছিল আন্তর্জাতিক প্রকাশনা জার্নালগুলি মারাত্মক বেশ কিছু ত্রুটির জন্য এই গবেষণাগুলো প্রত্যাহার করা সত্ত্বেও ভেপিং এর বিরুদ্ধে থাকা সংগঠন ও এনজিওগুলো এই নিয়ে কোন কথা বলছে না বরং চেষ্টা করছে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে। হৃৎপি-ের কোনো অংশে রক্তের প্রবাহ হ্রাস পাওয়া বা থেমে যাওয়ার (মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন) সঙ্গে ভেপিংয়ের সম্পর্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে একটি গবেষণা করা হয়। দেশটির প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের ওপর পরিচালিত গবেষণাটি ২০২০ সালে জার্নাল অব আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনে প্রকাশিত হয়েছিল এবং তাতে বলা হয়েছিল নিয়মিত কিংবা অনিয়মিত ভেপিং ব্যবহার মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন হওয়ার ঝুঁকির সাথে যুক্ত। তবে পরবর্তীতে জার্নাল কর্তৃপক্ষ গবেষণাটি প্রত্যাহার করে নেয়, কারণ এতে প্রাপ্ত তথ্য নির্ভরযোগ্য নয়।
প্রত্যাহার সংক্রান্ত এক বার্তায় জার্নাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, “গবেষণা পর্যালোচনার (চববৎ জবারব) সময় পর্যালোচনাকারী বিশেষজ্ঞরা গবেষকদের কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন করে যেমন, গবেষণায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন কী ভেপিং ব্যবহার শুরু আগে হয়েছে, নাকি পরে? ” অর্থাৎ ধরুন একজন ব্যক্তি যার ভেপিং ব্যবহারের আগেই মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বা হৃদরোগ হয়েছিল, কিন্তু যখন সেই ব্যক্তি গবেষণার জন্য সার্ভেতে অংশ নেয় শুধু বলেন যে তিনি ভেপিং ব্যবহার করেন এবং তার পূর্বে একবার হৃদরোগ হয়েছিল এবং এর ভিত্তিতে গবেষকরা ধরে নেয় তার হৃদরোগ ভেপিং কারণেই হয়েছে যা একটি মারাত্মক ভুল।
বার্তায় বলা হয়, “গবেষকদের কাছে এর স্পষ্ট ব্যাখা চাওয়া হয়েছিল। তবে পিয়ার রিভিউয়ারদের অনুরোধে সাড়া দেননি গবেষণকেরা। পর্যালোচনকারীদের যেই অংশগুলো নিয়ে প্রশ্ন ছিল সেগুলো নিয়ে সঠিক ব্যাখ্যাও দেননি।”পর্যালোচনার সময় সামনে আসা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের কোনো জবাব ও বিস্তারিত বিশ্লেষণ না পাওয়ায় জার্নাল কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে গবেষণাটি প্রত্যাহার করে নেয়। এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও দক্ষিণ কোরিয়ায় তামাকের ক্ষতিহ্রাস নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর জোট দ্য কোয়ালিশন অব এশিয়া প্যাসিফিক ট্যোবাকো হার্ম রিডাকশন অ্যাডভোকেটও (সিএপিএইচআরএ) জানিয়েছে, “ত্রুটিপূর্ণ গবেষণার কারণে এই গবেষণাটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু গবেষণাটি এখনো ভেপিংয়ের বিরুদ্ধে প্রচারণা এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ট্যোবাকো কন্ট্রোলের নির্দেশিকায়ও ব্যবহার করা হচ্ছে। ”
এমনি আরো একটি ভেপিং বিরোধী গবেষণা যেখানে ভেপিং ব্যবহারকারীদের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ২০২২ সালে ওয়ার্ল্ড জার্নাল অব অনকোলজিতে প্রকাশিত হয়েছিল। তবে গবেষণা পদ্ধতিতে ক্রটি থাকায় পরবর্তীতে তাও প্রত্যাহার করে নেয় জার্নাল কর্তৃপক্ষ। ক্রিস স্নোডন, যিনি বহুবছর ধরে তামাকের ক্ষতিহ্রাস নিয়ে কাজ করছেন, তিনি এই গবেষণায় পরিসংখ্যানগত বড় ধরনের ত্রুটি খুঁজে পেয়েছেন। নিজের ব্লগে প্রকাশিত এক লেখায় স্নোডন বলেন, “নিবন্ধটি পরিসংখ্যান ও উপাত্তগত বিশ্লেষণের ক্রটির একটি উল্লেখ্যযোগ্য উদাহরণ হয়ে থাকেবে। এই গবেষণায় যেইভাবে উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে সেইভাবে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে গবেষণায় অংশ নেয়া ব্যক্তির বার্ধক্যে পৌঁছানো বা মারা যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।”স্নোডন তার ব্যক্তিগত ব্লগে লেখেন, “এই ধরনের ত্রুটি গবেষণার সময় হতেই পারে। তবে ভেপিং নিয়ে কাজ করা গবেষকদের উচিত ছিল এই ত্রুটির ব্যাপারে সতর্ক থাকা।”
গবেষণাটি নিয়ে স্নোডনেরর পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন জার্নাল কর্তৃপক্ষকে গবেষণাটি পূর্ণমূল্যায়ন করতে উদ্বুদ্ধ করে। ওয়ার্ল্ড জার্নাল অব অনকোলজি পরবর্তীতে আলোচ্য গবেষণাটি প্রত্যাহার করে জানায়, “গবেষণার পদ্ধতি, পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ, উপাত্তের উৎস, এবং গবেষণার ফলাফলে বিশ্লেষণের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আসার পর সেগুলো গবেষকদের নজরে আনা হয়। তাদের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। কিন্তু গবেষকেরা কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা বা সদুত্তোর দিতে পারেননি। ফলে জার্নালের প্রধান সম্পাদকের অনুরোধে গবেষণা নিবন্ধটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।”তবে বাতিল করা এই গবেষণাগুলোর তথ্য ভেপিং-বিরোধী প্রচারণায় এখনো ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে ভেপিং-বিরোধী প্রচারণাকারীদের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়ার পাশাপাশি ভেপিং নিয়ে সুষ্ঠ ও বাস্তবমুখী নীতিমালা তৈরিতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে বলে দাবি খাত সংশ্লিষ্টদের।