তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপির চেঁচামেচির মধ্যেই ফ্রিডম হাউস গণতন্ত্র চর্চা সূচকে একধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, ‘বিএনপির অব্যাহতভাবে চেঁচামেচি- দেশে গণতন্ত্র নেই, মানুষের কথা বলার অধিকার নেই- এগুলোর মধ্যেই ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থা যখন প্রতিবেদন প্রকাশ করে, বাংলাদেশ গত বছরের তুলনায় এক ধাপ এগিয়েছে, ‘তার মানে বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চা অব্যাহত আছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অগ্রগতি হয়েছে।‘
মন্ত্রী গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের বাসভবনে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা ফ্রিডম হাউস প্রকাশিত বিশ্ব গণতন্ত্র চর্চা সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রসঙ্গে এ কথা বলেন।
ড. হাছান বলেন, ‘বিএনপি নেতারা প্রতিদিন টেলিভিশনের পর্দায় সকাল-বিকেল-সন্ধ্যা কথা বলে, সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অহেতুক সমালোচনা করে আর বলে, আমাদের কথা বলার অধিকার নেই। এটি যে অসার মিথ্যা, তা ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। অর্থাৎ বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চা অব্যাহতভাবে সুসংগত রয়েছে। এটি আরো হতো যদি বিএনপি সঠিকভাবে গণতন্ত্র চর্চা করত।‘
‘বিএনপির তো অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রই নেই‘ মন্তব্য করে ড. হাছান বলেন, ‘তাদের সর্বশেষ সম্মেলন কখন হয়েছে, সেটা তারা নিজেরাও বলতে পারে না। এক কলমের খোঁচায় বিএনপিতে নেতা হয়, আবার এক কলমের খোঁচায় বাদ যায়। তারা যদি গণতন্ত্র চর্চা করত, দেশে সার্বিকভাবে গণতন্ত্র চর্চায় আরো সহায়ক ভূমিকা রাখত, তাহলে গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশ আরো অনেক ধাপ এগিয়ে থাকত।‘
বিএনপি মহাসচিবের ‘সরকারের রশি ধরে টান দেয়ার সময় এসেছে‘ এমন বক্তব্য নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তারা তো রশি ধরে টান দিয়েছিল ১০ ডিসেম্বর। সরকারকে রশি ধরে টান দিতে গিয়ে সেই রশি ছিঁড়ে পড়ে গিয়ে তাদেরই কোমরটা ভেঙে গেছে। এখন আবার টান দিতে গেলে তাদের কোমর আরো ভেঙে যাবে।‘
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এটা মনে রাখতে হবে সরকারের ভিত, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভিত অনেক গভীরে প্রোথিত। এই রশি টানাটানি ১৪ বছর ধরে তারা করেছে, এতে তাদের কোনো লাভ হয়নি। বরং নিজেরাই বারবার রশি ছিঁড়ে পড়ে গেছে।‘
ড. ইউনূস সম্পর্কে ৪০ বিশ্বনেতার বিবৃতিটি একটি বিজ্ঞাপন
ড. ইউনূসকে নিয়ে ‘বিশ্বনেতাদের বিবৃতি‘ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এটিকে বিবৃতি বলা যাবে না, এটি একটি বিজ্ঞাপন। ওয়াশিংটন পোস্টে প্রায় কোটি টাকা খরচ করে ৪০ জনের নামে একটি বিজ্ঞাপন ছাপানো হয়েছে। বিজ্ঞাপন আর বিবৃতির মধ্যে পার্থক্য আছে।‘
উল্লেখ্য, গ্রামীণ টেলিকমের মালিক ও গ্রামীণ ফোনের প্রায় ৩৪ ভাগের মালিক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশংসা করে বিশ্বের ৪০ জন খ্যাতনামা ব্যক্তির নাম গত ৭ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় পুরো এক পাতার বিজ্ঞাপন আকারে ছাপা হয়।
এ বিষয়ে সম্প্রচারমন্ত্রী আরো বলেন, ‘ড. ইউনূস বাংলাদেশের জেষ্ঠ্য নাগরিক। তার প্রতি যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখেই বলতে চাই, এইভাবে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিবৃতি আমি বাংলাদেশে দেখিনি। বিশ্ব অঙ্গনেও এমন হয় কিনা, জানি না। এমন বিবৃতি কেনা বা বিজ্ঞাপন দিয়ে বিবৃতি, সেটাকে আবার কোটি টাকা খরচ করে প্রকাশ করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত, সেটিই হচ্ছে প্রশ্ন। যেভাবেই হোক ইউনূস সাহেব নোবেল জয়ী। তার পক্ষে এমন একটা বিবৃতি বিজ্ঞাপন দিয়ে ছাপানো, এটি তার ব্যক্তিত্বকেই খর্ব করেছে। আমার প্রশ্ন, তার এত টাকা কোথা থেকে আসে?‘
‘নদী ও জীবন রক্ষায় নোঙর এগিয়ে যাক’
এ দিন মতবিনিময় শেষে নদী নিরাপত্তার সংগঠন নোঙর ট্রাস্টের প্রেসিডেন্ট সুমন শামস পরিবেশবিদ তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের হাতে ‘নদী সংস্কৃতি ও শিল্প-সাহিত্য মুখপত্র নোঙর‘-এর ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত নদী সংখ্যার একটি কপি তুলে দেন।
হাছান মাহমুদ পরিবেশ, নদী ও প্রাণ রক্ষায় নোঙরের দুই দশকের ভূমিকার প্রশংসা ও অগ্রযাত্রা কামনা করেন। ২০০৪ সালের ২৩ মে গভীর রাতে মেঘনা নদীর চাঁদপুরের বাঁকে এমভি লাইটিং সান লঞ্চটি ডুবে সুমন শামসের মা-সহ প্রায় ২০০ মানুষের মৃত্যুর পর থেকে নদী নিরাপত্তা ও পরিবেশ রক্ষার শপথে কাজ করছে নোঙর।