বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
শ্রীমঙ্গলে আগাম জাতের আনারসের বাম্পার ফলন, ন্যায্য দাম পেয়ে খুশি চাষিরা ধনবাড়ীতে ৬ ওষুধ ব্যবসায়ীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা শেরপুরে কানাডা প্রবাসীর জমি বেদখলের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন কালিয়ায় ক্লাইমেট-স্মার্ট প্রযুক্তি মেলা বাকাল মোহাম্মাদিয়া জামে মসজিদের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান বদলগাছীতে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের বাছাই কার্যক্রম নগরকান্দায় সামাজিক সম্প্রীতি সমাবেশ গরমে স্বস্তি দিতে বাগেরহাটে বিশুদ্ধ ঠান্ডা পানি, স্যালাইন ও শরবত বিতরণ বন্দরে যত্রতত্র পার্কিং,জ্যামে নাকাল জনজীবন, মারাত্মক দুর্ঘটনার আশংকা রায়গঞ্জে চার জয়িতার সাফল্য গাঁথা

অপরাজেয় কথাসাহিত্যিক বিমল মিত্র

নূর মোহাম্মদ নূরু
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৭ মার্চ, ২০২৩

বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ব্যতিক্রমী ভারতীয় কথা শিল্পী বিমল মিত্র। সাহিত্যের স্রোত অন্য ধারায় প্রভাহিত করতে ‘কল্লোল’ গোষ্ঠীর সাহিত্যিকরা যখন ব্যস্ত এবং মাটির কাছাকাছি থাকা তিন বন্দ্যোপাধ্যায় ( বিভূতিভূষণ, তারাশাঙ্কার, মাণিক ) যখন খ্যাতির শীর্ষে ঠিক তখনই মাটির গন্ধ মেখে বাংলা সাহিত্যের আঙিনায় কথাশিল্পী বিমল মিত্রের আবির্ভাব। আশুতোষ কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে রেলে চাকরি। রেলে চাকরি করতে করতে সাহিত্যচর্চা। ১৯৪৬ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস ছাই। পঞ্চাশের গোড়ায় বন্ধু সাগরময় ঘোষের আগ্রহে ধারাবাহিক ‘সাহেব বিবি গোলাম’ লিখে আলোড়ন তুলেছিলেন। এর পর রেলের চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি সাহিত্যসৃষ্টিতে আত্মনিয়োগ। কবিতা লেখার মাধ্যমেই তাঁর সাহিত্য জগতে প্রবেশ। তিনি বাংলা ও হিন্দি উভয় ভাষায় সাহিত্য রচনা করলেও তাঁর রচনা ভারতের বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে। আজ তাঁর ৩২তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯১ সালের আজকের দিনে দক্ষিন কোলকাতার নিজ বাড়ীতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন কথা শিল্পী বিমল মিত্র। অপরাজেয় কথাসাহিত্যিক বিমল মিত্রের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
বিমল মিত্র ১৯১২ সালের ১৮ মার্চ বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষা নদীয়া জেলার হাঁসখালি থানার এক প্রত্যন্ত গ্রাম ফাতেপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সতীশচন্দ্র মিত্র আর মাতা মা সুরঞ্জনা দেবী। তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় চেতলা স্কুলে। তার পরে আশুতোষ কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। পিতা সতীশচন্দ্র মিত্র ফাতেপুরের বাসিন্দা হলেও কর্মসূত্রে তিনি কলকাতা ও তার বাইরে থাকতেন। গ্রামের জমিজমা, ফলের বাগান দেখাশুনা করতে বছরে কয়েকবার তাঁর বাবকে সপরিবারে এখানে আসতে হত। এভাবে বাবার সাথে যাতায়াত করে প্তৈৃক গ্রামের প্রতি শৈশব থেকেই তাঁর নাড়ীর টান দৃঢ় হাতে থাকে। এভাবেই ফতেপুরের মাঠ, ঘাট আর জন জীবন তাঁর নখদর্পণ হয়ে গিয়েছিল। তারই ফল স্বরূপ তাঁর বিখ্যাত কালোত্তীর্ণ উপন্যাস ‘সাহেব বিবি গোলাম’। পরাধীন সমাজ ব্যবস্থা এবং সরল গ্রাম্য জীবনের সঙ্গে শহরে কৃত্রিমতার তারতম্য এই উপন্যাসটিতে তিনি নিপুণতাভাবে গ্রন্থিত করেছেন ‘সাহেব বিবি গোলাম’ সাপ্তাহিক ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রথম ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। কয়েক কিস্তি প্রকাশের পরপরই নিন্দুকেরা অপপ্রচার,কুৎসাভরা চিঠি এমন কি প্রাণনাশের হুমকিও তিনি পেয়েছেন। আর তিনি ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে বসে নির্বিকার সাধকের মত এই উপন্যাসের পরবর্তী কিস্তিগুলি লিখে গেছেন। গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হওয়ার পর এটিই আবার বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে।‘দেশ সম্পাদক সাগরময় ঘোষ উচ্ছসিত প্রশংসা করে’ বলেছিলেন ‘আমার ধারনা এ গ্রন্থ একটি কালোত্তীর্ণ ক্লাসিক । এ ধরনের উপন্যাস একশো বছরে মাত্র একটি রচিত হওয়ায় যথেষ্ট।’ তাঁর অন্যান্য বিখ্যাত উপন্যাসঃ ১। একক দশক শতক, ২। বেগম মেরী বিশ্বাস, ৩। চলো কলকাতা, ৪। পতি পরম গুরু, ৫। এই নরদেহ, ৬। এরই নাম সংসার, ৭। মালা দেওয়া নেওয়া, ৮। তোমরা দুজনে মিলে, ৯। গুলমোহর, ১০। যা দেবী, ১১। আসামী হাজির, ১২। কড়ি দিয়ে কিনলাম ইত্যাদি। প্রায় পাঁচশোটি গল্প ও শতাধিক উপন্যাসের লেখক বিমল মিত্র তাঁর ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’ গ্রন্থের জন্য ১৯৬৪ সালে রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়াও বহু পুরস্কার ও সম্মান লাভ করেন। তাঁর রচনা ভারতের বিভিন্ন চলচ্চিত্রে রূপায?িত হয়েছে। শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার হিসাবে তিনি ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার পেয়েছেন।
বিমল মিত্র ছিলেন লেখক হিসাবে অন্তর্মুখী, জেদ আবার রসিক প্রকৃতির। কোন প্রকাশ্য সাহিত্য সভায় কিংবা সংবর্ধনা অনুষ্ঠান যাওয়া একদম পছন্দ করতেন না। নিজের সম্পর্কে বিমল মিত্র নিজেই মূল্যায়ন করেছেন এভােবে “…সত্যিই আমার কিছু হয়নি। অবশ্য তা নিয়ে আমি দুঃখও করি না। কারণ জীবনে যে কিছু হতেই হবে তারই বা কী মানে আছে। আকাশের আকাশ হওয়া কিংবা সমুদ্রের সমুদ্র হওয়াটাই তো যথেষ্ট। লেখক আমি হতে না-ই বা পারলাম, মূলতঃ আমি একজন মানুষ। মানুষ হওয়াটাই তো আমার কাছে যথেষ্ট ছিল। কারণ তরুলতা অরি সহজেই তরুলতা, পশু-পাখি অতি সহজেই পশু-পাখি, কিন্তু মানুষ অনেক কষ্টে অনেক দুঃখে অনেক যন্ত্রণায় অনেক সাধনায় আর অনেক তপস্যায় তবে মানুষ। আমি কি সেই মানুষই হতে পেরেছি?” ১৯৯১ সালের ২ ডিসেম্বর দক্ষিন কোলকাতার চেতলার নিজ বাড়ীতে মৃত্যুবরণ করেন বিমল মিত্র। তাঁর চেতলার বাড়িতেই এখন একটি সংগ্রহশালা ও আর্ট গ্যালারি গড়ে উঠেছে। মানুষ হতে পেরেছিলেন কিনা, নিজের কাছে সে প্রশ্ন রেখে ছিলেণ বিমল মিত্র তার জবাব জানা আছে বিজ্ঞজনদের কিন্তু বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি যে একজন পথিকৃৎ ছিলেন তাতে সন্দেহ নেই। আজ কথাসাহিত্যিক বিমল মিত্রের ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। অপরাজেয় কথাসাহিত্যিক বিমল মিত্রের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি। গণমাধ্যমকর্মী,nuru.etv.news@gmail.com




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com