রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মাসিক আইন শৃঙ্খলা সভা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে রবিবার (১০ জুলাই) সকালে অনুষ্ঠিত হয়। এতে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এর সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন, জেলা সিভিল সার্জন ডা. নিহার রঞ্জন নন্দী, পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ, পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী, জেলা পরিষদ সদস্য বিপুল ত্রিপুরা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমা বিনতে আমিন, জেলার সরকারি বেসরকারি সকল কর্মকর্তা সহ স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা। মাসিক আইন শৃঙ্খলা সভায়, জেলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং সংঘটিত অপরাধ, সন্ত্রাস ও নাশকতা সংক্রান্ত, চোরাচালান নিরোধ, নারী ও শিশু নির্যাতন, যৌন হয়রানি, বাল্যবিবাহ ও ইভটিজিং, স্বাস্থ্য সেবা, মাদক প্রতিরোধে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহ বর্তমানে মশাবাহী রোগ ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে নানা দিক তুলে ধরে সমাধানে এগিয়ে আসতে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়। মাসিক সভায় বিগত মাসে জেলার আইন শৃঙ্খলা, বিগত সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত সমূহের অগ্রগতি ও চলতি সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়, কিন্তু এরি মধ্যে বেজে ওঠে বিদায়ের সুর। তাইতো সভার একেবারে শেষ প্রান্তে সকলের নিকট থেকে ৫ মিনিট সময় চেয়ে নেন রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে তিনি বলেন, গত ২ বছর ৪ মাস আপনাদের সাথে সময় কাটিয়েছি। দেশের সর্ববৃহৎ জেলা রাঙ্গামাটির ৯১তম জেলা প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি। আমার রুমের অনার বোর্ডের দিকে তাকিয়ে আমি নিজে নিজে ভেবেছি, এই বোর্ডে বহু লিজেন্ডের নাম লিখা আছে। সেখানে আমার নাম শোভা পাওয়াটা পরম সৌভাগ্যের। তাঁদের তুলনায় আমি কিছুই না। এখানে এইচ টি ইমাম স্যারের নাম আছে। তিনি দেশের জন্য যে ঝুঁকি নিয়েছিলেন সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। আমি হলে কি এমনটা পারতাম? তিনি আরো বলেন, রাঙ্গামাটির মানুষ খুবই শান্তি প্রিয়। এই জেলা আমার অন্তর জুড়ে থাকবে। আমি এখানে কাজ করতে গিয়ে কখনও কখনও খুবই শক্ত অবস্থানে গিয়েছি। সেটা আমার জন্য নয়, দেশের জন্য। আমি আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র। এটা করতে আমি বাধ্য ছিলাম। ব্যক্তিগতভাবে সেই বিষয়গুলো কখনই বিবেচনায় রাখিনি। দীর্ঘ সময় আপনারা আমার সারথী হয়ে ছিলেন। এই চলার পথে একজন জেলা প্রশাসক হিসেবে আমাকে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে, সেটা হয়তো কারো পক্ষে গিয়েছে, কারও বা বিপক্ষে। এখানে আমার কোন হাত ছিলনা। যাদের বিপক্ষে গিয়েছে তাদের আমার বলার কিছু নেই। রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করতে গেলে এমনটা হবেই। আমার স্থানে আপনি থাকলেও তাই করতেন। কারণ জেলা প্রশাসকের দায়িত্বটা এমন। তিনি আরো বলেন, কাজ করতে গিয়ে আমাকে হয়ত অনেক সময় খুব শক্ত আচরণ করতে হয়েছে। সেটা আমার দায়িত্ব ছিল। দায়িত্ব ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক এক নয়। আমি চেয়েছি ব্যক্তিগত সম্পর্কের মাধ্যমে দায়িত্ব পালনটা যাতে সহজ করতে পারি। সেভাবেই কাজ করে গিয়েছি। রাঙ্গামাটির মানুষ অত্যন্ত আন্তরিক ও সহযোগিতা প্রবন। এখানে সবাই আমাকে খুবই আন্তরিকতার সাথে আপন করে নিয়েছে। যা আমার ভাবনায় ছিলনা। এছাড়াও আপনারা জানেন এখানে থাকাবস্থায় আমার একটা পারিবারিক বিপদ ঘটেছে। আমার বাবাকে আমি হারিয়েছি। তাই আমি চাইলেও রাঙ্গামাটিকে ভুলতে পারবো না। তিনি বলেন, কোন মানুষই পারফেক্ট নয়। সবার কিছু না কিছু ভুল ভ্রান্তি থাকে। আমার বেলায়ও তাই। তবে চেষ্টা করেছি সর্বোচ্চটা দিয়ে রাঙ্গামাটির মানুষকে সেবা দিতে। জানিনা কতটুকু পেরেছি। আমার কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। তারপরও চেষ্টা করেছি সাধারণ মানুষকে সেবা দিয়ে যেতে। অনলাইনের মাধ্যমে সেবা প্রদান করেছি। যাতে সাধারণ মানুষের কোন ভোগান্তি না হয়। সেটাই ছিল আমার কাছে মূখ্য বিষয়। আপনারা আমাকে সব সময় সহায়তা করে গেছেন বলেই যা করেছি তা সুন্দরভাবে করতে পেরেছি। সে জন্য আমি আপনাদের কাজে চিরকৃতজ্ঞ থাকব। তিনি আরও বলেন এখানকার রাজনৈতিক পরিবেশটা খুবই ভাল। বিশেষ করে আমাদের এমপি মহোদয় অত্যন্ত জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি। তিনি চাকুরীজীবিদের সম্মান দিতে জানেন। এ কথা আপনারাও এক বাক্যে স্বীকার করবেন। তাঁর কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। তিনি বলেন, আমি চেয়েছিলাম যাতে বৃহস্পতিবার আমার বদলির আদেশটা হয়। সেটাই হয়েছে। ফলে আজ আমি আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিতে পারলাম। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি দুর থেকে দেখবো রাঙ্গামাটির মানুষ ভাল আছে, সেটাই হবে আমার পরম প্রাপ্তি। আমার নতুন পোষ্টিং হচ্ছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ে। সেখানে উপসচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করবো। মন থেকে বলছি, ঢাকায় গেলে অবশ্যই দেখা করবেন। আপনাদের জন্য আমার দুয়ার সব সময় খোলা থাকবে। আগামী সপ্তাহেই চলে যাব। সবাই ভাল থাকবেন এই বলে তিনি সবার কাছ থেকে বিদায় নেন।