শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৭ অপরাহ্ন

অভিযোগ:প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের টাকা প্রধান শিক্ষকের পকেটে! স্লিপ ফান্ডের টাকা নিয়ে ‘নয়ছয়’

আলমগীর নিশান (ফটিকছড়ি) চট্টগ্রাম :
  • আপডেট সময় বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্লান (স্লিপ) ফান্ডের টাকা সঠিকভাবে ব্যয় না করে ‘নয়ছয়’ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে ফটিকছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ করেও কোন সুরাহা পাচ্ছেনা স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির (এসএমসি) সদস্যরা। কোন স্কুলে প্রধান শিক্ষকসহ এসএমসির সদস্যরাও সরকারী এ অর্থ লোপাটের সাথে জড়িত রয়েছে বলে একাধিক সুত্রে জানা গেছে। উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে ভ্যাট ও আয়করের নামে বিদ্যালয় প্রতি বরাদ্দের টাকা থেকে অতিরিক্ত হারে কর্তন, প্রাক্কলন মোতাবেক কাজ না করাসহ নানা অভিযোগও উঠেছে। সম্প্রতি অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলার হেয়াকোঁ বাংলা পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দাঁতমারা সোনারখীল এ টি সি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে পরিদর্শনে গেলে অভিযোগের সত্যতা মিলে। শুধু হেয়াকোঁ বাংলা পাড়া বা সোনারখীল এটিসি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নয় উপজেলার ২২৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে বেশীরভাগ স্কুলে একই চিত্র। টাকা বরাদ্দ পাওয়ার পর অর্থ বছরের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্লিপ ফান্ডের টাকা প্রাক্কলন মোতাবেক ব্যয় করার নিয়ম থাকলেও এসব স্কুলে তা করা হয়নি। বরং কোন স্কুলে প্রধান শিক্ষক বা স্কুল কমিটির প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পকেটেই রয়ে গেছে সরকারী এই খাতের টাকা। অনুসন্ধানে জানা যায়, কোন স্কুলের স্লিপের টাকা ব্যয় করা নিয়ে কমিটি আর প্রধান শিক্ষকের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে ব্যাপক দুরত্ব। আবার কোন স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্কুল কমিটিকে পাশ কাটিয়ে ভুঁয়া প্রাক্কলনের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে উত্তোলন করেছে স্লিপের এসব টাকা। সরকারী নিয়ম মতে স্লিপের অর্থ ব্যয় করার জন্য প্রাক্কলন তৈরি, ক্রয় কমিটি গঠন করাসহ সেক কমিটির মাধ্যমে অডিট করার নিয়ম থাকলেও একাধিক স্কুলে তা করা হয়নি বলে জানা যায়। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষকসহ বেশ কয়েকটি স্কুলের এসএমসির সদস্যরা। এদিকে, গত সপ্তাহে উপজেলার হেয়াকোঁ বাংলা পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্লিপের অর্থ লোপাটসহ নানা অনিয়মের বিষয়ে অনুসন্ধান চালানু হয়। এসময় স্লিপের অর্থ কোন খাতে ব্যয় করা হয়েছে গণমাধ্যমকর্মীদের এমন প্রশ্নে সদুত্তর মিলেনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমের কাছে। পরে তিনি তড়িঘড়ি করে কমিটির মিটিং ডেকে বরাদ্দ পাওয়া অর্থের আংশিক টাকা স্কুল কমিটির কাছে বুঝিয়ে দেন। গত ২৭ আগষ্ট এ বিদ্যালয়ের স্লিপের অর্থ লোপাটসহ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে উপজেলা শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ করেন স্কুল কমিটির সহ-সভাপতি স্থানীয় ইউপি সদস্য কামাল উদ্দিন। অনুসন্ধানে এ বিদ্যালয়ের স্লিপের টাকা উত্তোলন এবং ব্যয় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নানা অসংগতি ধরা পড়ে। অভিযোগকারী ইউপি সদস্য কামাল উদ্দিন বলেন, বিগত ৮/৯ মাস ধরে এসএমসির কোন মিটিং ডাকেনি প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম। বিনা নোটিশ ও মিটিং ছাড়া নিজের ইচ্ছামত রেজ্যুলেশন করে কমিটির সদস্যদের কাছে স্বাক্ষরের জন্য নিয়ে আসেন। স্কুলে নিয়মিত মা সমাবেশ, উঠান বৈঠক, অভিভাবক সমাবেশ করার কথা থাকলেও এসবের কিছুই করেননা প্রধান শিক্ষক। এছাড়া দাঁতমারা ইউনিয়নের সোনারখীল এটিসি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়েও একই অনিয়ম ধরা পড়ে। স্লিপের টাকা কোন কোন কাজে ব্যয় করেছে এমন প্রশ্নে ছাত্র ছাত্রীদের ২০টি ইউনিফর্ম ছাড়া বাকি হিসাব মিলাতে পারেননি প্রধান শিক্ষক আবুল হাসেম। এ স্কুলে দীর্ঘদিন ধরে কমিটির সভাও হয়নি বলে অভিযোগ করেন ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, কমিটি গঠনের পর থেকে এপর্যন্ত কোন মিটিং ডাকেনি প্রধান শিক্ষক আবুল হাসেম। কোন ধরনের নোটিশ ছাড়া নিজেই মিটিংয়ের রেজ্যুলেশন করে গুটি কয়েক সদস্যের স্বাক্ষর নিয়ে তা জায়েজ করেন। এ ছাড়া সভাপতির অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনোনয়ন নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। এ নিয়ে নুর মোহাম্মদ নামে একজনসহ তিন এসএমসি সদস্য উপজেলা শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন। অভিযোগকারী নুর মোহাম্মদ বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ করার পরও এখনো বিষয়টি তদন্ত করে কোন ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তা। এলাকার সচেতন মহল ও সাধারন শিক্ষকরা এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর ২০২২-২৩ অর্থবছরে ফটিকছড়ি উপজেলার ২২৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য স্লিপ ফান্ডে ২০০ পর্যন্ত শিক্ষার্থী থাকা বিদ্যালয়ে ৫০ হাজার টাকা করে, ৫০০ পর্যন্ত শিক্ষার্থী থাকা বিদ্যালয়ে ৭০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়। বরাদ্দকৃত টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের যৌথ ব্যাংক হিসাব থেকে উত্তোলন করে সচেতনতামূলক ও প্রয়োজনীয় উন্নয়নমূলক কাজ জুন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার নিয়ম। কিন্তু সমন্বয়হীনতা আর কিছু প্রধান শিক্ষকের রহস্যজনক ভুমিকার কারণে স্লিপ গাইড লাইন অনুসরণ করে সঠিক সময়ে সঠিক কাজ হয়নি। এছাড়া সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যালয়ের এসব আনুষঙ্গিক খরচ থেকে সাড়ে সাত শতাংশ ভ্যাট ও দুই শতাংশ আয়কর (আইটি) কর্তন করার নিয়ম আছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে ভ্যাট-আইটির কথা বলে ১৮ শতাংশ টাকা কর্তন করা হয়েছে। ফলে বিদ্যালয়গুলো প্রাপ্ত বরাদ্দ থেকে সাড়ে আট শতাংশ টাকা বঞ্চিত হয়েছে। এতে সাধারণ শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ হলেও তারা হয়রানির ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস করছেন না। এছাড়া অধিকাংশ বিদ্যালয়ে স্লিপ ওরিয়েন্টশন সভা, মা সমাবেশসহ প্রাক্কলন মোতাবেক কাজ সম্পন্ন হয়নি। এরপরও কাগজে-কলমে কাজ দেখিয়ে স্লিপের টাকা উত্তোলন ও ব্যয় দেখানো হয়েছে। বিদ্যালয়ের এমএসসি, পিটিএ কমিটির সমন্বয়ে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করার বিধান থাকলেও অধিকাংশ বিদ্যালয়ে তা হয়নি। কাগজে কাজ দেখিয়ে টাকাগুলো লোপাট করা হচ্ছে বেশীরভাগ স্কুলে। এসবয় অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফটিকছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. হাসানুল কবির বলেন, ‘দুটি স্কুলের অনিয়মের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এগুলো তদন্ত করে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। স্লিপের অর্থ নিয়ে কোন ধরনের অনিয়ম করার সুযোগ নাই। কোন প্রতিষ্ঠান প্রধান বা সংশ্লিষ্ট কেউ স্লিপের টাকা নিয়ে কোন অনিয়ম করলে তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com