ভোটাররা ভোট দিতে পারবে এ রকম আস্থা এখনো নেই জানিয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, এ আস্থাটা পেলে আমরা নির্বাচনে যাব। আমরা জনগণের দাবিটা প্রাধান্য দিচ্ছি। আর আমাদের দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক কার সাথে আলাপ করলেন, কে কী বললো, সেটা আমরা আমলে নিচ্ছি না।
গতকাল রোববার বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমরা একটা মাঝামাঝি অবস্থা চাই যে, সংবিধানের আলোকে একটা পথ বের করে যেন সবাই নির্বাচনে আসে। এরকম একটা পরিবেশ তৈরি হোক। কিন্তু সেই পরিবেশ এখনো হয়নি। নির্বাচনে যাওয়ার সকল প্রস্তুতি আছে আমাদের। এখন আমরা দ্বিধায় আছি নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হবে কি না। জনগণের কী অবস্থা। এ সংশয় থেকে আমরা এখনো বের হয়ে আসতে পারিনি। যার জন্য নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগছে আমাদের। চেষ্টা করবো শিগগিরই কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায় কি না। আমরা জনগণের দাবিটাকে প্রাধান্য দিচ্ছি।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করেছে, এটা তাদের রুটিন ওয়ার্ক। এর সঙ্গে আমাদের নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার সম্পর্ক নেই। নির্বাচনে যাওয়ার সম্পর্ক পরিবেশের ওপর। আমরা আগেও বলে এসেছি যে, বর্তমানে দেশের যে অবস্থা- সরকারি দল বলছেন তারা নির্বাচন করবেনই ক্ষমতায় থেকে। অন্যদিকে বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দল বলছে সরকার পদত্যাগ না করলে তারা নির্বাচনে আসবে না। তারা বিভিন্ন কর্মসূচিও দিচ্ছে। হরতাল, অবরোধ, অগ্নিসংযোগ, বাস পোড়ানোসহ আইনশৃঙ্খলা অবনতি হওয়ার মতো কর্মকা- ঘটছে। সারাদেশের মানুষ জিম্মি অবস্থায় আছে।
জাতীয় পার্টি মহাসচিব বলেন, মানুষ এ ধরনের অনিশ্চিত ও শঙ্কা থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করছে। সবদল ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটা নির্বাচন করতে পারলে এ ধরনের সমস্যা ছিল না। আমাদের দলের চেয়ারম্যানসহ আমরা বারবার সরকারকে অনুরোধ করেছি যে, আপনারা একটা পরিবেশ করুন, আলোচনায় সবাই আসুক। কিন্তু সরকারও আহ্বান করলো না, আর যারা আন্দোলনে আছে তারাও ছাড় দিয়ে কথা বলেনি। দুই দলেরই জনগণের ইস্যু বাদ দিয়ে প্রেস্টিজ ইস্যু বা ইগোর প্রবলেম কাজ করতেছে।
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি তৃতীয় বৃহত্তম দল। আমাদের চেয়ারম্যান বারবার বলেছেন যে, একটা পরিবেশ না হলে নির্বাচনে কীভাবে যাব। নির্বাচনে ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে এরকম একটা আস্থা যদি মানুষের না থাকে তাহলে কীভাবে যাব। আমরা সরকার পদত্যাগ করুক এটাও চাই না, আবার সরকারকে বাধ্য করবো এটাও চাই না।
তিনি আরও বলেন, সঠিকভাবে নির্বাচন হলে আমরা ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে চাই। আমরা জোট, মহাজোট করতে চাই না। আমরা একটি আসনও না পেলে কোনো আপত্তি থাকবে না। যে দলই আসন বেশি পাবে আমরা সহযোগীতা করবো, তারা সরকার গঠন করবে। কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমরা চাই, দেশে একটা স্থিতিশীল অবস্থা আসুক। এ ধরনের মারামারি কাটাকাটি না হোক।
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রওশন এরশাদের সাক্ষাতের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা একটা সৌজন্য সাক্ষাৎ। আরপিও অনুযায়ী দলের নামে প্রতীক বরাদ্দ হয়। নির্বাচনে দলের প্রার্থীদের মনোনয়নে চেয়ারম্যান বা মহাসচিব সাইন করেন। আমরাও জানিয়েছি ইসিকে- আমাদের মনোনয়নে সাইন করবেন চেয়ারম্যান। তাই আইন অনুযায়ী জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীক বরাদ্দের একমাত্র মালিক গোলাম মো. কাদের।
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিতে কোনো দ্বন্দ্ব নাই। সারাদেশের সাংগঠনিক কাঠামোর একটি লোকেরও বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা নেই। আপনি যাদের (রওশন এরশাদপন্থি) মিন করছেন তারা এ দলের সদস্য না। দুই একজন বহিষ্কৃত। একজন (রওশন এরশাদ) শুধু আমাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। তিনি আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র। তিনি পৃষ্ঠপোষক, তবে দলীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তার কোনো এখতিয়ার নেই। উনি অসুস্থ। উনার স্বাভাবিক জ্ঞানটা নেই। উনাকে কিছু লোক বিভ্রান্ত করছে। উনি ইসিতে চিঠি দিয়ে বলেছেন যে, মহাজোটের সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করবেন।
কার সঙ্গে করবেন- আওয়ামী লীগের সঙ্গে। কিন্তু আওয়ামী লীগতো বলে নাই জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট করবে।
চুন্নু বলেন, চিঠি দেয়ার পর আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদকে ফোন দিয়েছিলাম। উনি বললেন, আমি বুঝি নাই এমনি দিয়ে দিয়েছি। গতকাল একটা পত্রিকায় বলেছেন যে, আমি এটা স্বাক্ষর করি নাই। কয়েকটা লোক ওনার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে উনাকে ব্যবহার করছে ব্যক্তি স্বার্থসিদ্ধির জন্য। উনি কার সাথে আলাপ করলেন, কে কী বললো সেটা আমরা আমলে নিচ্ছি না।