গাজীপুরের কালীগঞ্জে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে ত্রিমুখী অবস্থানে দাঁড়িয়েছে আ’লীগ। নিজেদের মাঝে এমন বিভক্তিতে এর আগে কখনোই পড়তে হয়নি দলটিকে। কিছুদিন পূর্বে শেষ হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে দল দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এখন আবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে ওই দুইভাগ ভেঙ্গে তিনভাগে পরিণত হয়েছে। এতে করে সিদ্ধান্তহীনতার পাশাপাশি অবস্থান সংকটে পড়েছেন নেতা কর্মীরা। সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে বিজয়ী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আক্তারুজ্জামানের কর্মীরা উপজেলা আলীগের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া। অপর দিকে নৌকা নিয়ে পরাজিত হয়েছিলেন মেহের আফরোজ চুমকি, বর্তমানে তিনি সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ। এই দুই প্যানেলের হয়ে দুই জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। আক্তারুজ্জামানের প্যানেল থেকে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. আশরাফী মেহেদী হাসান এবং মেহের আফরোজ চুমকির হয়ে উপজেলা ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান (হাবিব) লড়বেন। এই দুইজন প্রার্থীকে ছাপিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছেন আওয়ামী লীগ নেতা আমজাদ হোসেন স্বপন। এর আগে তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। নির্বাচনে তিনি এবার শক্ত প্রতিদ্বন্দিতা তৈরী করবেন বলে ধারণা করছেন সাধারণ ভোটাররা। সংসদ নির্বাচনের পর থেকে সাবেক এবং বর্তমান দুই সাংসদের অনুসারীদের মধ্যে প্রায় অর্ধশতাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রক্তক্ষয়ী সেসব সংঘর্ষের ঘটনায় উভয়পক্ষের প্রায় তিনশতাধিক নেতাকর্মীদের নামে হয়েছে মামলা। মামলা হামলার কারণে দলের অভ্যন্তরে কোন্দল বেড়ে চলেছে প্রতিদিন। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তার প্রভাব আরো কয়েকগুণ বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় নেতা কর্মীরা। একজন স্বতন্ত্র ও ২জন ২ প্যানেল থেকে নির্বাচন করায় একটি দল তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে কাজ করবে। এর মাঝে কিছু কিছু প্রার্থী বিরুধী দলের আনুকূল্য পেতেও মরিয়া। গোপনে বিরুধী দলের কর্মীদের আর্থিক সুবিধা দিয়ে নিজেদের বলয়ে নেওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। তবে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টিকে প্রত্যেকেই অস্বীকার করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, নির্বাচনের প্রাক্কালে এমন অবস্থা চলতে থাকলে দলীয় কোন্দল চরম আকার ধারণ করবে। পরবর্তী সময়ে এই কোন্দলকে নিয়ন্ত্রণ করা দলের পক্ষে কঠিন হয়ে যাবে। ফলে বিরুধী দল সেই সুযোগে নিজেদের ফায়দা হাসিল করবে। এ অবস্থায় কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া উচিৎ নয়। এতে করে দলের অভ্যন্তরে আস্থার সংকট ও বিশ^াসহীনতার সুযোগ তৈরী হবে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন সরকার বলেন, যেহেতু দল কাউকে মনোয়ন দেয়নি সেহেতু দল থেকে কাউকে সমর্থন দেওয়ার সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, যেহেতু এটি দলীয় নির্বাচন নয় তাই দল কাউকে মনোনয়ন দেয়নি। জনগণ যাকে যোগ্য মনে করবে তাকেই নির্বাচিত করবে। এ বিষয়ে আক্তারুজ্জামান বলেন, নির্বাচন আচরণ বিধিতে সংসদ সদস্যদের কোন প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার সুযোগ নেই। আমি নিজেও কোন প্রার্থীকে সমর্থন দেইনি।