সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:২২ পূর্বাহ্ন

টি-২০ বিশ্বকাপ আয়োজনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটকে নিজের করে নেবে’

স্পোর্টস ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১ জুন, ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্র প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলে কানাডার বিরুদ্ধে, ১৮৪৪ সালে নিউ ইয়র্কে। প্রায় ২০০ বছর পর এখন যুক্তরাষ্ট্র আইসিসি পুরুষদের টি-২০ ক্রিকেট বিশ্বকাপ-এর স্বাগতিক দেশ।
শতাব্দী- পুরানো ইতিহাস এবং ক্রিকেটের প্রতি সমর্থন থাকা সত্ত্বেও, বিশেষ করে ফিলাডেলফিয়া এবং পেনসিলভানিয়ায় যেখানে কলেজ আর স্থানীয় ক্লাব একে অপরের সাথে খেলে, ক্রীড়া-প্রেমী জনগোষ্ঠী বেজবল, আমেরিকান ফুটবল এবং বাস্কেটবল বেছে নিয়েছে। কিন্তু ক্রিকেট এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে। ঐতিহাসিকভাবে, এখানে বেশ আগ্রহ ছিল।
একজন স্কুলছাত্র হিসেবে আমার মনে আছে, আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডয়াইট ডি আইজেনহাওয়ার ১৯৫৯ সালে যখন করাচি সফর করছিলেন, তখন তিনি পাকিস্তান এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে এক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলেন। পরে, যখন আমি পাকিস্তানের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছি, তখন জানতে পারলাম যে- প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার খেলা দেখার সময় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনেরাল আইয়ুব খানকে বলেছিলেন, পাকিস্তানের উচিত ইংল্যান্ডের মতো ঘাসের উইকেটে খেলতে। এই কথা খেলার ধরণ পাল্টে দেয় কারণ, তার আগে পাকিস্তানে ক্রিকেট ম্যাটের উইকেটে খেলা হতো। আমি যখন ১৯৮০-র দশকে অস্ট্রেলিয়া সফর করছিলাম, তখন কিংবদন্তী ক্রিকেট তারকা স্যার ডনাল্ড ব্র্যাডম্যান এবং যুক্তরাষ্ট্রের কিংবদন্তী বেজবল প্লেয়ার বেব রুথ-এর পুরানো ছবি দেখেছিলাম। নিজস্ব স্পোর্টসে দুই আইকন- এক সাথে।
ব্র্যাডম্যান, যাকে ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান গণ্য করা হয়, ১৯৩২ সালে আমেরিকা সফরের সময় কয়েকটি প্রদর্শনী ম্যাচে অংশ নেন।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ছত্রছায়া: ক্রিকেটের সাথে কিছু মিল থাকা বেজবল এবং আমেরিকান ফুটবলের কারণে হয়তো ক্রিকেট যুক্তরাষ্ট্রে তার আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেছে। আমেরিকান ফুটবল গৃহযুদ্ধের সময় জনপ্রিয়তা পায় এবং পরবর্তীতে বিশাল এক স্পোর্টিং সংস্কৃতিতে পরিণত হয়।
সেই যুগে, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ছত্রছায়ায় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজে ছড়িয়ে পড়ে। সাবেক উপনিবেশগুলোতে ক্রিকেট ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
ক্রিকেটের এখন পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং সাম্প্রতিককালে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তানে এখন প্রচ- আবেগ-প্রবণ সমর্থন আছে। এই পাঁচটি দেশই যুক্তরাষ্ট্র এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের টি-২০ বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছে। এক শ’রও বেশি দেশ এখন ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির সদস্য। বিগত কয়েক দশকে, যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেটের উত্থান দেখা যাচ্ছে। তার মূল কারণ হচ্ছে, এই দেশের ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়া দক্ষিণ এশিয়ান সম্প্রদায় এবং ব্রিটেন ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো অন্যান্য ক্রিকেট-প্রেমী দেশ থেকে আসা প্রবাসী জনগোষ্ঠী। ক্রিকেটের অবকাঠামোর প্রতি নজর আর স্কুল এবং কলেজ পর্যায়ে এই খেলায় উৎসাহ দিলে তা যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেটের প্রসারে সহায়তা করবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের নিয়ে গত বছর একটি বড় লীগ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হয়। এ ধরনের প্রয়াস ক্রিকেট প্রচারে এবং স্থানীয় ট্যালেন্ট বিকাশে সহায়তা করবে। তাছাড়া, ক্রিকেট রূপান্তরিত হয়ে একটি ছোট, দ্রুতগতি সম্পন্ন খেলায় পরিণত হয়েছে যেটা, আমার মতে, আমেরিকানদের পছন্দের সাথে খাপ খাবে।
সাদা জার্সি বদলে রঙ্গিন পোশাক: বর্তমান টি-২০ ফরম্যাট বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ছোট সংস্করণ। বেজবলের মতো এই ফরম্যাটের খেলা তিন থেকে চার ঘণ্টায় শেষ হয়। আমি দেখেছি সাদা জার্সি বদলে রঙ্গিন পোশাক হয়ে যেতে এবং রাতে ফ্লাড লাইটের নিচে খেলা হতে। বড় বড় লীগে চিয়ারলিডার আনা হয়েছে, প্লেয়ারদের জন্য ক্রিকেট বিশ্বে বড় মাপের দাম ধার্য করা হচ্ছে।
পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে ম্যাচসহ বিশ্বকাপের খেলাগুলো আমেরিকায় প্রচুর দর্শক আকর্ষণ করতে পারবে। এই দুই দেশের মধ্যে খেলার কিংবদন্তী সমতুল্য মর্যাদা আছে, বিশেষ করে বিশ্বকাপে। এই ম্যাচ টেলিভিশন আর ডিজিটাল মাধ্যমে কোটি কোটি দর্শক আকৃষ্ট করে। আমি মনে করি, দু দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় ক্রিকেট সম্পর্ক পুনরায় শুরু হওয়া উচিত, যেটা উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের কারণে স্থগিত করা হয়। আমি বিশ্বাস করি, স্পোর্টস আর রাজনীতি পৃথক রাখা উচিত। বিপুল সংখ্যক আবেগ-প্রবণ দর্শকের সামনে ভারতের বিরুদ্ধে খেলার কথা আমার পরিষ্কার মনে আছে। সেই স্মৃতি মনে এলে আমি এখনো ইমোশনাল হয়ে যাই; ভারতীয় প্লেয়ারদেরও একই অনুভূতি হতো।
আমার এখন ভারতে বেশ কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধু আছে, যেমন সুনিল গাভাস্কার এবং কাপিল দেব, যার নেতৃত্বে ভারত ১৯৮৩ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয় করে।
লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকস: বিশ্বকাপ আয়োজন এবং ক্রিকেট প্রোমোট করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে আদর্শ স্থান মনে হয়। এখানে ইতোমধ্যে একটি সমর্থক গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। এখানে আছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্পোর্টস শিল্পগুলোর অন্যতম। বিশাল আন্তর্জাতিক ইভেন্ট আয়োজন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের দারুণ রেকর্ড আছে।
যুক্তরাষ্ট্র ২০২৮ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমস-এর আয়োজন করতে যাচ্ছে, যেখানে পাঁচটি নতুন স্পোর্টস-এর মধ্যে একটি হবে ক্রিকেট। এর আগে ১৯০০ সালের প্যারিস অলিম্পিকসে শেষবার ক্রিকেট অন্তর্ভুক্ত ছিল, যখন ইংল্যান্ড ফ্রান্সকে পরাজিত করে। আমি যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেটের জন্য ভালো ভবিষ্যৎ দেখতে পারছি। যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৪ সালে ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ সফলভাবে আয়োজন করেছিল। এর পর সকার ধীরে ধীরে এই দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। তাদের নারী দল একাধিকবার ফিফা বিশ্বকাপ শিরোপা জয়লাভ করেছে।
আমি আশা করবো, ক্রিকেট বিশ্বকাপ আয়োজনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটকে নিজের করে নেবে এবং এই খেলার সাথে তার বন্ধন পাকাপোক্ত করবে। জহির আব্বাস আইসিসির সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং পাকিস্তান ক্রিকেট দলের সাবেক ক্যাপ্টেন। আব্বাস হচ্ছেন একমাত্র এশিয়ান ব্যাটার যিনি প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ১০০টি সে ুরি করেছেন। ক্রিকেট বিশ্বে তিনি ‘এশিয়ার ব্র্যাডম্যান’ হিসেবেও পরিচিত। সূত্র : ডয়চে ভেলে




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com