সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:১৮ পূর্বাহ্ন

রিমালের তাণ্ডব: সাতক্ষীরা-রাজশাহীতে ঝরে পড়েছে শত শত মণ আম

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১ জুন, ২০২৪

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে সাতক্ষীরা ও রাজশাহীতে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নামানোর আগ মুহূর্তে ঝড়ে শত শত মণ আম পড়ে যাওয়ায় বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়ছেন চাষি ও বাগানের ক্রেতারা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, সাতক্ষীরা জেলায় ৩২২ টন আমের ক্ষতি হয়েছে, যার মূল্য ২ কোটি টাকা। এদিকে রাজশাহীতে কী পরিমাণ আমের ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি। তবে ঝরে পড়া আম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। সেই হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৭ থেকে ১০ টাকা। তার পরও ক্রেতা মিলছে না। সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে তার ২ থেকে ৩ লাখ টাকার আম ঝরে পড়েছে। সেইসঙ্গে লিচু ঝরে ক্ষতি হয়েছে লক্ষাধিক টাকার।
স্থানীয় আরেক চাষি বলেন, ‘ঝড়ে গাছের আম প্রায় সব পড়ে গেছে। কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ঝরে পড়া আমের ক্রেতা নেই। এসব আম কী করব, বুঝতে পারছি না। আম বিক্রির টাকাতেই আমাদের সারা বছর সংসারের খরচ চলে।’ তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন আগে লিচুগাছের জন্য এক ব্যবসায়ী ৪৫ হাজার টাকা দাম বলেছিলেন; কিন্তু বেচিনি। ভেবেছিলাম আরও বেশি দামে বেচব। কিন্তু ঝড়ে আম-লিচু দুটিরই ক্ষতি হয়ে গেল। এমন ক্ষতির মুখে পড়েছেন জেলার সব আমচাষি ও বাগান ক্রেতা।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, জেলায় এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১ হাজার ২৩৫ হেক্টর, কলারোয়ায় ৬৫৮ হেক্টর, তালায় ৭১৫ হেক্টর, দেবহাটায় ৩৮০ হেক্টর, কালিগঞ্জে ৮২৫ হেক্টর, আশাশুনিতে ১৪৫ হেক্টর ও শ্যামনগরের ১৬০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। জেলায় সরকারি তালিকাভুক্ত ৫ হাজার ২৯৯টি আমবাগান এবং ১৩ হাজার ১০০ জন আম চাষি রয়েছেন। সবমিলিয়ে এ বছর ৪ হাজার ১১৮ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সাতক্ষীরার উপপরিচালক কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে অনেক আম পড়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, স্থানীয় কয়েকটি জাতের আম দিয়ে মে মাসের ৯ তারিখ থেকে সাতক্ষীরায় আম সংগ্রহ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ২২ মে হিমসাগর, ২৯ মে ল্যাংড়া ও ১০ জুন আম্রপালি জাতের আম সংগ্রহের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এদিকে রাজশাহীতে ঝড়ে শত শত মণ অপরিপক্ব আম পড়ে যাওয়ায় আমচাষি ও বাগান মালিকদের বড় ধরনের লোকসান গুনতে হচ্ছে। তারা বলছেন, এবার দীর্ঘ শীত ও তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে বাগানে আম কম। এ অবস্থায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাব পড়ায় তারা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। গত বুধবার রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের মোকাম বানেশ্বর হাটে দেখা যায়, ঝড়ে পড়া আমের মণ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। তারপর তেমন ক্রেতা নেই। হাটের আম ব্যবসায়ীরা জানান, আমগুলো কোনোটা ভালো আছে এবং কোনোটা ফেটে গেছে। আঘাতপ্রাপ্ত আমগুলো পাকার সম্ভাবনা খুব কম। এসব আম দিয়ে আচার তৈরি করা হবে। ব্যবসায়ীরা এসব আম কিনে দেশের বিভিন্ন অ লের আচার প্রস্তুতকারক কোম্পানিতে পাঠাবেন। আমবাগান মালিক আরমান হোসেন বলেন, ‘ঝড়ে আমের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। মণকে মণ আম পড়ে গেছে। আম পরিপক্বও হয়নি। তাই ঝড়ে পড়া আম বাজারে নিয়ে এসেছি। এগুলো ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলাম।’ বানেশ্বর হাটে আম ক্রেতা মোস্তাকিন রহমান বলেন, ঝরে পড়া আচার ছাড়া কোনো কিছু হবে না। তারা এসব আম বিভিন্ন আচার কোম্পানিতে সরবরাহ করবেন।
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বিহারীপাড়া গ্রামের আমচাষি আসিফ ইকবাল বলেন, ‘শনিবার গোপালভোগের মৌসুম শুরু হলেও এখনো সব আম পাকেনি। পুরোপুরি পাকতে পাঁচ থেকে ছয় দিন সময় লাগতে পারে। ২ জুন থেকে গোপালভোগ নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু তার আগেই ঝড়-বৃষ্টিতে প্রচুর ক্ষতি হয়ে গেল।’ আরেক চাষি তৌহিদ পারভেজ বলেন, ‘এবার বাগানে ২৭টি গাছের মধ্যে ১৯টিতেই আম নেই। বাকি সাতটি গাছে কিছু আম ছিল। বৈরী আবহাওয়ায় নানা প্রচেষ্টায় কোনো রকমে আমগুলো টিকিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টিতে অর্ধেক আম ঝরে গেছে। ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়লাম।’ রাজশাহীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) উম্মে ছালমা বলেন, রাজশাহীতে এ বছর ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে জেলায় এবার ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ টন আমের উৎপাদন হবে। তিনি বলেন, বৈরী আবহাওয়া এবং ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা যায়নি।
১৫ মে থেকে রাজশাহীতে গুটি জাতীয় আম নামানো শুরু হয়। এরপর গোপালভোগ নামানো শুরু হয় গত ২৫ মে থেকে। ধাপে ধাপে অন্য আমও নামানোর সময় নির্ধারণ করে ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডারও ঘোষণা করা হয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com