প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, অতিবৃষ্টি প্রভৃতিতে প্রায়ই মানুষকে সম্মুখীন হতে হয়। বাতাসের তীব্র গতিতে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটে। জোয়ারের প্রবল স্রোতে ফসলি জমি, মাছের ঘের পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। গবাদিপশু পানিবন্দী হয়ে পড়ে। এসবের ফলে সর্বসাধারণের জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। ক্ষতিগ্রস্ত হয় জীবন-চলার সম্বল। বিপদে পতিত এসব মানুষের পাশে দাঁড়াতে নির্দেশ দেয় ইসলাম। এ প্রসঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে দুনিয়ার বিপদগুলোর কোনো বিপদ থেকে রক্ষা করবে, এর প্রতিদানে আল্লাহ কিয়ামতের দিনের বিপদ থেকে তাকে রক্ষা করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো গরিব লোকের সাথে (পাওনা আদায়ে) নম্র ব্যবহার করবে, আল্লাহ তার সাথে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানে নম্র ব্যবহার করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষত্রুটি গোপন করে রাখবে, আল্লাহও তার দোষত্রুটি দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানে গোপন রাখবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্য করে, আল্লাহও ততক্ষণ তার বান্দাকে সাহায্য করেন। (আবু দাউদ : ৪৯৪৬)
প্রাকৃতিক এসব দুর্যোগের কারণে পৃথিবীর কোথাও কোনো মানুষ বিপদগ্রস্ত হলে মানুষ হিসেবে তার বিপদে এগিয়ে আসা আমাদের সবার দায়িত্ব। সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য-সহযোগিতা করতে ইসলাম উৎসাহিত করে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব মুসলমানকে একটা দেহের সাথে তুলনা করে বলেছেন, পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়া-মায়া ও স্নেহ-মমতার দিক থেকে গোটা মুসলিম সমাজ একটি দেহের সমতুল্য। যদি দেহের কোনো বিশেষ অঙ্গ অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাহলে অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও তা অনুভূত হয়; সেটি জাগ্রত অবস্থায়ই হোক কিংবা জ্বরাক্রান্ত অবস্থায়। (মুসলিম : ৬৭৫১)
প্রাকৃতিক দুর্যোগের এমন বিপদের সময় যারা বানভাসি মানুষের সেবায় এগিয়ে এসে তাদের অর্থ, ত্রাণসামগ্রী, খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধ, খাওয়ার স্যালাইন, বিশুদ্ধ পানি বা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে সাহায্য দিয়ে সহমর্মিতা প্রকাশ করেন, আল্লাহ তাদের প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন।
এ প্রসঙ্গে কুরআনে বলা হয়েছে, নিশ্চয়ই আমি (আল্লাহ) তোমাদের ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। তুমি ধৈর্যশীলদের শুভ সংবাদ দাও, যারা তাদের ওপর বিপদ আপতিত হলে বলে, আমরা তো আল্লাহরই জন্য এবং নিশ্চিতভাবে তার দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী।
(সুরা বাকারাহ, আয়াত : ১৫৫-১৫৬)। লেখক : ভাইস প্রিন্সিপাল, খাদিমুল ইসলাম মাদরাসা কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা