টানা ১২ দিন বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক খুলে দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুর ২টার পর থেকে ব্যবহারকারীরা কোনো ধরনের ভিপিএন অ্যাপ্লিকেশন ছাড়াই ফেসবুকে লগইন করতে পারছেন। এর আগে দুপুর ১টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কার্যালয়ে ব্রিফিং করে বিকেল থেকে সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
ওই সময় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, বৈঠক শেষে আমরা এ ব্রিফিং করছি। এটা শেষ হলেই ফেসবুক খুলে দেওয়া হবে। তখন ভিপিএন ব্যবহার কমবে। ইন্টারনেটে গতিও বাড়বে। ফেসবুকের ক্যাশ সার্ভার ঠিক হয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবে সবাই তা ব্যবহার করতে পারবেন। গত ১৮ জুলাই রাত ৯টার দিকে সারাদেশে ইন্টারনেট শাটডাউন করা হয়। ওই সময় থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোও বন্ধ ছিল। ২৩ জুলাই ব্রডব্যান্ড এবং ২৮ জুলাই মোবাইল ইন্টারনেট সচল করে দেওয়া হলেও বন্ধই ছিল মেটার চারটি প্ল্যাটফর্ম ও টিকটক। তবে এ সময় ইউটিউব চালু ছিল।
এদিকে, ফেসবুক বন্ধ থাকায় গত ১২ দিন চরম বিপাকে পড়েন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম-ভিত্তিক ই-কমার্সসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা। তাদের তথ্যমতে, প্রায় ২৫ লাখ মানুষ ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামভিত্তিক ব্যবসায় যুক্ত। তাদের আয়ের অন্যতম উৎসও এটা। ফলে দ্রুত ফেসবুক খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন তারা।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতার অসংখ্য ভিডিও ফেসবুক, টিকটকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। একই সঙ্গে এ পরিস্থিতিতে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ভুয়া, গুজব ও অপপ্রচার এবং যৌন হয়রানিমূলক কনটেন্টও। সরকারের পক্ষ থেকে বিটিআরসি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর কাছে এসব ভিডিও অপসারণের অনুরোধ করেছিল।
সরকারের অনুরোধ রেখে সবচেয়ে বেশি ভিডিও সরিয়েছে টিকটক। তারা গত ১০ দিনে সহিংসতা, ভুয়া ও হয়রানিমূলক ৬৭ শতাংশ ভিডিও টেকডাউন (অপসারণ) করেছে। আর ইউটিউব অপসারণ করেছে ২০ শতাংশ ভিডিও। সরকারের অনুরোধে সাড়া দিয়ে সবচেয়ে কম ভিডিও অপসারণ করেছে মেটা বা ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। তারা নিজেদের প্ল্যাটফর্ম থেকে মাত্র ১৩ শতাংশ ভিডিও সরিয়েছে। বৈঠক শেষে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, আমরা টিকটকের কাছে ৭ লাখ ভিডিও সরানোর অনুরোধ করেছিলাম। তারা অনুরোধ করা ৭ লাখ ভিডিও’র মধ্যে ৬৭ শতাংশ কনটেন্ট রিমুভ করেছে। ফেসবুকের কাছে যে সংখ্যক ভিডিও টেকডাউনের অনুরোধ ছিল, তার মধ্যে তারা ২০ শতাংশ সরিয়েছেন।
ফেসবুকে যারা বাংলাদেশের ফ্যাক্ট চেক করেন, তারা বিশেষ মতাদর্শের উল্লেখ করে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, এ কারণে গত ১০ দিনে তাদের প্ল্যাটফর্মে যে বৈষম্যমূলক কনটেন্ট প্রচার করা হচ্ছে, তা সরানোর অনুরোধ করলেও তারা তেমন সাড়া দেননি। মাত্র ১৩ শতাংশ ভিডিও তারা সরিয়েছেন। ফলে দেশে যে সহিংসতা হয়েছে এবং ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেই দায় তারা এড়াতে পারেন না।