নতুন স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের ১৭ সদস্যে নাম ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের এই ১৭ সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯ টায় শপথ গ্রহণ করেছেন। শপথ বাক্য পড়িয়েছেন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন।
অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের নাম জানা গেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টাসহ মোট ১৭ জন সদস্য থাকছেন এ সরকারে। এতে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে থাকছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১৭ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ আছেন শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্র্বতী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে আছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, মানবাধিকার সংগঠক আদিলুর রহমান খান, সিনিয়র আইনজীবী হাসান আরিফ, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন, পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুর্শিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুকী আজম বীর প্রতীক, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব. এম সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত সুপ্রদিপ চাকমা, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বিধান রঞ্জন রায়, শিক্ষাবিদ ড.আ.ফ.ম খালিদ হাসান, উবিনীগ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদা আখতার, গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরজাহান বেগম, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এর আগে দুপুর ২টা ১০ মিনিটে ইউনূসকে বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরের এসে সাংবাদিকদের সাথে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানান তিনি। তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশ একটা বড় পরিবার। এই পরিবারে আমরা একসঙ্গে চলতে চাই। আমাদের সাথে দ্বিধাদ্বন্দ্ব যা আছে সরিয়ে ফেলতে চাই। যারা বিপথে গেছে তাদের পথে আনতে চাই। যাতে করে একসাথে কাজ করতে পারি।
জানা যায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান হিসেবে শপথ নেয়ার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় থাকবেন। তার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা। ভেতরে আসবাবপত্র নতুনভাবে বসানো হচ্ছে। এই কাজগুলো করছে গণপূর্ত অধিদফতর (পিডব্লিউডি)। তবে যমুনা ভবনের সামনে এখনো নিরাপত্তা বেষ্টনী বসানো হয়নি। সেনাবাহিনী, আনসারসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে এক-এগারোর পট পরিবর্তনের পর সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমেদ যমুনায় ছিলেন। এর আগে, ১৯৯৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি হাবিবুর রহমান এবং ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা লতিফুর রহমান তাদের দায়িত্বের দিনগুলো রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যুমনাতেই ছিলেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা প্রস্তুত করা হচ্ছে। রাজধানীর মিন্টো রোডে অবস্থিত এ ভবনের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ গতকাল বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও সরকারি বাংলো পাচ্ছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্য উপদেষ্টারা। মন্ত্রিপাড়া হিসেবে পরিচিত মিন্টো রোড, বেইলি রোড ও হেয়ার রোডে সব মিলিয়ে ২০ বাংলো তাঁদের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সরকারি আবাসন পরিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র বলছে, এর আগে যাঁরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন, তাঁরা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনাতেই থেকেছেন। ১৯৯৬ সালে বিচারপতি হাবিবুর রহমান, ২০০১ সালে লতিফুর রহমান ও ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিন আহমেদ যমুনায় ছিলেন। গত মার্চে ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় এসে যমুনায় ওঠেন।
এ বিষয়ে সরকারি আবাসন পরিদপ্তরের পরিচালক শহীদুল ইসলাম ভূঞা প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রটোকল শাখা থেকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরই মধ্যে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা প্রধান উপদেষ্টার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ভবনের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু হয়েছে।
উপদেষ্টাদের জন্য ২০ সরকারি বাংলো বরাদ্দ
মন্ত্রিপাড়ার মোট ২০টি সরকারি বাংলো নতুন উপদেষ্টাদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এসব বাংলোতে সদ্য বিদায়ী সরকারের মন্ত্রীরা থাকতেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জাতীয় সংসদও বিলুপ্ত করা হয়েছে। সাবেক মন্ত্রীরা সবাই বাসভবন ছেড়ে দিয়েছেন। তবে তাঁদের মালামাল এখনো বাংলোতে রয়ে গেছে।
সাবেক মন্ত্রীদের রেখে যাওয়া মালামাল সরিয়ে নিতে তাঁদের একান্ত সচিবদের (পিএস) নির্দেশ দিয়েছে সরকারি আবাসন পরিদপ্তর। আগামী শনিবারের মধ্যে মালামাল সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। তবে পিএসরা বাসভবন থেকে মন্ত্রীদের মালামাল সরিয়ে নিতে অস্বস্তি বোধ করছেন বলে জানা গেছে। তাঁরা সাবেক মন্ত্রীদের গাড়িচালকদের পাঠাচ্ছেন। কিন্তু চালকদের কাছে মন্ত্রীদের বাসভবনের মালামাল বুঝিয়ে দিতে নারাজ আবাসন পরিদপ্তর। পিএসদের সশরীর এসে মালামাল বুঝে নিতে বলা হয়েছে। আগামী রোববার থেকে নতুন উপদেষ্টাদের জন্য বাংলো সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু হবে।
মিন্টো রোডে সদ্য সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক, সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান এবং সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আবদুর রহমান যেসব সরকারি বাংলোতে থাকতেন, সেগুলো নতুন উপদেষ্টাদের জন্য প্রস্তুত করা হবে।
বেইলি রোডে থাকা সদ্য সাবেক কৃষিমন্ত্রী আবদুস শহীদ, সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ও সাবেক ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের সরকারি বাংলো নতুন উপদেষ্টাদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
হেয়ার রোডে সরকারি বাংলোতে থাকতেন সদ্য সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন, সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুস সালাম, সাবেক ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ও সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। এসব বাংলোও নতুন উপদেষ্টাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ইস্কাটন গার্ডেনে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, ২০ নম্বর পার্ক রোডে সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি, গুলশানে অবস্থিত সাবেক যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক যেসব সরকারি বাড়িতে থাকতেন, সেগুলোও উপদেষ্টাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে কে কোন বাসায় উঠবেন, তা পরে ঠিক হবে।
অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের জন্য বাসভবন প্রস্তুত করতে আজ সকালে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিবকে চিঠি দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। চিঠি পাওয়ার পরই কাজ শুরু করে আবাসন পরিদপ্তর। এবার অন্তর্র্বতী সরকারের উপদেষ্টা হচ্ছেন ১৭ জন। বাকি তিনটি বাংলো প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের জন্য প্রস্তুত করা হবে।
আবাসন পরিদপ্তরের পরিচালক শহীদুল ইসলাম ভূঞা প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রিদের রেখে যাওয়া মালামাল সরিয়ে নিতে শনিবার পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এরপর সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু হবে। এতে বেশি সময় লাগবে না। যত দ্রুত সম্ভব, কাজ শেষ হবে। কোন উপদেষ্টাকে কোন বাংলো বরাদ্দ দেওয়া হবে, তা পরে নির্ধারণ করা হবে।