অবিস্মরণীয় এক গণঅভ্যুত্থানে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, গোপনে দেশত্যাগ করলে অবসান হয় পনের বছরের দোর্দ- প্রতাপের শাসন। বর্তমানে ভারতের রাজধানী দিল্লীর কোন এক অজানা স্থানে আত্মগোপনে আছেন শেখ হাসিনা। তার পতন ও ভারতে আশ্রয়ের পর সেখানকার প্রতিটি গণমাধ্যমের প্রধান শিরোনাম হয়েছে বাংলাদেশ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, শেখ হাসিনার পতন ও পলায়ন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মাদ ইউনূস’র দায়িত্ব গ্রহণসহ প্রতিটি বিষয়ে গুজবের প্রলয় উঠেছিলো ভারতের কিছু স্থানীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অবস্থা প্রেক্ষিতে ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক খবরে বিভ্রান্ত না হতে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে একটি সতর্কতামূলক পোস্টও করা হয়। ‘শান্ত থাকুন, শান্তি বজায় রাখুন’ শিরোনামে করা পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের পোস্টটিতে এ ধরনের একতরফা বিদ্বেষমূলক খবরকে ভারতের প্রেসকাউন্সিলের নিয়মাবলীর পরিপন্থী বলে আখ্যায়িত করা হয়।
প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের প্রতিটি দৈনিকেই শিরোনাম হচ্ছে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ। আজ আমরা জানবো কলকাতা থেকে প্রকাশিত চারটি প্রধান দৈনিকের সবশেষ খবরে কীভাবে তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ।
আনন্দবাজার পত্রিকা:
পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে প্রকাশিত
‘আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন’ বাংলাদেশ প্রসঙ্গে সবশেষ দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আনন্দবাজারের নয়াদিল্লিস্থ নিজস্ব সংবাদদাতার বরাত দিয়ে করা ‘আগেই হামলার ছক করেছিলো আইএসআই’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয় ‘শেখ হাসিনার দেশত্যাগের আগে থেকেই পরিকল্পিত ভাবে সংখ্যালঘুর উপর আক্রমণ শুরু করেছিল জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সঙ্গে পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের প্রশিক্ষিত ক্যাডারবাহিনী মিশে ছিল বলে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রে দাবি করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার কাছে খবর, ছাত্রদের সঙ্গে মিশে গিয়ে নরসিংদী-সহ বিভিন্ন জেলে হামলা করা হয় জামায়াতের জঙ্গিদের উদ্ধার করার জন্য।’ প্রতিবেদনের শুরুটা এভাবে হলেও শেষতক স্বীকার করা হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মাদ ইউনূস হিংসা, অত্যাচার থামানোর জন্য কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। আনন্দবাজারে করা আরেকটি প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হয়েছেন ‘সমস্যা নেই হাসিনা থাকলেও’। এই প্রতিবেদনটিতে ভারতে শেখ হাসিনার অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন হবে না বলে নিশ্চিত করা হয়।
বর্তমান পত্রিকা:
কলকাতা থেকে প্রকাশিত বর্তমান পত্রিকায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গে শেষ একদিনে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন করা হয়েছে। ‘আওয়ামী লীগের অবদান অনস্বীকার্য, বাংলাদেশে ফিরুন হাসিনা, উল্টো সুর অন্তর্র্বর্তী সরকারেই’। এই প্রতিবেদনটিতে বলা হয় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নাকি শেখ হাসিনার ব্যাপারে ভোলবদল করেছে। এখানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের কথার রেশ ধরে বলা হয় ‘অন্তর্র্বর্তী সরকার গঠন পর্বে বাংলাদেশের উপদেষ্টারা ভারত বিরোধিতার যে পর্যায়ে ছিলেন, তা থেকে তাঁরা ক্রমেই সরে আসছেন।’ বর্তমান পত্রিকার অন্য প্রতিবেদনগুলোর শিরোনাম করা হয়েছে ‘সেন্ট মার্টিন নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি মা, দাবি হাসিনা-পুত্রের’, ‘সরকারের আশ্বাস পেয়ে কাজে যোগ পুলিশ কর্মীদের’ এবং ‘হামলা বন্ধের দাবিতে পথে বিক্ষোভে হিন্দুরা, আজ বৈঠকে ইউনুস’।
আজকাল:
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আজকালের করা সবশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভের মুখে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের পদত্যাগ প্রসঙ্গ। এছাড়াও রয়েছে পল্লবী ঘোষের একটি ডেস্ক রিপোর্ট যার শিরোনাম করা হয়েছে ‘আমেরিকার ষড়যন্ত্রেই বাংলাদেশে অশান্তি ‘দেশে ফিরবই, নীরবতা ভেঙে জানালেন শেখ হাসিনা’।
সংবাদ প্রতিদিন:
কলকাতা থেকে প্রকাশিত ভারতীয় বাংলা দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন ‘মুজিবের দেশে’ নামক একটি বিভাগে প্রকাশ করছে বাংলাদেশ সম্পর্কিত খবরগুলো। এমনি একটি খবরের শিরোনাম হলো ‘মুজিবের হত্যার দিনেই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা আওয়ামী লীগের, হাসিনার দলকে কী বার্তা অন্তর্বর্তী সরকারের?’ এই প্রতিবেদনটিতে হাসিনা দেশত্যাগ করার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর হামলার প্রসঙ্গেও বলা হয়। সংবাদ প্রতিদিন থেকে করা আরেকটি সংবাদের শিরোনাম হলো ‘বাংলাদেশের সরকার পতনে আমেরিকার হাত! গুঞ্জনের মাঝেই বিবৃতি আমেরিকার’। প্রসঙ্গক্রমে এই সংবাদটিতে বলা হয়েছে বিশ্বের বহু দেশে সরকার পতনে এর আগেও আমেরিকার অদৃশ্য হাত সক্রিয় হতে দেখা গিয়েছে।
তবে একটি কথা বলতেই হয়, কলকাতা থেকে প্রকাশিত উল্লেখিত গণমাধ্যমের প্রতিটি সংবাদে একান্তভাবে তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে।