বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম প্রতিবাদী গান ছিল ‘আওয়াজ উডা বাংলাদেশ’। তরুণদের চেতনায় আগুন ধরিয়ে দেয় এই গান। একদিকে আন্দোলনরত মানুষের কাছ থেকে সাধুবাদ কুড়াচ্ছিলেন গানটির শিল্পী র্যাপার হান্নান ওরফে হান্নান হোসেন শিমুল। অন্যদিকে এই গানের জন্য আটক, গ্রেফতার ও রিমান্ডের মুখোমুখি হতে হয় শিল্পীকে। সম্প্রতি জানালেন, কীভাবে প্রায় ৩৬ ঘণ্টা নিখোঁজ ছিলেন তিনি।
গত ২৫ জুলাই নারায়ণগঞ্জের ভুইঘর এলাকা থেকে হান্নানকে আটক করে ফতুল্লা থানা পুলিশ। যদিও গণমাধ্যমে সেকথা স্বীকার করেননি ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। পরে তার জন্য রিমান্ডের আবেদন করলে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। প্রায় ১৩ দিন পর সম্প্রতি জেল থেকে ছাড়া পেয়ে হান্নান বলেন, ‘আমি যখন আটক হয়েছি, তখন থেকে ৩৬ ঘণ্টা আমার পরিবার জানতে পারেনি যে আমি আটক।’
হান্নান বলেন, ‘কী হচ্ছে, কোনো মামলা দিচ্ছে কি না, কেমনে কোথায় নেবে, বুঝতে পারছিলাম না। দেড় দিন পর যখন কারাগারে দিয়ে আসে, তখন বুঝতে পারলাম যে, এইখানে কিছুদিন থাকতে হবে। দিনগুলো খুব কষ্টকর হবে।’ কেমন ছিল দিনগুলো? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দিনুগলো
খুব খারাপ গেছে, খুব দুঃখজনক গেছে। কিন্তু যখন মুক্ত হয়েছি, তখন একটা সাহস নিয়ে বের হয়েছি, বল নিয়ে বের হয়েছি। বন্দী অবস্থায় কোনো খবর পাইনি। কিন্তু যখন বের হয়েছি, তখন বুঝলাম, ব্যাপারটা অন্য রকম হয়ে গেছে। কারাগারের ভেতরে তো ১৩ দিন কোনো তথ্য পাইনি। বের হওয়ার পর দেখি আমার ভাই ছিলেন। সে বলল, অনেকে আমাকে বের করতে সাহায্য করেছে।’ কারাগারে ১৩ দিন সাধারণ বন্দীদের মতোই কেটেছে হান্নানের। বন্দী দিনগুলোর কথা জানতে চাইলে হান্নান বলেন, ‘আমাকে একটু বেশি অত্যাচার করা হয়েছে। কারাগারের সাধারণ কয়েদিদের মতো আমাকে রাখা হয়নি। আমাকে একটা টাওয়ারে রাখা হয়েছিল। যেখান থেকে বের হওয়ার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। সাধারণ বন্দীরা তো ৭টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ঘুরে বেড়াতে পারতো। আমাকে ছোট একটা সেলে রাখা হয়েছিল। আমার সঙ্গে আরও দুজন ছিলেন। আমি বের হতে পারতাম না, শুধু তিনবেলা খাইতে পারতাম।’ কারাগার থেকে হান্নানের মুক্তির জন্য যারা ‘আওয়াজ’ তুলেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন ‘আওয়াজ উডা বাংলাদেশ’ গানের শিল্পী। তিনি বলেন, ‘আমি কারামুক্ত হওয়ায় আমার বাবা-মা অনেক খুশি। আমার মুক্তি এবং রিমান্ড ঠেকাতে যারা লড়াই করেছেন, অনেক শিল্পীরা, তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’ গত ১৮ জুলাই ‘আওয়াজ উডা বাংলাদেশ’ গানটি প্রকাশের পর দেশজুড়ে পরিচিতি পেয়ে যান এই র?্যাপার। প্রতিবাদী এই গানটি তার লেখা ও সুর করা। হান্নানকে গ্রেপ্তারের খবরে ঢাকার নির্মাতা, সংগীতশিল্পী, অভিনয়শিল্পীসহ অনেকে নিন্দা জানিয়েছেন। এ ছাড়াও তার মুক্তির জন্য সোচ্চার হয়েছিল আর্টিস্ট অ্যাট রিস্ক কানেকশন (এআরসি) নামের একটি সংগঠন। এটি এশিয়ার শিল্পীদের সুরক্ষা ও শৈল্পিক স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করে।