কিংবদন্তি ভারতীয় অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আর নেই। প্রায় দেড় মাস হাসপাতালে নানান ধরনের জটিলতার সঙ্গে লড়ে রবিবার কলকাতার স্থানীয় সময় দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে সৌমিত্রর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। হাসপাতালের বরাত দিয়ে খবরটি নিশ্চিত করেছে আনন্দবাজার পত্রিকা। গত ৬ অক্টোবর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন অভিনেতা। করোনা আক্রান্ত অবস্থায় তাকে কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্লাজমা থেরাপির পর তার করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। সেই সঙ্গে চিকিৎসাতেও সাড়া দিতে থাকেন তিনি। কিন্তু আচমকাই তার শারীরিক অবস্থা সংকটজনক হয়ে পড়ে। এর পর অনেক দিন পুরোপুরি ভেন্টিলেশনে ছিলেন তিনি। শুক্রবার থেকে সৌমিত্রর শারীরিক অবস্থার আশঙ্কাজনক অবনতি ঘটতে থাকে। হৃদযন্ত্র আর কিডনির জটিলতা অনেকটা বেড়ে যায়। বেড়ে যায় ‘হার্ট রেট’। বাড়তে থাকে স্নায়বিক সমস্যাও। প্রবলভাবে ওঠানামা করতে থাকে অক্সিজেনের মাত্রা। অবশেষে চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে রবিবার দুপুরে মারা যান তিনি। এর আগের দিনই হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, অলৌকিক কিছুর ওপর ভরসা করছেন তারা। সৌমিত্রর পরিবারের আদি বাড়ি ছিল অধুনা বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কাছে কয়া গ্রামে। তিনি ১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ায় জন্মগ্রহণ করেন।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমহার্স্ট স্ট্রিট সিটি কলেজে সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেন সৌমিত্র। বড়পর্দায় তার সর্বপ্রথম কাজ বিশ্ব বিখ্যাত নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ ছবিতে নাম ভূমিকায়, যা ১৯৫৯ সালে নির্মিত হয়। এর আগে রেডিওর ঘোষক ছিলেন সৌমিত্র এবং মঞ্চে ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করতেন। সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেন অভিনেতা। পরবর্তীকালে মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় করের মতো পরিচালকদের সঙ্গেও কাজ করেছেন। সিনেমা ছাড়াও নাটক, যাত্রা ও টিভি ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। লিখেছেন নাটক-কবিতা লিখেছেন, নাটক পরিচালনাও করেছেন। আবৃত্তিকার হিসেবেও তার পরিচিতি ছিল।
ছয় দশকের বেশি সময় বিনোদনের সঙ্গে যুক্ত ছিল সৌমিত্র। উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে আছেÍ অপুর সংসার, ক্ষুধিত পাষাণ, দেবী, স্বরলিপি, তিনকন্যা, পুনশ্চ, অতল জলের আহ্বান, অভিযান, বর্ণালী, প্রতিনিধি, চারুলতা, আকাশকুসুম, মনিহার, হঠাৎ দেখা, অজানা শপথ, অরণ্যের দিনরাত্রি, বসন্ত বিলাপ, অশনি সংকেত, দত্তা, জয় বাবা ফেলুনাথ, দেবদাস, গণদেবতা ও হীরক রাজার দেশে।
স্ক্রিনটেস্ট থেকে বাদ পড়েছিলেন রেডিও ঘোষক সৌমিত্র: রেডিও ঘোষক হয়ে শুরু, আর কলকাতার বাংলা ছবির কিংবদন্তি হয়ে তার মৃত্যু। কিন্তু সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় প্রথম ছবির স্ক্রিনটেস্ট থেকে বাদ পড়েছিলেন। ছয় দশকের লম্বা ক্যারিয়ার তার। কখনোই হাল ছাড়েননি তিনি। মৃত্যুর কাছেও বিনা যুদ্ধে সমর্পণ করলেন না, হাসপাতালে প্রায় দেড় মাস লড়ে মারা যান রবিবার। বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। গত ৬ অক্টোবর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন অভিনেতা। করোনা আক্রান্ত অবস্থায় তাকে কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্লাজমা থেরাপির পর তার করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। সেই সঙ্গে চিকিৎসাতেও সাড়া দিতে থাকেন তিনি। কিন্তু আচমকাই তার শারীরিক অবস্থা সংকটজনক হয়ে পড়ে। এর পর অনেক দিন পুরোপুরি ভেন্টিলেশনে ছিলেন তিনি। শুক্রবার থেকে সৌমিত্রর শারীরিক অবস্থার আশঙ্কাজনক অবনতি ঘটতে থাকে। হৃদ্যন্ত্র আর কিডনির জটিলতা অনেকটা বেড়ে যায়। বেড়ে যায় ‘হার্ট রেট’। বাড়তে থাকে স্নায়বিক সমস্যাও। প্রবলভাবে ওঠানামা করতে থাকে অক্সিজেনের মাত্রা। নাটকে হাতেখড়ি বাড়িতেই। ঠিক অপুর মতোই কম বয়সেই চলে আসা কলকাতায়। সেখানেই বাংলা সাহিত্যে হাতেখড়ি। এই সময়েই থিয়েটারের সঙ্গে একটা অবিচ্ছেদ্য নাড়ির যোগ তৈরি হয়। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আজীবন থিয়েটার গুরু মানতেন শিশির ভাদুড়িকে। তার দেখানো পথকেই আজীবন পাথেয় মেনেছিলেন। সত্যজিতের কাছে আসার আগে অভিনেতা হিসেবে প্রস্তুতি হয়েছিল শিশির ভাদুড়ির কাছে এসেই।
‘জলসাঘর’ ছবির লোকেশনে এসে সত্যজিৎ রায়ের কাছাকাছি আসেন সৌমিত্র। সোনা চিনতে দেরি করেননি জহুরি। ‘অপুর সংসার’ ছবি দিয়েই শুরু হয় সিনেমার মহাযাত্রা। শুধু সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গেই চৌদ্দটি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। তত দিনে অবশ্য ‘নীলাচলে মহাপ্রভু’র মতো উল্লেখযোগ্য ছবির স্ক্রিনটেস্ট থেকে বাদ পড়েছেন। শুধু সত্যজিৎ নন, তপন সিনহা, তরুণ মজুমদারদেরও প্রিয় অভিনেতা ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। পরিচালকদের সঙ্গে সম্পর্কের সেই রসায়ন শেষদিন পর্যন্ত বজায় ছিল। সৌমিত্রর পরিবারের আদি বাড়ি ছিল বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কাছে কয়া গ্রামে। তিনি ১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমহার্স্ট স্ট্রিট সিটি কলেজে সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেন সৌমিত্র। সৌমিত্রর উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে আছে অপুর সংসার, ক্ষুধিত পাষাণ, দেবী, স্বরলিপি, তিনকন্যা, পুনশ্চ, অতল জলের আহ্বান, অভিযান, বর্ণালী, প্রতিনিধি, চারুলতা, আকাশকুসুম, মনিহার, হঠাৎ দেখা, অজানা শপথ, অরণ্যের দিনরাত্রি, বসন্ত বিলাপ, অশনি সংকেত, দত্তা, জয় বাবা ফেলুনাথ, দেবদাস, গণদেবতা ও হীরক রাজার দেশে। ২০০৪ সালে তাকে পদ্মভূষণে সম্মানিত করা হয়। এ ছাড়া পেয়েছেন ফরাসি সর্বোচ্চ সম্মান লিজয়ন দি অনার। তার ঝুলিতে রয়েছে তিনবার জাতীয় পুরস্কার জেতার বিরল কৃতিত্ব। পেয়েছেন সংগীত নাটক অ্যাকাডেমি, দাদা সাহেব ফালকের মতো পুরস্কারও। ২০১৭ সালে বঙ্গবিভূষণ পুরস্কার দেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
নাটকেও তার সাফল্য ছিল আকাশছোঁয়া। ‘হোমাপাখি’র মতো মঞ্চসফল নাটক কলকাতার দর্শকেরা কখনো ভুলবে না। তার সাহিত্যপ্রীতির কথা সুবিদিত। এক্ষণ পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন দীর্ঘদিন। আজীবন বামপন্থায় আস্থা রেখেছিলেন সৌমিত্র। নাটক-সেলুলয়েড-সাহিত্য সব মিলিয়ে এক বর্ণময় জীবনের সমাপ্তি ঘটল রবিবারের ছুটির দিনে।