জীবিকা নির্বাহে আমাদের নানাবিধ কাজকর্ম করতে হয়। কেউ চাকরি করেন আবার কেউ ব্যবসায় করে থাকে। রিজিক অন্বেষণের অন্যতম মাধ্যম হলো ব্যবসায়। মুক্ত পেশা হিসেবে অনেকে এ পথ বেছে নেয়। আল্লাহ সুবহানা ওয়া তায়ালা ব্যবসায়কে হালাল করেছেন। সূরা বাকারাহ ২৭৫ আয়াতে আল্লাহ স্বয়ং বলেন-‘আল্লাহ ব্যবসায়কে হালাল এবং সুদকে হারাম করেছেন।’ ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যবসায়কে মহৎ পেশা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
একবার এক লোক হজরত মুহাম্মদ সা:-এর কাছে এসে উত্তম পেশা সম্পর্কে জানতে চাইল। সে বলল, কোন ধরনের উপার্জন উত্তম? নবীজি উত্তরে বলেন, ‘ব্যক্তির স্বহস্তে অর্জিত অর্থ এবং সৎ ব্যবসায়।’ (সুয়ুতি আদ-দুররুল মানসুর)
ইসলামের নবী ও রাসূলরা ব্যবসার সাথে যুক্ত ছিলেন। জীবিকা নির্বাহে কৃষিকাজ, পশুপালন, কাঠমিস্ত্রীর পাশাপাশি কেউ কেউ ব্যবসায় করেছেন। হজরত হুদ আ:, হজরত ইবরাহিম আ:, হজরত ইলিয়াস আ: এবং রাসূলুল্লাহ সা: ব্যবসায় করছেন সৎ ও নিষ্ঠার সাথে। কেননা, নিষ্ঠার সাথে ব্যবসায় করা ফরজ এবং ইবাদতের শামিল।
ব্যবসায়ীদের মর্যাদা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘সৎ ও আমানতদার ব্যবসায়ীরা হাশরের দিন নবী, শহীদ ও সত্যবাদীদের সাথে অবস্থান করার সৌভাগ্য অর্জন করবে।’ (তিরমিজ- ১২০৯)
হাশরের কঠিন মুহূর্তে যখন মানুষ দিশেহারা থাকবে, দিগি¦দিক ছুটবে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য, সে কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহ তায়ালা ব্যবসায়ীদের সম্মানিত করবেন। নিরাপদ আশ্রয় দেবেন। সম্মান দান করবেন। সব ভয় দূর করে দেবেন। প্রশ্ন হলো- কারা সেই ব্যবসায়ী? আল্লাহ তায়ালা ব্যবসায়ীদের প্রতি বিভিন্ন সূরাতে নির্দেশনা দিয়েছেন তাদের আচরণ কেমন হবে।
সূরা আশ শুয়ারার (১৮১-১৮৩) আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-‘তোমরা ওজনে পরিপূর্ণ দেবে। মাপে কম দিয়ে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। ওজনের সময় সঠিক দাঁড়িপাল্লায় ওজন করো। আর লোকদের কখনো তাদের প্রাপ্য জিনিস কম দেবে না।’
ক্রেতার সাথে কখনোই প্রতারণার আশ্রয় নেয়া যাবে না পণ্য সম্পর্কে সঠিক তথ্য ও দাম নির্ধারণ করতে হবে। হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা: প্রতারণাকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ‘রাসূলুল্লাহ সা: একবার খাদ্যপণ্যের একটি স্তূপের মধ্যে হাত প্রবেশ করালে কিছুটা আর্দ্রতা অনুভব করেন, তিনি খাদ্যশস্যের মালিককে বলেন, কী ব্যাপার এ খাদ্যশস্য ভিজা কেন? তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল! এ খাদ্যশস্যের ওপর বৃষ্টির পানি পড়েছিল। রাসূল সা: বলেন, তবে ভিজে যাওয়া পণ্য ওপরে রাখলেনা কেন, যাতে মানুষ তা দেখতে পেত? এরপর তিনি বলেন, শোনো, ‘যে প্রতারণা করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (মুসলিম-২৪৮)
সৎ ব্যবসায়ীদের জন্য পুরস্কারের সাথে অসৎ ব্যবসায়ীদের জন্য শাস্তি ঘোষণা করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘তিন শ্রেণীর লোকের সাথে আল্লাহ কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদের প্রতি দৃষ্টি দেবেন না এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন না। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আবু যার বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কারা নিরাশ ও ক্ষতিগ্রস্ত? তিনি বললেন, ‘টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী, উপকার করে খোঁটা প্রদানকারী এবং ওই ব্যবসায়ী যে মিথ্যা শপথ করে পণ্য বিক্রি করে।’ (মুসলিম-১০৫)। পরকালে আল্লাহ তায়ালার পুরস্কার এবং রাসূলুল্লাহ সা:-এর দিদার লাভের জন্য সদ্ভাবে ব্যবসায় পরিচালনা করতে হবে। দুনিয়া হলো পরীক্ষা কক্ষ যার ফল আল্লাহ আখিরাতে দেবেন। আমাদের সবার উচিত সততার সাথে ব্যবসায় পরিচালনা করা। কেননা, মানুষের হক যারা নষ্ট করে আল্লাহ তায়ালা তাদের ক্ষমা করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সেই ব্যক্তি তাকে ক্ষমা করে। লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ