সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ০৫:৪৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
কয়রায় উপকুলের মানুষ নানান প্রতিকুলতার মধ্যে সংগ্রাম করেই বেঁচে থাকে কাপাসিয়ায় ৫০ জন সহকারী শিক্ষকের যোগদান : ফুলেল শুভেচ্ছা কমলগঞ্জে ইসলামী যুব মজলিসের আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল হতদরিদ্র পরিবারের সদস্যদের মাঝে আর্থিক এবং সঞ্চয় ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণ নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধের দাবিতে শ্রীমঙ্গলে সনাক-টিআইবির মানববন্ধন ফটিকছড়িতে ইফতার মাহফিলে অধ্যক্ষ নুরুল আমিন আমরা ইনসাফপূর্ণ রাষ্ট্র গঠন করতে চাই মাদারীপুরে খেলাফত মজলিসের যুগ্ম-মহাসচিব আতাউল্লাহ আমীন একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন করার জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রার্থী দেয়া হবে জামালপুর প্রেসক্লাবের উদ্যোগে দোয়া ও ইফতার মাহফিল খুলনা জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা নওগাঁয় ২৫০ জন কুরআনের হাফেজকে সংবর্ধনা

নারী ফুটবলার গর্বিত পরিচয়

স্পোর্টস ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৮ মার্চ, ২০২৫

‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ সমাজের প্রতিনিধিদের প্রায় অর্ধেক-নারীদের কাজের মূল্যায়ন ও তাদের গুরুত্ব বোঝাতে কথাটি বলেছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। কবির ইহকাল ত্যাগের ৪৯ বছর পরও পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে সে কথাটি উচ্চারিত হয় অধিকারের সমতা ও নারী ক্ষমতায়ন আলাপের প্রতিটি ক্ষেত্রে। কিন্তু বাঙালী নারীদের একটি অংশ নজরুলের সে কথার প্রতিবাদ করতেই পারেন। কারা সেই নারী, যারা বাংলাদেশের জাতীয় কবির অধিক জনপ্রিয় কথাটিরও প্রতিবাদ জানাতে পারেন?
বাংলাদেশের ফুটবলাঙ্গনের নারীরা। হ্যাঁ, তারাই কবিকে নিঃসংকোচে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন। যারা শুধু পুরুষ ফুটলারদের সমানই নন, বরং পুরুষদের ছাড়িয়ে চলে গেছেন অনেক উর্ধ্বে। যারা পুরুষদের তুলনায় বাংলাদেশকে অনেক বেশি কিছু দিয়েছেন। যে অর্জন এখন ৫৬ হাজার বর্গমাইলের লাল-সবুজ দেশের অহংকার, গর্বিত পরিচয়। পৃথিবীতে একটি সময় ছিল, যখন নারী বলে পরিচয় দেওয়াই ছিল অসম্মানের। কন্যা সন্তানের পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করতে হতো বাবাকে। সেখানে আজ বাংলা মায়ের মেয়েরাই তার বড় পরিচয়।
কীভাবে সৃষ্টি হলো এমন পরিচয়ের, সেই গল্প শোনা যাক-
৭টি দেশ নিয়ে গড়া দক্ষিণ এশিয়ার সেরা ও সফল দল এখন বাংলাদেশের নারীরা। আঞ্চলিক ফুটবলের এ মুহূর্তে চারটি শিরোপাই তাদের হাতে। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম আর দেশ-মাতৃকার অনুপ্রেরণায় অর্জিত মুকুটগুলো কোহিনূর হীরার মতোই অনূর্ধ্ব-১৬, অনূর্ধ্ব-১৯, অনূর্ধ্ব-২০ ও জাতীয় নারী দলের মাথায় জ্বলজ্বল করছে। এর আগেও বয়সভিত্তিক বেশ কয়েকটি ট্রফি জিতেছে বাংলাদেশের মেয়েরা।
গেল বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনূর্ধ্ব-১৯ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জেতে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় ২২ গুণ বড় একটি ভূখ- থেকে বাছাই করা একটি দল ভারত। সেই শক্তিশালী দলের বিপক্ষে শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই করে ১-১ সমতায় খেলার মূল সময় শেষ করেছিলেন মোসাম্মৎ সাগরিকা ও আফেঈদা খন্দকাররা। এরপর টাইব্রেকারে ১১-১১ সমতা ধরে রেখে ভারতের সঙ্গে যৌথ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন তারা।
পরের মাসে (মার্চে) অনূর্ধ্ব-১৬ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নেপালের কাঠমান্ডুতে সেই ভারতকেই ফাইনালে মোকাবেলা করেছিল বাংলাদেশ। এবার আর শিরোপা ভাগাভাগি নয়, ভারতকে হারিয়েই দিয়ে এককভাবে শিরোপা ঘরে তুলেছিলেন সৌরভী আকন্দ প্রীতি ও ইয়ারজান বেগমরা। ১-১ সমতায় মূল খেলা করার পর টাইব্রেকারে ভারতকে ৩-২ ব্যবধানে হারান বাংলাদেশি কিশোরীরা। অনূর্ধ্ব-১৬ প্রতিযোগিতায় এটি ছিল বাংলাদেশের দ্বিতীয় শিরোপা। প্রথমটি জিতেছিল ২০১৭ সালে। অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ২০২৩ সালে। ঘরের মাঠে আয়োজিত ওই আসরে নেপালকে ৩-০ গোলে হারিয়েছিল লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জড়ানো মেয়েরা। ওই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আয়োজিত টুর্নামেন্টে ভারত হয়েছিল তৃতীয় আর ভুটান চতুর্থ। এখন পর্যন্ত পরবর্তী আসর অনুষ্ঠিত না হওয়ায় বাংলাদেশ ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন।বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে সফলতা এসেছিল ২০২২ সালে। কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবার সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ নারী জাতীয় দল। সাড়ে ১৫ হাজার স্বাগতিক দর্শকদের স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন শামসুন্নাহার জুনিয়র ও কৃষ্ণা রাণীরা। দুই বছর পর বিরতি দিয়ে পরের আসরে ২০২৪ সালে একই ভেন্যুতে সেই নেপালকে হারিয়ে (২-১) টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ।
নারীদের এত অর্জনের মধ্যে পুরুষ ফুটবলারদের একমাত্র অর্জন ২০০৩ সালে মালদ্বীপকে হারিয়ে সাফ জয়। পরের আসর ২০০৫ সালে ফাইনালে উঠলেও ভারতের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। এরপর আরও ৮টি আসর অনুষ্ঠিত হলেও বাংলাদেশ জাতীয় পুরুষ দল একবারও ফাইনালে উঠতে পারেনি। দুঃখের বিষয় হলো- বেশি অর্জন থাকলেও পুরুষদের তুলনায় নারী ফুটবলারদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় কম। বিভিন্ন সময় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও নীতি নির্ধারণের সময় নানা প্রতিবন্ধকতায় সেটি অগোচরেই থেকে যায়। তাই ফুটবলের দুই বিভাগে অজানা কারণেই বৈষম্য থেকে যায়। বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন, নারীদের যদি আরও সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে তাদের অর্জনের তালিকা আর লম্বা হবে। সাফল্যের মুকুটে যোগ হবে নতুন নতুন পালক। নারীদের ফুটবল হবে আরও সমৃদ্ধ। তবে রাষ্ট্রীয়ভাবে কবে কখন সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হবে, তাই এখন দেখার বিষয়।২০২৫ সালের বিশ্ব নারী দিবসে হোক একটি প্রতিজ্ঞা। যে প্রতিজ্ঞায় নারী ফুটবলের চলমান বৈষম্য চিরতরে দূরীকরণের প্রতিশ্রুতি থাকবে। মেয়েদের ফুটবলকে আরও সমৃদ্ধশালী করতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি থাকবে। নারীদেরও ধরা হবে দেশপ্রেমের প্রতীক।
এ বছর নারী দিবসের প্রতিপাদ্য-‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন নারী ও কন্যার উন্নয়ন’কে ধারণ করে নারী ফুটবলারদের প্রতি প্রাপ্য সম্মান ও সহযোগিতা বজায় থাকুক, সেটাই প্রত্যাশা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com