রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ১১:২১ পূর্বাহ্ন

জিনিয়ার মায়াবী হাসি: ছড়িয়ে পড়েছে প্রেমিক হৃদয় থেকে কৃষিখাতে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৬ মে, ২০২৫

উজ্জ্বল, বাহারি ফুল জিনিয়া। মূলত বাহারি রঙের জন্যই এটি সুপরিচিত। জিনিয়ার বৈচিত্র্যময় রঙ – লাল, হলুদ, বেগুনি, কমলা, সাদা ইত্যাদি। এটি একটি কাট ফ্লাওয়ার। জিনিয়ার স্থায়িত্ব ভালো হওয়ায় ফুলদানিতে সাজানোর জন্য এবং তোড়া তৈরির জন্য এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সাজসজ্জার কাজেও এর ব্যবহার করা হয়।
জিনিয়ার ফুল মধু সংগ্রহকারী মৌমাছি, প্রজাপতি এবং অন্যান্য পরাগায়নকারী পোকামাকড়কে আকর্ষণ করে।
জিনিয়ার কেবল সৌন্দর্যগত দিকই নয়, বাংলাদেশে এর রয়েছে অর্থনৈতিক গুরুত্বও। জিনিয়ার চাষ এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষিখাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। জিনিয়ার মায়াবী হাসির সৌরভ ছড়িয়ে পড়েছে সমঝদার হৃদয় থেকে প্রান্তিক কৃষিখাত পর্যন্ত।
পৃথিবীর ফুসফুস যদি হয় আমাজন, তবে ঢাকার ফুসফুস নিঃসন্দেহে রমনা পার্ক। রাজধানীর কোলাহল আর ইট পাথরের ভিড়ে সবুজে ঘেরা পার্ক যেন নগর জীবনের এক টুকরো প্রশান্তি।
শত বছরের ইতিহাস নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রমনা পার্ক শুধু কেবল বিনোদন কেন্দ্রই নয়, এ যেন সবুজের এক মায়াবী হাতছানি। কারণ এখানে রয়েছে দুর্লভ ও বিদেশি বাওবাব, ভাদ্রা, অশোক, কুরসি, এসকালেটের মতো কিছু বৃক্ষ ও ফুল। রমনায় ঘুরে ঘুরে এইসব গাছের দেখা মিললেও বাহারী রঙের জিনিয়া ফুল দেখতে হলে যেতে হবে পার্কটির নার্সারিতে। রমনার নার্সারিতে এখন যেন রঙের মেলা বসেছে। সেই রঙের রাজ্যে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে যে ফুলটি, সেটি হলো জিনিয়া। গাঢ় গোলাপি, হালকা বেগুনি, সাদা কিংবা হলুদ প্রতিটি রঙের জিনিয়ার দেখা মিলবে নার্সারির ঠিক মাঝখানে।
জিনিয়া ফুলের উৎপত্তি মেক্সিকোতে। এই ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম – জিনিয়া ইলিগান্স। নামটি এসেছে জার্মান উদ্ভিদবিজ্ঞানী জোহান গোডফ্রেড জিন এর নাম থেকে। অ্যাস্টারেসি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত একটি বিরুৎ প্রজাতির উদ্ভিদ। প্রথমে এই ফুলের প্রজাতি সীমিত ছিল। কিন্তু উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা ক্রস-ব্রীডিংয়ের মাধ্যমে নতুন প্রজাতি তৈরি করেন। যার ফলে বর্তমানে বিভিন্ন রঙ ও আকৃতির জিনিয়া ফুল পাওয়া যায়।
বর্তমানে মেক্সিকোর এই মনোরম ফুলটি এখন সারা পৃথিবীতে চাষ করা হয়। অন্তত ২০ প্রজাতির জিনিয়া এ যাবৎকালে চিহ্নিত হয়েছে । জিনিয়া শীতকালীন ফুল হলেও সারাবছর এর চাষ করা যায়। বীজের মাধ্যমে এটির বংশ বিস্তার করা সম্ভব। সাধারণত জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে অক্টোবর মাসে এ ফুলের বীজ বপন এবং চারা রোপণের উপযুক্ত সময়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শাহরিয়ার আহম্মেদ বলেন, ‘বাংলাদেশের আবহাওয়া ও মাটির গুণগত বৈশিষ্ট্য জিনিয়া ফুল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। বর্তমানে দেশের ফুলের বাজার প্রায় হাজার কোটি টাকারও বেশি, যেখানে জিনিয়া ফুল একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি করেছে । বিশেষ করে বিভিন্ন উৎসব-পার্বণ, বসন্ত উৎসব, ভালোবাসা দিবস, পহেলা বৈশাখ, পূজা, বিয়েসহ অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে জিনিয়া ফুলের চাহিদা থাকে। বর্তমানে জিনিয়া ফুল চাষ একটি লাভজনক কৃষি খাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অনেক কৃষক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে জিনিয়া চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। যার ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে, বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের জন্য এক ভালো আয়ের উৎস। দেশের প্রায় ২০ জেলায় বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষ হয়, যার মধ্যে জিনিয়াও অন্যতম।’
তিনি আরও বলেন, ‘জিনিয়া ফুলের আরেকটি বড় দিক হচ্ছে এর পরিবেশগত গুরুত্ব। এটি শুধু যে বাগান বা বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে তাই নয়, পরাগায়নকারী পতঙ্গকে আকর্ষণ করে কৃষি পরিবেশে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া এটি কাট ফ্লাওয়ার হিসেবেও খুবই জনপ্রিয়, কারণ দীর্ঘ সময় ধরে তাজা থাকে এবং নানা অনুষ্ঠানে ব্যবহার উপযোগী।’

গবেষণা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে জিনিয়ার সম্ভাবনা নিয়েও অধ্যাপক শাহরিয়ার বলেন ‘কৃষি ও উদ্যানতত্ত্বের শিক্ষার্থীদের জন্য এটি ব্যবহারিক শিক্ষার একটি ভালো উৎস, যেখানে তারা ফুল চাষের পদ্ধতি ও পরিচর্যা সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে।’
তবে এই খাতকে এগিয়ে নিতে দরকার উন্নত বীজ, আধুনিক চাষ পদ্ধতির প্রশিক্ষণ এবং বাজারজাতকরণে সহযোগিতা । বাংলাদেশের অনুকূল আবহাওয়া এবং ফুলের ক্রমবর্ধমান চাহিদা জিনিয়া চাষের জন্য বিশাল সম্ভাবনা তৈরি করেছে। সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে জিনিয়া বাংলাদেশের অর্থনীতি ও জীববৈচিত্র্যে আরও বড় অবদান রাখতে পারে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com