রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ১১:৩৬ পূর্বাহ্ন

গাজার মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ: জাতিসংঘ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ১ জুন, ২০২৫

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রদানকারীরা গাজা অব্যাহত বিমান হামলা, অপুষ্টি, বাস্তুচ্যুতি এবং জনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে বিপর্যস্ত পরিস্থিতিকে বিপর্যয়কর এবং ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ বলে বর্ণনা করেছেন। গতকাল শনিবার (৩১ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়া। প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার (৩০ মে) জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় অফিস (ওসিএইচএ) এক বিবৃতিতে জানায়, বৃহস্পতিবার (২৯ মে) জাতিসংঘ ও এর মানবিক অংশীদারদের কাছ থেকে ত্রাণবাহী পাঁচটি ট্রাক গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে, যা গত চার দিনের মধ্যে প্রথম প্রবেশ। একই চেকপয়েন্ট, কেরেম শালোম/কারেম আবু সালেম ক্রসিং থেকে আরো ৬০টি ট্রাককে ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এলাকায় তীব্র সংঘর্ষের কারণে ত্রাণের ট্রাকগুলোকে লোডিং জোনে ফিরে যেতে হয়েছিল।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের প্রধান মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, ক্রসিংয়ের আশেপাশের এলাকাটি এমন একটি এলাকা যেখানে প্রচুর সশস্ত্র দল কাজ করছে, বিশেষ করে নো ম্যানস ল্যান্ডে, যা ক্রসিং থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তিনি বলেন, “পাঁচটি ট্রাক চিকিৎসা সরঞ্জাম বহন করছিল, যা দেইর আল-বালাহের ফিল্ড হাসপাতালের জন্য ছিল এবং আজ (শুক্রবার) বেশিরভাগ সরবরাহ লুট করা হয়েছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।”ওসিএইচএ জানিয়েছে, গাজায় প্রায় ৮০ দিন ধরে খাবার, ওষুধ, পানি, জ্বালানিসহ সব ধরনের সরবরাহে ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞার পর ফিলিস্তিনি ভূখ-টিতে মানবিক চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন গাজা উপত্যকায় সবচেয়ে সীমিত পরিমাণে সাহায্য প্রবেশ করছে, যা ২১ লাখ মানুষকে সহায়তার জন্য যথেষ্ট নয়।
ওসিএইচএ’র মুখপাত্র জেন্স লারকে বলেছেন, “গাজা এখন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুধার্ত এলাকা। এই ভূখ-টি একমাত্র সংজ্ঞায়িত এলাকা- একটি দেশ বা একটি দেশের মধ্যে সংজ্ঞায়িত অঞ্চল- যেখানে পুরো জনসংখ্যা দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে। জনসংখ্যার একশ শতাংশ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে।”
ওসিএইচএ বলছে, জাতিসংঘ ও তার অংশীদাররা স্থল চ্যালেঞ্জ এবং গাজায় সহায়তার পরিমাণ ও ধরনের উপর ইসরায়েলের কঠোর বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও, অসহায় মানুষদেরকে জন্য কাজ করছে।
যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত ও ইসরায়েল সমর্থিত ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন’ গত সপ্তাহে গাজায় তাদের ত্রাণ কার্যক্রম চালু করেছে। তবে জাতিসংঘের কাছে তাদের কার্যক্রমের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই।
ওসিএইচএ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় হাসপাতাল ও এর আশেপাশে বারবার হামলা চালিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ গাজায় আংশিকভাবে চালু থাকা সর্বশেষ হাসপাতাল ‘আল আওদা’ খালি করতে বাধ্য করেছে। দেইর আল-বালাহতে আল বুরেইজ ও আন নুসেইরাত ক্যাম্প এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে।
জাতিসংঘের সংস্থাটি আরো জানিয়েছে, এই সপ্তাহের শুরুতে একটি হামলায় একজন সাংবাদিকের পরিবারের নয়জন সদস্য নিহত এবং আরো ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
ওসিএইচএ’র তথ্যানুসারে, গাজায় খাবার ও পুষ্টিকেন্দ্র পরিচালনাকারী আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা আইএইচএইচ বুধবার (২৮ মে) জানিয়েছে, গত দুই দিনে তাদের পাঁচজন কর্মী নিহত এবং দুজন আহত হয়েছেন।
ওসিএইচএ জোর দিয়ে বলেছে, গাজায় সাহায্যকর্মীসহ বেসামরিক নাগরিকদের সর্বদা সুরক্ষিত রাখতে হবে।
মানবিক সহায়তাকারীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি হামলায় গাজা জুড়ে বাস্তুচ্যুতি অব্যাহত রয়েছে, গত দুই সপ্তাহে প্রায় ২ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। বৃহস্পতিবার, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ গাজার মোট ভূখ-ের প্রায় ৩০ শতাংশ- উত্তর গাজা, গাজা শহরের পূর্ব অংশ এবং দেইর আল-বালাহকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি পুনর্নবীকরণকৃত বাস্তুচ্যুতির আদেশ জারি করেছে।
মানবিক পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হওয়ায় গাজায় জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ভেঙে পড়ছে। ওসিএইচএ জানিয়েছে, একদল সশস্ত্র ব্যক্তি দেইর আল-বালাহের একটি ফিল্ড হাসপাতালের গুদামে হামলা চালিয়ে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের চিকিৎসা সরঞ্জাম, খাবার, ওষুধ ও পুষ্টিকর পরিপূরক লুট করেছে।
ওসিএইচএ বলছে, “যারা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে ও লুট করেছে তাদের জবাবদিহি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানবিক চাহিদা পূরণ এবং লুটপাট কমাতে, গাজায় আরো সাহায্য ও প্রয়োজনীয় বাণিজ্যিক পণ্য পৌঁছে দেওয়া এবং পুরো উপত্যকায় তাদের নিরাপদ বিতরণ সহজতর করা অপরিহার্য। এর অর্থ হলো, একাধিক ক্রসিং ও রুটের মাধ্যমে আরো বেশি জরুরি সাহায্যে সরবরাহ করা। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর ওপর থেকে নিষোধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা।”
ওসিএইচএ জানিয়েছে, দখলদার শক্তি হিসেবে ইসরায়েলের গাজায় জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা পুনরুদ্ধারের প্রাথমিক দায়িত্ব রয়েছে, যা অবশ্যই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। অফিসটি পরামর্শ দিয়েছে, গাজার বেসামরিক পুলিশকে আইন প্রয়োগকারী মানদ-ের অধীনে কাজ করার অনুমতি দেওয়া উচিত।
পশ্চিম তীরের পরিস্থিতি সম্পর্কে ওসিএইচএ জানিয়েছে, ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা ক্রমবর্ধমান। বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় গড়ে প্রতি মাসে ৪৪ জন ফিলিস্তিনি আহত হচ্ছেন। যা গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ওসিএইচএ বলছে, উত্তর পশ্চিম তীরের সালফিট গভর্নরেট জুড়ে ইসরায়েল আরোপিত চলাচলের নিষেধাজ্ঞা প্রায় ৯০ হাজার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও জীবিকা নির্বাহের সুযোগ ব্যাহত করছে। ইসরায়েলি বাহিনী সালফিটে নয় দিনের অভিযানের পর এলাকাটি অবরুদ্ধ করে রেখেছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com