বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, চীনের যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে প্রতিবেশীদের সাথে সুসম্পর্ক রাখার। গতকাল সোমবার গুলশান চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আলোচনা করেছি এবং আমাদের যে প্রয়োজন সেটা ব্যাখ্যা করেছি এবং তারা (চীন) এটাতে ইতিবাচকভাবে সায় দিয়েছেন। এটার ওপর তারা কাজ করছেন। আমরা ভবিষ্যতে কখনো সরকার পরিচালনার দায়িত্বে এলে, সেটা ইতিবাচকভাবে দেখব।
রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, চীন বলেছে যে অত্যন্ত আগ্রহের সাথে তারা বিষয়টির ওপর কাজ করছেন। মিয়ানমার গভর্মেন্টকে তারা রাজি করার চেষ্টা করছেন।
গত তিনটা নির্বাচনে চীনের সমর্থন ছিল। গত ৫ তারিখের পরে আপনারা তিনবার সফর করেছেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার চীনের মনোভাবটা কী দেখছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অত্যন্ত পজিটিভ।’
পার্শ্ববর্তী একটা দেশের সাথে আপনাদের রাজনৈতিক সম্পর্ক বিগত দেড় দশকে এতটা টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে গেছে, সেই দৃষ্টিকোণ থেকে কি আপনারা এলে মানে চীনের সাথে বন্ধুত্বটা আপনারা আরো দৃঢ় করার চেষ্টা করছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চীনের আগ্রহ যথেষ্ট রয়েছে যে প্রতিবেশীদের সাথে সুসম্পর্ক রাখার। আমরা কিন্তু এই নীতি থেকে কখনো সরিনি, তাইওয়ানের একটা ট্রেড সেন্টার এখানে কয়েকদিনের জন্য হয়েছিল। তারপরে সেটাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সম্প্রতি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে বিএনপি’র একটি প্রতিনিধি দল চীন সফরে গিয়েছিলেন, সেই দলে আমি ছিলাম, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, জহির উদ্দিন স্বপন, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল ও চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার।
তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দলের সাথে সফর বিনিময় চীনা কমিউনিস্ট পার্টির একটি প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্য, এরই ধারাবাহিকতায় ইতোপূর্বে বিএনপি’র একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি চীন সফর করেছেন।’
তিনি আরো বলেন, পাঁচ দিনব্যাপী এই সফরে আমরা চীনা কমিউনিস্ট পার্টি এবং চীন সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সাথে মতবিনিময় করার সুযোগ পেয়েছি যাদের মধ্যে ছিলেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পলিটিক্যাল ব্যুরোর সদস্য এবং ন্যাশনাল পিপল’স কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান লি হংসং, সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী মিস্টার লিউ জিয়ানচাও, সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের ভাইস মিনিস্টার মিসেস সান হাইয়ান।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের সূবর্ণ জয়ন্তী সম্প্রতি উদযাপিত হয়েছে। এটা সেই ঐতিহাসিক সম্পর্ক, যা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের চীন সফরের মধ্য দিয়ে সূচিত হয়েছিল এবং যা পরবর্তীতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রীত্ব কালে সফরের মাধ্যমে আরো ঘনিষ্ঠতর হয়েছে। প্রতিটি বৈঠকে চীনা নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক উন্নয়নে এই দুই ব্যক্তিত্বের অবদান স্বসম্মানে ব্যক্ত করেছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বৈঠকে পলিসি ব্যুরোর সদস্য শি লি হংসং আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে চীন সফরের আমন্ত্রন জানিয়েছেন এবং দ্রুতই একটি নির্বাচিত সরকারের সাথে নতুনভাবে কার্যক্রম শুরুর ব্যাপারে চীনের পক্ষ থেকে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
বৈঠকে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে পরীক্ষিত বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে চীনের অবদানসমূহ আমাদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এর ধারাবাহিকতায় আগামীতে ডিজিটাল প্রযুক্তি, সেমিকন্ডাক্টর, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, মেডিক্যাল ও স্বাস্থ্যসেবা, উচ্চশিক্ষা, যোগাযোগ, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, এসএমই বিজনেস, ব্লু ইকোনমি উন্নততর প্রযুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে চীনের অধিকতর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। চীনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে ইতিবাচক অবস্থান সুস্পষ্টভাবে উল্লেখিত হয়েছে। কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ করে আমরা এর অধিকতর প্রয়োগিক দৃষ্টান্ত দেখার অপেক্ষায় রয়েছি, যাতে আমাদের মাঝে সাংস্কৃতিক ও সফর বিনিময়, প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে সেটা আরো দৃঢ়তর হতে পারে। আমরা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিরাপদ স্বেচ্ছা এবং সম্মানজনক প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে চীনের অধিকতর এবং কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছি।
আমাদের পক্ষ থেকে পারস্পারিক মর্যাদা সমুন্নত রেখে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ভাবনায় এমন সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছি যেখানে জনগণ এবং জনকল্যাণের অগ্রাধিকার যেন থাকে সর্বোচ্চ স্থানে। আঞ্চলিক ও ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তিত পরিস্থিতির বিবেচনায় নির্যাতিতদের পক্ষে তাদের অবস্থানকে আমরা সম্মানের সাথে অভিনন্দিত করেছি এবং এর ব্যাপকতা দৃশ্যমানতার আহ্বান জানিয়েছেন বলে জানান মির্জা ফখরুল।