মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৮:০২ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
শামছুর রহমান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বৃক্ষ রোপণ উদ্বোধন করেন মেজর অব. মেসবাহুল ইসলাম ইলন মাস্কের রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ ‘হাস্যকর’ : ট্রাম্প ফ্রান্সে বাংলাদেশ দেশ কমিউনিটির সমাবেশ ও মেধাবীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ এবার ভারতীয় মিডিয়ায় ড. ইউনূস বন্দনা! নেপথ্যে কী? অগ্রগতি ছাড়াই শেষ ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের আলোচনা সেন্টমার্টিন-টেকনাফে পানিবন্দি দুই হাজার মানুষ কেউ কেউ সীমা লঙ্ঘন করেছেন, সেটা হয়তো ভিন্নভাবে দেখা হবে রাষ্ট্র সংস্কারের সব বিষয়ে আমরা একমত হবো না: আলী রীয়াজ নির্বাচন যত দেরি হবে, দেশ তত পিছিয়ে যাবে: মির্জা ফখরুল শুধু এশিয়া না, বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে নিতে চাই: ঋতুপর্ণা

ভারত গঙ্গা পানি চুক্তির নবায়নে বিভিন্ন বিকল্প বিবেচনা করছে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১ জুলাই, ২০২৫

গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি পর্যালোচনা এবং সংশোধনের জন্য ভারত বিভিন্ন বিকল্প বিবেচনা করছে। আগামী বছরের ডিসেম্বরেই বর্তমান চুক্তিটির মেয়াদ শেষ হবে। চুক্তি নবায়নের জন্য বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকার ইতিমধ্যেই ভারতকে তাগাদা দিয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ নদী কমিশনের কারিগরি দলের একটি বৈঠক ৬ মার্চ কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে আলোচনার মূল বিষয় ছিল ভারত-বাংলাদেশ গঙ্গা পানি চুক্তি। এই উপলক্ষে বাংলাদেশ দলটি ফারাক্কায় যৌথ পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শন করে।
তবে মার্চের পর চুক্তি নিয়ে বিশেষ আলোচনায় অগ্রগতি হয়নি। সম্প্রতি ভারত সরকার চুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশকে বার্তা দিতে শুরু করেছে। গত সপ্তাহে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেছেন, গঙ্গা নদীর চুক্তির ব্যাপারে আমরা যৌথ নদী কমিশনের মাধ্যমে সমন্বয় করছি। তিনি আরও বলেছেন, যে পরিবেশে উভয়পক্ষের স্বার্থ রক্ষিত হয় সেই পরিবেশে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সমগ্র বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় প্রস্তুত।
জয়সোয়াল আরও জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট রাজ্যর (পশ্চিমবঙ্গ) সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই গঙ্গা পানি চুক্তির ভবিষ্যৎ মডেল তৈরি হবে। এ ব্যাপারে অভ্যন্তরীণ আলোচনাও শুরু হয়েছে।ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ, বিহারের মতো রাজ্যগুলো অতিরিক্ত পানির দাবিতে সরব হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার কলকাতা বন্দরে পানি কমে যাওয়ার বিষয়টি চুক্তির সময় মাথায় রাখতে আরজি জানিয়েছে। ফলে গঙ্গার পানিপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে কতটা পানি ভাগাভাগির জন্য পাওয়া যাবে তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন নদী বিশেষজ্ঞরা।
উত্তর প্রদেশে যমুনার প্রবাহ বৃদ্ধি এবং জলের গুণমান উন্নত করার জন্য, বিশেষ করে দিল্লিতে উচ্চ গঙ্গা খাল থেকে যমুনা নদীতে পানি প্রবাহিত করার পরিকল্পনা চলছে। বর্তমান প্রস্তাবে পশ্চিম উত্তর প্রদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বৃহত্তম গঙ্গা খাল থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩৮০ মিলিয়ন গ্যালন (এমজিডি) অতিরিক্ত গঙ্গার পানি যমুনায় প্রবাহিত করার কথা বলা হয়েছে।
ফলে ফরাক্কার কাছে গঙ্গার পানির পরিমাণ কমে আসার সঙ্কট তৈরি হতে পারে। কিন্তু এই অবস্থাতেও সেচ, কলকাতা বন্দর রক্ষণাবেক্ষণ এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের
ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে অতিরিক্ত ৩০,০০০ থেকে ৩৫,০০০ কিউসেক পানির প্রয়োজন হবে। আর সেটাই চুক্তির সময় ভারত উত্থাপন করবে বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে ভারত এখন গঙ্গা পানি চুক্তির নবায়নের ক্ষেত্রে চুক্তির সময়সীমা বর্তমানের ৩০ বছর থেকে কমিয়ে ১০ বা ১৫ বছর করতে চাইছে। জানা গেছে, দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে স্বল্প সময়ের জন্য চুক্তি করার কথাই ভাবছে ভারত সরকার। এতে মাঝে মাঝেই চুক্তি পর্যালোচনা করার সুযোগ থাকবে।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনার পর ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এইচ. ডি. দেবেগৌড়া এবং বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তিকে একটি যুগান্তকারী অগ্রগতি হিসেবে প্রশংসিত করা হয়।
গঙ্গার পানি চুক্তিতে ফারাক্কায় নদীর প্রবাহকে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শুষ্ক মৌসুমে ভাগ করার জন্য একটি সূত্র নির্ধারণ করা হয়েছিল। ১৯৪৯ থেকে ১৯৮৮ সালের পানি প্রবাহ তথ্য ব্যবহার করে ১০ দিনের ব্লকে পরিমাপিত প্রাপ্যতার উপর ভিত্তি করে পানি বরাদ্দ করা হয়েছিল। অর্থাৎ, ফারাক্কায় ৭০,০০০ কিউসেক বা তার কম হলে প্রবাহকে কম বলে মনে করা হয়। এই ক্ষেত্রে উভয় দেশই ৫০ শতাংশ পানি পায়। যখন প্রবাহ ৭০,০০০ থেকে ৭৫,০০০ কিউসেক হয়, তখন এটিকে মাঝারি হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং বাংলাদেশ ৩৫,০০০ কিউসেক পায় এবং ভারত বাকি অংশ পায়। তবে, যখন নদীর প্রবাহ ৭৫,০০০ কিউসেক ছাড়িয়ে যায়, তখন ভারত ৪০,০০০ কিউসেক পাওয়ার অধিকারী এবং বাকি পানি বাংলাদেশে যায়।
চুক্তিটি নিশ্চিত করে যে, মৌসুমের সবচেয়ে খারাপ সময়ে অর্থাৎ ১১ মার্চ থেকে ১০ মে এর মধ্যে পর্যায়ক্রমে কমপক্ষে ৩৫,০০০ কিউসেক গঙ্গার পানি পাবে উভয় দেশ। তবে, গঙ্গায় পানির পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে কমে গেলে বর্তমান চুক্তিতে কোনও ন্যূনতম প্রবাহের নিশ্চয়তা নেই। পরিবর্তে, চুক্তির দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, যদি ১০ দিনের মধ্যে প্রবাহ ৫০,০০০ কিউসেকের নিচে নেমে যায়, তাহলে দুই সরকার অবিলম্বে পরামর্শ করবে এবং জরুরি ভিত্তিতে ন্যায্যতার নীতি অনুসারে সমন্বয় করবে এবং কোনও পক্ষের ক্ষতি করবে না।
এই চুক্তিটি বিদ্যমান ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল, যা এই ব্যবস্থা পরিচালনা করে আসছে। উভয় পক্ষের কারিগরি কর্মকর্তাদের একটি যৌথ কমিটিকে প্রতিদিনের জলপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ, তথ্য বিনিময় এবং সময়সূচী সঠিকভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। যৌথ কমিটি সাধারণত বছরে তিনবার বৈঠক করে সম্মতি তদারকি এবং যেকোনো কার্যকরী উদ্বেগ সমাধানের জন্য। যদি মতবিরোধ থাকে, তাহলে তা কূটনৈতিকভাবে নদী কমিশনের মাধ্যমে অথবা অন্য কোনও উপায়ে পারস্পরিক চুক্তির মাধ্যমে সমাধান করতে হবে বলা হয়েছিল। অন্যান্য আন্তর্জাতিক পানিচুক্তির মতো আলোচনায় তৃতীয় পক্ষের অংশগ্রহণের কোনও বিধান বর্তমানের চুক্তিতে নেই।
অবশ্য বাংলাদেশ বিভিন্ন সময়ে ন্যায্য পানি পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ করেছে। তিস্তা চুক্তি না হওয়া নিয়েও বাংলাদেশ বিভিন্ন সময়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তবে সম্প্রতি ভারতের পানি সম্পদ মন্ত্রী চন্দ্রকান্ত আর পাতিল বলেছেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন ঠিক নেই। কোনও সিদ্ধান্ত নেয়ার পরিস্থিতি এখন বাংলাদেশে নেই। তবে পরিস্থিতি ঠিক হলেএ বিষয়ে এগোনোর চেষ্টা করা হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com