বছরের পর বছর অবহেলার চিহ্ন বয়ে বেড়ানো মোংলা বন্দর আজ নতুন পরিচয়ে পরিচিত। রাজস্ব আয়ে রেকর্ড, বেড়েছে পণ্য হ্যান্ডলিং ও বিদেশি জাহাজের সংখ্যা। আধুনিকায়নের ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দরটি। মোংলা বন্দরে এখন আগের মতো নিশ্চুপতা নেই। জেটিতে সারি সারি বিদেশি জাহাজ নোঙর করে এবং কনটেইনার লোড-আনলোডের কাজ দিনরাত চলে। যেখানে আগে সপ্তাহজুড়ে জেটি ফাঁকা থাকত, এখন প্রতিদিন পণ্য খালাস হচ্ছে। গত অর্থবছরে মোংলা বন্দরের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ৩৩০ কোটি টাকা, কিন্তু আয় হয়েছিল ৩৪৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরের জন্য ২০২৫-২৬ সালে রাজস্ব আয়ের নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪০ কোটি ২২ লাখ টাকা, যা গত বছরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার থেকে সামান্য বেশি। বন্দর কর্তৃপক্ষ আশাবাদী, তারা এ বছরও নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। চলতি বছরে ৮২০ টি বিদেশি জাহাজের আগমন এবং প্রায় ৯১ লাখ মেট্রিক টন পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্য নির্ধারিত আছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায় গত পাঁচ বছরে মোংলা বন্দরের রাজস্ব প্রবণতা ছিল এভাবে—২০২০-২১ অর্থবছরে আয় ছিল ৩৪৮ কোটি ২০ লাখ টাকা, ২০২১-২২ এ কমে দাঁড়ায় ৩১৭ কোটি ৭ লাখ টাকা, ২০২২-২৩ এ আরও কমে ৩০২ কোটি ৪২ লাখ টাকা। তবে পরবর্তী দুই বছরে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে ২০২৩-২৪ সালে ৩১৯ কোটি টাকা, ২০২৪-২৫ সালে এ পৌঁছেছে ৩৪৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশনের মোংলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোঃ আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, আগে সপ্তাহে জাহাজও আসত না, এখন প্রতিদিন জাহাজ আসে, ফলে শ্রমিকদের কাজের সুযোগ বেড়েছে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা ও নীতিগত পরিবর্তনের ফলে আমরা সফল হয়েছি। মোংলা বন্দর ব্যবহার করতে ব্যবসায়ীরা অনেক আগ্রহী হয়ে উঠছে। সংযমী লক্ষ্য নির্ধারণ করেও আমরা আশাবাদী তা ছাড়িয়ে যেতে পারবো। গত বছর মোংলা বন্দর তাদের রাজস্ব ও মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এই ধারাবাহিক সাফল্য ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে মোংলা বন্দর দেশের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিচ্ছে। মোংলা বন্দর কতৃপক্ষের উপ-পরিচালক মোঃ মাকরুজ্জামান জনান, মোংলা বন্দর এখন শুধু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নয়, দেশের সার্বিক বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। আধুনিকায়নের ফলে মোংলা বন্দরে নতুন জেটি, উন্নত স্ক্যানার, আধুনিক গ্যান্ট্রি ক্রেন ও ট্র্যাকিং সিস্টেম যুক্ত হয়েছে। এর ফলে পণ্যের ট্রানজিট সময় কমেছে এবং কার্যক্ষমতা বেড়েছে। মোংলা বন্দর এখন দেশের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার প্রতীক। আধুনিকায়ন ও কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এটি দেশের বাণিজ্যিক অগ্রযাত্রায় একটি শক্তিশালী চালিকা শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।