সন্তানের জন্য পিতামাতার দোয়ার চেয়ে মূল্যবান আর কিছু নেই। সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের শোভা এবং সুসন্তান পরকালের পাথেয়। তাই দোয়া করতে হবে, সন্তান যেন পার্থিব জীবনে শোভা হয় এবং পরকালে পাথেয় হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য, স্থায়ী সৎ কাজ তোমার প্রতিপালকের কাছে পুরস্কারপ্রাপ্তির জন্য শ্রেষ্ঠ এবং কাক্সিক্ষত হিসেবেও শ্রেষ্ঠতর।’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ৪৬) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মানুষ যখন মারা যায় তখন তিনটি বস্তু ছাড়া তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। তা হলো সদকায়ে জারিয়া (কল্যাণ অব্যাহত থাকে এমন দান), এমন জ্ঞান যা দ্বারা অন্য মানুষ উপকৃত হয়, নেককার সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৬৩১)
জন্মের আগেই সন্তানের জন্য দোয়া : ইসলাম সন্তান গ্রহণের আগেই মা-বাবাকে আল্লাহর কাছে সুসন্তান লাভের দোয়া করার শিক্ষা দেয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা প্রার্থনা করে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করুন, যারা আমাদের জন্য হবে নয়নপ্রীতিকর এবং আমাদের করুন মুত্তাকীদের জন্য অনুসরণ যোগ্য।’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ৭৪)
সন্তানের জন্য বিশেষ কিছু দোয়া: মা-বাবা সন্তানের কল্যাণে যেকোনো দোয়া করতে পারেন। তবে কোরআন ও হাদিসে সন্তান-সন্ততির জন্য কিছু দোয়ার বর্ণনা এসেছে, যা সন্তানের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। এর কয়েকটি হলো: ১. নেককার হওয়ার দোয়া: সন্তান যেন আদর্শ মানুষ ও নেককার হয় সেই দোয়া করবে মা-বাবা। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে নেককার সন্তান দিন।’ (সুরা : সফফাত, আয়াত : ১০০)
২. দ্বীনের প্রতি যত্নবান হওয়ার দোয়া: সন্তান যেন দ্বীনের প্রতি উদাসীন না হয় সে জন্য দোয়া করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘সে আমার প্রতিপালক! আমাকে নামাজ আদায়কারী করুন এবং আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও। হে আমার প্রতিপালক! আমার প্রার্থনা কবুল করুন।’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৪০) ৩. নিরাপদ দেশের প্রার্থনা: সন্তান-সন্ততি যে দেশে বসবাস করে মুমিন মা-বাবা সে দেশের নিরাপত্তা কামনা করবে। আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ করো! যখন ইবরাহিম বলেছিল, হে আমার প্রতিপালক! এ নগরকে নিরাপদ করুন এবং আমাকে ও আমার পুত্রদের প্রতিমাপূজা থেকে দূরে রাখুন।’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৩৫)
৪. নিরাপদ জীবিকার দোয়া করা: সন্তান যেন উত্তম জীবিকা লাভ করে এবং তাদের জীবন শঙ্কাহীন হয় সেই দোয়া করবে মা-বাবা। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি আমার বংশধরদের কতককে বসবাস করালাম অনুর্বর উপত্যকায় আপনার পবিত্র ঘরের কাছে; হে আমাদের প্রতিপালক! এ জন্য যে তারা যেন নামাজ কায়েম করে। অতএব কিছু লোকের অন্তর তাদের অনুরাগী করে দিন এবং ফল দ্বারা তাদের জীবিকা দান করুন, যাতে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৩৭)
৫. শয়তানের প্ররোচনা থেকে মুক্তির দোয়া: মা-বাবা সন্তানের সব ধরনের অকল্যাণ দূরীভূত করার দোয়া করবে। বিশেষত শয়তানের প্ররোচনা, মানুষের কুদৃষ্টি ও অনিষ্ট থেকে মুক্তি লাভের প্রার্থনা করবে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) হাসান ও হুসাইন (রা.)-এর জন্য আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতেন এভাবে ‘আমি তোমাদের দুজনের জন্য আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ কলেমাগুলোর মাধ্যমে প্রত্যেক শয়তান ও বিষাক্ত প্রাণী থেকে এবং সর্বপ্রকার বদনজর থেকে মুক্তি চাইছি।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৭৩৭)
সন্তান মা-বাবার কাছে দোয়া চাইবে: সন্তানের জন্য দোয়া করা যেমন মা-বাবার দায়িত্ব, তেমনি মা-বাবার কাছে দোয়ার আবেদন করা সন্তানের দায়িত্ব। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা বলল, হে আমাদের পিতা! আমাদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন; আমরা তো অপরাধী। সে বলল, আমি আমার প্রতিপালকের কাছে তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব। তিনি তো অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৯৭-৯৮)