বরগুনা পৌরসভা নির্বাচনে আটঘাট বেঁধে নৌকা প্রতীকের প্রচারণায় নেমেছেন জনপ্রিয় অভিনেতা ও নির্মাতা মীর সাব্বির। এতে চটেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এক সময় ছাত্রদলের মনোনীত প্রার্থী হয়ে বরগুনা সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদে বিপুল ব্যবধানে নাট্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত এই জনপ্রিয় তারকা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর প্রচারণায় নামায় বিএনপির নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে একাধিক পোস্ট দিয়েছেন ফেসবুকে। গত সোমবার এক ফেসবুক পোস্টে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ূন হাসান শাহীন বলেন, “তুমিও নিজেকে ধরে রাখতে পারলে না সাব্বির? কৈশোর আর যৌবনের শুরুতে তুমি ছিলে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আলোকিত মুখ। আমাদের হাতধরেই ছাত্র রাজনীতির দুর্গমপথে তোমার অভিযাত্রা ছিল অপ্রতিরোধ্য! ছাত্রদল মনোনীত বরগুনা সরকারি কলেজ ছাত্রসংসদের ‘নাট্য ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক’ পদে তুমি নির্বাচিত হয়েছিলে বিপুল ভোটে।”
তিনি আরও লেখেন, ‘এই তো সেদিনও আমার সাথে তুমি ছিলে মিছিল মিটিংয়ের অগ্রভাগে! শিল্পী হিসেবে জীবন শুরু হওয়ায় রাজনীতি থেকে বিদায় নিলে এবং এটাই স্বাভাবিক ছিল। কারণ একজন শিল্পীর কোনো দল নেই, জাত নেই। আমরা এমন সাব্বিরকেই দেখতে চেয়েছিলাম! কিন্ত দুর্ভাগ্য সেই জায়গা থেকে আমরা তোমায় হারিয়ে ফেললাম আজ! তবুও স্নেহ ভালোবাসা সবসময়।’
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সদস্য রাজিবুল ইসলাম সোহেল লিখেছেন, “মীর সাব্বির সাবেক ছাত্রদল নেতা। বরগুনা সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল থেকে ‘নাট্য ও সাংস্কৃতিক’ বিষয়ক সম্পাদক পদে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিল। ঐতিহ্যবাহী মীর পরিবারের ৯০% লোক জাতীয়তাবাদী আদর্শ ধারণ করে। তিনি যেভাবে গতকাল থেকে বরগুনা পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার হয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন ও জনসভা করছেন তাতে শুধু অবাক না বিস্মিত হয়েছি। অভিনেতা সে শুধু অভিনেতাই।”
জেলা যুবদলের দফতর সম্পাদক হুমায়ূন কবীর লিখেছেন, “আমি হতবাক ও বিস্মিত। একজন মীর সাব্বির। সাবেক ছাত্রদল নেতা। বরগুনা সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল থেকে ‘নাট্য ও সংস্কৃতি’ বিষয়ক সম্পাদক পদে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিল। ঐতিহ্যবাহী মীর পরিবারের ৯০ শতাংশ লোক জাতীয়তাবাদী আদর্শ ধারণ করে। তিনি যেভাবে গতকাল থেকে বরগুনা পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার হয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন ও জনসভা করছেন তাতে শুধু অবাক না বিস্মিত হয়েছি। অভিনেতা সে শুধু অভিনেতাই। আজ আবার প্রমাণ করলেন। এসব চাটুকারদের সকলকে চিনে রাখা উচিত। সময়ের পরিবর্তনে যেন আবার চলে আসে।”
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ূন হাসান শাহীন বলেন, ‘আমাদের হাত ধরেই বিএনপির রাজনীতিতে এসেছিলেন মীর সাব্বির। একজন শিল্পীর কোনো দল-মত থাকতে পারে না। তাই শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পর আমরাই তাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিয়েছিলাম। সেই সাব্বির যখন নিজের আদর্শ আর পারিবারিক ঐতিহ্য বিসর্জন দিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রচারণায় নামে, সেটা দেখা আমাদের জন্য অনেক কষ্টের, অনেক বেদনার।’
এ বিষয়ে মীর সাব্বির বলেন, ‘গত জাতীয় নির্বাচনে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগের হয়ে প্রচারণা চালিয়েছি। তখন কিন্তু কেউ কোনো সমালোচনা করেনি। এখন স্থানীয়ভাবে যখন বরগুনার একজন নৌকার প্রার্থীর জন্য ভোট চাইছি তখন কেন সবাই অপপ্রচার চালাচ্ছেন তা সহজেই বোধগম্য। তারা আসলে নিজেদের পরাজয় দেখতে পারছেন। কিন্তু সেটা মেনে নিতে পারছেন না। এজন্যই পুরনো ছেলেমানুষি ঘটনাকে টেনে আলোচনায় আনতে চাইছেন।’ এসব নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে দাবি করেন এই অভিনেতা।