বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪৭ অপরাহ্ন

উত্তরবঙ্গে ধানের জমি এখন চা বাগান

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৯ মার্চ, ২০২১

বিশ্বমানের চা উৎপাদন হচ্ছে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর নীলফামারী, লালমনিরহাটে ১০১৭০ একর ধানের জমিতে। এই ধানের জমি এখন চা বাগান।

ভোর হতেই বাগানমুখী চা শ্রমিকরা। পঞ্চগড়সহ উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলার চা বাগানগুলো এখন কর্মচঞ্চল। দীর্ঘ দুই মাস বন্ধ থাকার পর শুরু হয়েছে চা পাতা সংগ্রহ। চা কারখানাগুলোতে শুরু হয়েছে চা উৎপাদনের কার্যক্রম।
সিলেট, চট্টগ্রাম অঞ্চলের পর তৃতীয় বৃহত্তম চা উৎপাদন অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে পঞ্চগড়। ১৯৯৬ সালে সর্বপ্রথম পঞ্চগড়ে চা চাষের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয় এবং ২০০০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষুদ্র পর্যায়ে চা চাষ শুরু হয়। পঞ্চগড়কে অনুসরণ করে চা চাষে এগিয়ে যাচ্ছে আশপাশের জেলা ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাট।
পঞ্চগড়স্থ বাংলাদেশ চা বোর্ড আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলায় চা আবাদের পরিমাণ বাড়ছে। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৮ হাজার ৬৮০ একর জমিতে চা আবাদ করা হয়। চলতি অর্থ বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ১৭০ একর। এর মধ্যে পঞ্চগড় জেলায় ৮ হাজার ৬৪২ একর, ঠাকুরগাঁওয়ে এক হাজার ২৯৩ একর, নীলফামারীতে ৬১ দশমিক শূন্য ৯ একর, দিনাজপুরে ৬১ দশমিক ৫০ একর এবং লালমনিরহাট জেলায় ১১২ দশমিক ৯৮ একর জমিতে চা আবাদ হয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন জানান, ২০২০ সালে উত্তরবঙ্গে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে চা উৎপাদন দেশে রেকর্ড স্থাপন করেছে।
পঞ্চগড় আঞ্চলিক চা বোর্ড অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলায় ১০ হাজার ১৭০ একর জমিতে চা চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০টি নিবন্ধিত ও ১৭টি অনিবন্ধিত চা-বাগান এবং ৭ হাজার ৩১০ জনক্ষুদ্র চাষি চা উৎপাদন করছেন। গত মৌসুমে পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলায় ৮ হাজার ৬৮০ একর জমিতে চা চাষ করা হয়েছিল। এর থেকে ৯৫ লাখ কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে, করোনা পরিস্থিতিতেও লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার ১৮টি চা-কারখানায় পাঁচ কোটি ১২ লাখ কেজি কাঁচা চা পাতা থেকে এক কোটি তিন লাখ কেজি চা উৎপাদন করা হয়েছে।
জানা যায়, মার্চ মাস থেকে পুরোদমে উৎপাদন শুরু হয়। তাই উত্তরাঞ্চলে চায়ের মৌসুম শুরু হয় মার্চ মাস থেকে। চা শ্রমিকরা জানান, দুই মাস কর্মহীন সময় শেষে ব্যস্ততা শুরু হয়েছে। তারা চুক্তিভিত্তিক বাগান থেকে চা সংগ্রহ করেন। এতে প্রতি কেজি চা সংগ্রহে তারা তিন থেকে পাঁচ টাকা পান।
জানতে চাইলে পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ায় প্রথম চা চাষি আবদুর রহমান বলেন, ২০০১ সালে পতিত জমিতে চা চাষ শুরু করেছিলাম। তখন অনেকেই আমাকে পাগল বলতেন। এখন সেই চা বাগান চতুর্দিকে ছড়িয়ে গেছে।
একসময়ের পতিত গো-চারণ ভূমি এখন চায়ের সবুজ পাতায় ভরে উঠছে। আন্তর্জাতিক মানের চা উৎপাদন হওয়ায় দেশের গন্ডি পেরিয়ে এ অঞ্চলের চা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে। চা-বাগানের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় চা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গড়ে উঠেছে। সৃষ্টি হয়েছে মানুষের কর্মসংস্থান। একেকজন শ্রমিক দৈনিক আয় করছেন ৫শ থেকে ৭শ টাকা পর্যন্ত। প্রতিবছর শীতের সময় চা বাগানে পাতার বৃদ্ধি কমে যায়। এসময় চাষিরা চা পাতা সংগ্রহ না করে গাছের ডালপালা ছেঁটে ফেলেন। বৈজ্ঞানিক ভাষায় একে বলা হয় প্রুনিং পদ্ধতি। এই পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে বাগানের পাতা ঘন হয় এবং বাড়ে। তাই জানুয়ারি এবং ফেয়ারি মাসে চা চাষিরা পাতা সংগ্রহ বন্ধ রেখে প্রুনিং করেন। এসময় কারখানাগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। কারখানাগুলোর মেশিনপত্র ধোয়া মোছা করে নতুন করে প্রস্তুত করা হয়।
চা বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে উত্তরবঙ্গে কোটি কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কাঁচা চা পাতার ক্রয় মূল্য এখনো নির্ধারণ করেনি চা ক্রয় কমিটি। তাই মূল্য নিয়ে কিছুটা দ্বিধায় রয়েছেন চা চাষিরা। তবে আগের নির্ধারিত মূল্যেই চাষিদের কাছ থেকে চা পাতা কেনার জন্য কারখানাগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
চা বাগানের মালিকরা জানান, বর্তমানে পঞ্চগড়ে উৎপাদিত চায়ের নিলাম চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গল নিলাম বাজারে হয়ে থাকে। উৎপাদন মৌসুমে সাধারণত ৪২টি নিলাম হয়ে থাকে।
জানতে চাইলে পঞ্চগড় জেলা স্মল টি গার্ডেন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিরুল হক খোকন বলেন, পঞ্চগড়ে প্রতিবছর চা চাষ ও চায়ের উৎপাদন বাড়ছে। চায়ের গুণগতমানও বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে পঞ্চগড়সহ উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলায় প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতা ১৬ টাকা থেকে ১৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে উৎপাদন খরচের বিবেচনায় এই মূল্য খুবই কম। পঞ্চগড়ে চায়ের নিলাম বাজার স্থাপন করা হলে চা চাষিরা সার্বিকভাবে উপকৃত হবে।
চা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁওয়ে মোট ১৮টি চা-কারখানা চালু রয়েছে। এরমধ্যে পঞ্চগড়ে ১৭টি এবং ঠাকুরগাঁওয়ে একটি কারখানা রয়েছে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ কারখানা কাঁচা চা পাতা সংগ্রহ শুরু করেছে।
জানতে চাইলে তেঁতুলিয়া গ্রিন কেয়ার চা-কারখানার ম্যানেজার মনজুর আলম বলেন, ২ মার্চ থেকে কারখানা চালু করা হয়েছে। কারখানায় প্রতিদিন ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার কেজি কাঁচা চা পাতা প্রয়োজন হয়। তবে শুরুর দিকে বাগানগুলোতে পাতা উত্তোলনের হার কম হওয়ায় এখন প্রতিদিন মাত্র পাঁচ হাজার কেজি কাঁচা চা পাতা সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com