৩২ বছর ধরে ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে সংসার চালায় দিনাজপুরের হিলির হরিহরপুর গ্রামের আব্দুল মতিন মিয়া। ঘোড়া গাড়ির চাকা বদলে দিয়েছে মতিন মিয়ার ভাগ্যের চাকা। এক ছেলেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার সহ তিন ছেলে-মেয়েকে লিখাপড়া শিখিয়েছেন তিনি। ৬৫ বছর বয়সী মতিন মিয়া ৩২ বছর যাবৎ চলায় ঘোড়ার গাড়ি, অন্য কোন কর্ম জানে না সে। আবাদি কোন জমি নেই তার, ঘোড়ায় তার হালগরু। সংসারের সকল চাহিদা পুরন করেও ছেলে-মেয়েদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করেছে এই ঘোড়ায়ালা মতিন মিয়া। এছাড়াও ঐ এলাকায় আরও ১৮ থেকে ২০ মানুষ ঘোড়ার গাড়ির উপর নির্ভরশীল। তাদের সবার ঘোড়ার গাড়ি চালানো বাপ-দাদা আমলের পেশা। অনেকেই গাড়ি চালানোর পাশাপাশি ঘোড়া বেচাকেনার ব্যবসাও করেন থাকেন। বর্তমান আমন ধান কাটা-মাড়াই শেষ, আগামী ইরি ধানের জন্য জমি তৈরি করছেন ইরি চাষিরা। চাষিদের জমিতে গোবর সার ঢোলায়ের কাজ করছেন ঐ এলাকার ঘোড়া গাড়িয়ালারা। সারাদিন ৮ থেকে ৯ গাড়ি গোবর সার মাঠে ফেলছেন তারা। ঢোলায় বাবদ প্রতিগাড়ি নিচ্ছেন তারা ৭০ টাকা, প্রতিদিন কামাই হয় ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা। আবার প্রতিদিন ঘোড়া বাবদ খরচ হয় ১০০ টাকা। তবে বছরে দুই বার ইরি ও আমন ধান কাটা-মাড়ায়ের সময় তাদের কামাই হয় অনেক বেশি। ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়ি একটি প্রাচীনতম বাহন। ঐসময় দ্রুত বাহন হিসেবে মানুষ ঘোড়াকে ব্যবহার করে থাকতো। ঘোড়া ও গাড়িতে চড়ে রাজা-বাদশারা দেশ শাসন করতেন। এছাড়াও যুদ্ধক্ষেত্রে ঘোড়া ব্যবহার হতো। ঘোড়ায় ছিলো মানুষের একমাত্র বাহক। হিলির হরিহরপুর গ্রাম সহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের লোকজন আজও প্রাচীনকালের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। প্রতিদিন সকাল হলেই ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে তার কর্মের সন্ধানে বেড় হয়। পরে রাস্তায় সারিবদ্ধ হয়ে অন্য মালমাল বহন করেন। হিলির হরিহরপুর গ্রামের আব্দুল গফ্ফার হোসেন বলেন, আমি প্রায় ২২ বছর যাবৎ এই ঘোড়ার গাড়ি চালায়। নিজেস্ব কিছু আবাদি জমি আছে, তা চাষাবাদের পাশাপাশি এই ঘোড়ার গাড়ি চালায়। চাল বাড়ির, শুধু তরিতরকারি কিনতে হয়। গাড়ি চালিয়ে যা পাই তাই দিয়ে সংসার ভালই চলে। হরিহরপুর আব্দুর মতিন মিয়া বলেন, ঘোড়ার গাড়ি আমার বাপ-দাদারা চালিয়ে আসছেন, আমিও তার প্রতি নির্ভরশীল। ঘোড়া আমার ভাগ্য পরিবর্তন করে দিয়েছে। এক ছেলেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার বানিয়েছি, এক ছেলে অনার্স শেষ করেছে, আর এক মেয়েকে বিএ পাশ করে বিয়ে দিয়েছি। আজও আমার কোন সমস্যা নেয়, ছেলেরা চাকরি পেলে আমার আর কোন চিন্তা থাকবে না।