জ্যৈষ্ঠের খরতাপে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। সকাল থেকে তীব্র তাপ অনুভূত হচ্ছে। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে এর তীব্রতা। রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র বিরাজ টানা কয়েক দিনের গরমে অস্বস্তির মাত্রা বেড়েছে।
গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজটের চিরচেনা রূপ দেখা যাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। ভ্যাপসা গরমের সঙ্গে যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী।
আবহাওয়া অফিস বলছে, বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় এবং বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেশি থাকলেও অন্যান্য অঞ্চলে তেমন বৃষ্টিপাত নেই। বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় বেড়েছে তাপমাত্রা। এছাড়া দক্ষিণাঞ্চলে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। এই অবস্থা কাটতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। এই অবস্থায় বাসায় ফ্যানের বাতাসও তেমন কাজে দিচ্ছে না। আবার মফস্বলে লোডশেডিংও হচ্ছে বেশি। ফলে নাকাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ জানিয়েছেন, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। নোয়াখালী, খুলনা ও বাগেরহাটের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। দেশের অন্যান্য স্থানেও তাপমাত্রা বেড়েছে। কেবল উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হচ্ছে। ফলে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়েছে। তাই গরম অনুভূতি বেড়েছে। বুধবার (১৮ মে) সকালে বাতাসের জলীয় বাষ্পের পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছে ৮৭ শতাংশ। বেলা ১টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে সিলেটে, ঢাকায় কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি।
এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ শুক্র বারসকাল পর্যন্ত ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়; রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়ার সঙ্গে বিজলী চমকানোসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
ঢাকায় দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার, যা দমকা হাওয়া আকারে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত ওঠে যেতে পারে। আগামী তিনদিনে আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হবে। এক্ষেত্রে শনিবার নাগাদ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে।
এদিকে অন্য এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, সিলেট, ঢাকা, কুমিল্লা, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে অস্থায়ীভাবে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। তাই এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে এক নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
দেশে এই ভ্যাপসা গরমের কারণ কী: কয়েক দিন ধরেই দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে প্রচ- ভ্যাপসা গরম। কোথাও কোথাও হালকা বৃষ্টি বা কালবৈশাখী বয়ে গেলেও অসহনীয় গরম কিছুতেই কমছে না। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল খুলনায় ৩৭ দশমিক ২, তার আগের দিন অর্থাৎ বুধবারও (১৮ মে) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল খুলনায় ৩৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা খুব বেশি না হলেও অনুভব হচ্ছে প্রায় ৪০ ডিগ্রির মতো। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ মে) দেশের মাদারীপুর, টাঙ্গাইল, চাঁদপুর, রাজশাহী, খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর ও বাগেরহাট জেলাগুলো উপর দিয়ে মৃদু তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় তাপমাত্রা কম থাকলেও গরম অনুভূত হচ্ছে বেশি। আরও ১৫ বা ২০ দিনের মতো এই ভ্যাপসা গরম থাকতে পারে। যদিও মাঝে কালবৈশাখী বা হালকা বৃষ্টি হবে কোথাও কোথাও। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, তিন কারণে এইরকম গরম অনুভূত হচ্ছে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি, বাতাসের গতিবেগ কম, সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য কম থাকা এবং দীর্ঘ সময় ধরে সূর্যের আলো মাটিতে পড়ার কারণে গরম যতটা না তারচেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে। এই সময় এমন গরম পড়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প থাকে এই সময়ে। এই জলীয় বাষ্পের কারণে শরীরে প্রচুর ঘাম হয়। ঘাম সহজে শুকায় না। আর এই ঘামের কারণে একটু গরম পড়লে মনে হয় গরমটা অনেক বেশি। এছাড়া এখন বছরে অন্য সময়ের চেয়ে দিন বড়। ফলে দীর্ঘ সময় সূর্যের তাপ মাটিতে পড়াটাও একটি কারণ।
হাফিজুর রহমান বলেন, এই গরম থাকবে বর্ষা আসার আগে পর্যন্ত। আর বর্ষা মৌসুম শুরু হয় জুনের প্রথম সপ্তাহের দিকে। এরপর হয়তো গরম কমে যাবে।
এদিকে আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, সর্বনি¤œ ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার মধ্যকার পার্থক্য না থাকাটাও গরমের একটি বড় কারণ। তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৫ দশমিক ৭ আর সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পার্থক্য মাত্র ৭ ডিগ্রির। সাধারণত তাপমাত্রার পার্থক্য ১০ ডিগ্রির কম থাকলে এরকম গরম অনুভব করার কথা। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়, রংপুর, রাজশাহীর কিছু জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কাছে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার সাথে বিজলি চমকানোসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের উত্তরপূর্বাংশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরণের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। তাপমাত্রার বিষয়ে বলা হয়, সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তাপ প্রবাহের বিষয়ে বলা হয়, মাদারীপুর, টাঙ্গাইল, চাঁদপুর, রাজশাহী, খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর ও বাগেরহাট জেলাগুলোর উপর দিয়ে মৃদু তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।