চীনা শর্ট ভিডিও মেকিং প্লাটফর্ম টিকটকের ভিডিও তৈরি ও এ সংক্রান্ত বিষয়ে চলতি বছর ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের অধিকাংশই কিশোর-কিশোরী। এছাড়াও টিকটকের কারণে গড়ে উঠছে কিশোর গ্যাং, এমনকি নারী পাচার-ধর্ষণের ঘটনাও ঘটছে। বুধবার (১৩ জুলাই) সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, গত কয়েক বছর ধরে টিকটকের অপব্যবহার এতটা বেড়েছে যে বর্তমান প্রজন্মের কিশোর-কিশোরী এবং তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এটি মৃত্যু ফাঁদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। গত ৮ জুলাই নোয়াখালীর চাটখিলে টিকটক ভিডিও বানানোর সময় অসাবধানতাবশত পা পিছলে সানজিদা আক্তার (১১) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। এরপর ১১ জুলাই কুমিল্লায় চলন্ত ট্রেনের ছাদে টিকটক করতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে মেহেদী হাসান (১৫) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়। এছাড়া টিকটক ভিডিও আপলোড করাকে কেন্দ্র করে ২০১৯ সালের মার্চে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আরাফাত খুন হয়।
গত ২ মার্চ রাজবাড়ীতে হোসেন (১৬) নামের এক কিশোর রেলওয়ে ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে টিকটক ভিডিও বানাতে যায়। সেসময় ট্রেনে কাটা পড়ে তার মৃত্যু হয়। এরপর ৮ মে নড়াইলের কালিয়ায় টিকটক করতে বাধা দেওয়ায় মায়ের সঙ্গে অভিমান করে কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করেন সুমি আক্তার (১৯)। এতে আরও বলা হয়, চলতি বছরের ১৬ মে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় টিকটক ভিডিও বানাতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যায় হৃদয় (১৫) নামের এক কিশোর। এরপর ২২ মে নীলফামারীর সৈয়দপুরে টিকটক করতে গিয়ে নদীতে ডুবে মুস্তাকিম ইসলাম (১৬) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়।
এর আগে গত বছরের ২০ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জে টিকটক ভিডিও বানাতে গিয়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে অনিল (১৪) নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়। এসব কিশোর-কিশোরী এবং তরুণ-তরুণীদের মৃত্যুর দায়ভার কোনোভাবেই টিকটক কর্তৃপক্ষ এড়িয়ে যেতে পারে না বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। টিকটক ভিডিও বানাতে গিয়ে আরও অনেকের মৃত্যু হয়েছে দাবি করে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন জানায়, সবার মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয় না হওয়া এবং প্রকাশ না পাওয়ায় তাদের নাম-পরিচয় তুলে ধরা হচ্ছে না।
সংগঠনটি আরও জানায়, শুধু মৃত্যুই নয়, টিকটক ভিডিও বানানোর প্রলোভনে ভারতে নারী পাচারের ঘটনাও ঘটেছে। এমনকি গত বছরের জুন মাসে টিকটকের ফাঁদে ফেলে এক তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়। তাছাড়া পাড়া মহল্লায় যেসব কিশোর গ্যাং গড়ে উঠেছে তার অন্যতম কারণ টিকটক। বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এতজনের মৃত্যুর কারণ টিকটক হলেও এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কোনো অভিভাবক মামলা করেননি। এসব বিষয়ে সরকারের এখনই উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।