শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৩ পূর্বাহ্ন

সাবরিনাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ স্বাস্থ্যের সাবেক ডিজির বিরুদ্ধে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০২২

জেকেজি হেলথ কেয়ার নিয়ে যখন প্রতারণা ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে, তখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি ছিলেন আবুল কালাম আজাদ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, অবৈধ সুবিধা প্রাপ্তির শর্তে জেকেজির সাবরিনাসহ প্রতিষ্ঠানের অন্যদের কাজ পাওয়া থেকে শুরু করে প্রতিটি বিষয়ে অবৈধ সুবিধা দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু তাকে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ নিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে বলে মামলার চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণার মামলায় জেকেজি হেলথ কেয়ারের কর্মকর্তা ডা. সাবরিনা চৌধুরীসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে দেওয়া চার্জশিটে আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে বিষয়টি উল্লেখ করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক লিয়াকত আলী। এদিকে, আগামী ১৯ জুলাই মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য ধার্য রয়েছে। ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন।
উল্লেখ্য, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় করোনা শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা না করে ২৭ হাজার মানুষকে রিপোর্ট দেন ডা. সাবরিনা ও জেকেজি হেলথকেয়ার। তবে এসব রিপোর্ট ভুয়ার অভিযোগে ২০২০ সালের ২৩ জুন অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলা হয়। এরপর ৫ আগস্ট মামলায় ঢাকা সিএমএম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক লিয়াকত আলী। চার্জশিটভুক্ত অপর আসামিরা হলেন- ডা. সাবরিনার স্বামী আরিফুল চৌধুরী, সাঈদ চৌধুরী, হুমায়ুন কবির ও তার স্ত্রী তানজীনা পাটোয়ারী, জেকেজি হেলথকেয়ারের নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম, প্রতিষ্ঠানটির ট্রেড লাইন্সেসের স্বত্বাধিকারী জেবুন্নেছা রিমা ও বিপ্লব দাস। তারা সবাই কারাগারে আছেন।
চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, মামলার তদন্তকালে এজাহার নামীয় গ্রেপ্তার ৯ আসামি এবং এদের মধ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া তিন আসামির জবানবন্দির কপিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ডকুমেন্টারি দালিলিক কাগজপত্র পর্যালোচনায় জানা যায়, জেকেজি হেলথ কেয়ার একটি নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান। যার আছে শুধু সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক ২০২০ সালের ১৬ জুন প্রাপ্ত ট্রেড লাইসেন্স। অথচ জেকেজি হেলথ কেয়ার প্রতিষ্ঠানটি দুই মাস আগে অর্থাৎ ১৬ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অনুমতি পেয়ে ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ এলাকায় ৮টি বুথ স্থাপন করে করোনা উপসর্গ রোগীদের স্যাম্পল কালেকশন শুরু করে। যা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদের চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় প্রকাশ পায়।
তিনি বলেন, বিষয়টি সরেজমিনে তদন্তের জন্য মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজি) গিয়ে এডিজির (প্রশাসন) সঙ্গে আলোচনা ও জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, জেকেজি হেলথ কেয়ার সংক্রান্ত সব ধরনের কাগজপত্র সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদের নির্দেশে তিনি স্বাক্ষর করেছেন। বিষয়টি তদন্তকালে জানা যায়, সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদ অবৈধ ও বেআইনিভাবে নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান জেকেজিকে করোনার মতো একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে স্যাম্পল কালেকশনের কাজটি প্রদান করেন। তদন্তকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এডিজির লিখিত বক্তব্য অনুযায়ী জেকেজি হেলথ কেয়ার কোনোভাবে স্যাম্পল কালেকশন বাবদ টাকা গ্রহণ এবং স্যাম্পল দাতাদের রিপোর্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করতে পারবে না বলে শর্ত থাকলেও জেকেজি হেলথ কেয়ার অবৈধ পন্থায় স্যাম্পল গ্রহণ ও টাকা সংগ্রহ করেছে বিধায় আসামিদের প্রতারণার বিষয়টি স্পষ্ট হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী কোনো স্যাম্পল পরীক্ষার অনুমতি না থাকলেও জেকেজি হেলথ কেয়ার আইদেশি এর মাধ্যমে স্যাম্পল পরীক্ষা করে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে প্রতারণার মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ আত্মসাৎ করেছে। এছাড়া আইদেশির কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেকেজি হেলথকেয়ার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আদেশের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নির্দিষ্ট বুথের বাইরে গিয়ে প্রতারণার উদ্দেশ্যে স্যাম্পল সংগ্রহ করেছে।’
চার্জশিটে বলা হয়, রোগীদের স্বীকারোক্তি এবং ওভালগ্রুপের আরিফুল চৌধুরী ও ডা. সাবরিনা শারমিন হোসাইনদের ব্যাংক স্টেটমেন্ট পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২০ সালের মে থেকে জুন মাসে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা লেনদেন হয়েছে। এতে স্পষ্ট হয়, করোনাকালীন তারা টাকার বিনিময়ে করোনা স্যাম্পল সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা না করে সরকারি লোগো ব্যবহার করে জাল সার্টিফিকেট প্রদান করে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করেছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও তিনি প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। তদন্তকালে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়া যায়, সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদ অবৈধ সুবিধা প্রাপ্তির শর্তে জেকেজিকে কাজ পাওয়া থেকে শুরু করে প্রতিটি বিষয়ে অবৈধ সুবিধা দিয়ে আসছিলেন।
২০২০ সালের ২০ আগস্ট সাবরিনাসহ ৮ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। গত ২০ এপ্রিল মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। চার্জশিটভুক্ত ৪০ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। গত ১১ মে আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার চান। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর আজাদ রহমান বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আমরা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি, রায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হবে। পরবর্তীতে আর যেন কেউ এ ধরনের অপরাধ করার সাহস না পায়।’ সাবরিনার আইনজীবী প্রণব কান্তি বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি, রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য উপস্থাপন কোনোকিছুই সাবরিনাকে হিট করেনি। সাবরিনা যে জেকেজির চেয়ারম্যান ছিল এটাও রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পারেনি। ২৫ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ, পাবলিকসহ ২২ জনের কেউই বলেনি সাবরিনা কারো কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। সবকিছু বিশ্লেষণ করলে, সাবনিরা কিছুই জানে না। এমনিক স্বীকারোক্তিতে কোনো আসামি সাবরিনার নাম বলেনি।’ তিনি বলেন, ‘মামলায় যাকে আসামি করার কথা ছিল তাকেই আসামি করেনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদকে আসামি করা হয়নি। কাকতালীয়ভাবে সাবরিনাকে মামলায় জড়িত করা হয়েছে। সাবরিনা এ ঘটনার সাথে জড়িত না। কাজেই আশা করছি, তিনি খালাস পাবেন।’ অন্যান্য আসামিপক্ষের আইনজীবীরাও আশা করছেন, তারা খালাস পাবেন।- রাইজিংবিডি.কম




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com