চোরাচালান, অবৈধ অনুপ্রবেশ, মানব পাচার ঠেকানোর পাশাপাশি মানবাধিকার সমুন্নত রেখে সীমান্তে কাজ করে যাচ্ছে বিজিবি ও বিএসএফ। প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ ও নতুন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে জোয়ানরা। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও জীবনের পরোয়া না করে দেশ সেবায় নিয়োজিত বিজিবি ও বিএসএফ সদস্যরা। সব ধরনের আতংক-ভয় ঠেলে দায়িত্ব থেকে পিছপা হচ্ছেন না তারা।
ভারতের সাথে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে ৪১৩০ কিলোমিটার। যার ৫৫ ভাগে নেই কোনও বেড়া। এছাড়া ৩৬৪ কিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে। সীমান্ত রেখার বেশিরভাগটাই আঁকাবাঁকা। তবে আন্তর্জাতিক সীমান্তের উভয় দিকে জাতিগত, ভাষাগত, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মিল রয়েছে। দুর্ভাবনার বিষয় হলো, সেই সব এলাকার জনসাধারণ এখনও পিছিয়ে রয়েছে। অনগ্রসরতা, দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও নিরক্ষরতা রয়েছে সেখানকার মানুষের মধ্যে। সূত্র বলছে, ভারত থেকে অবৈধ পথে বাংলাদেশে আসছে, ফেনসিডিল, ইয়াবা, অস্ত্র, স্বর্ণ, সিলভার অর্নামেন্টস। ঘটছে মানব পাচারের মতো ঘটনা। অন্যদিকে, বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার হচ্ছে স্বর্ণ, জাল নোট, মাছ, মাছের পোনা। সক্রিয় রয়েছে মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যরাও। চোরাচালানকারী সিন্ডিকেটের তথ্য রয়েছে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাছেই। বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, যশোর, বেনাপোল, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে তৎপরতা দেখা যায় চালানকারীদের। এদিকে, ভারতীয় অংশের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে ফেনসিডিল, ইয়াবা, সিলভার অর্নামেন্টস বাংলাদেশের ঢুকছে। সীমান্ত এলাকায় অপরাধ ও চোরাচালানের ঘটনা পর্যালোচনা করে প্রতিনিয়ত নতুন অভিজ্ঞতার পাশাপাশি নতুন কৌশল অবলম্বন করে বাড়তি নজরদারি বাড়াচ্ছে সীমান্তে দায়িত্বরত বিওপির প্রধানরা। তারা বড় একটি সমস্যায় পড়ছেন মোবাইল নেটওয়ার্ক নিয়ে। নিজেদের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বিএসএফ ও বিজিবি সদস্যরা বলেন, ভারতীয় এলাকায় অনেকটা ভিতরে বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের সীমান্তে অনেকটা ভিতরে ভারতীয় মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনেক সময় অবস্থান শনাক্ত করা গেলেও ঠিক জায়গায় সদস্যদের পৌঁছাতে বিলম্ব হয়। যা অনেকটাই ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সীমান্ত রক্ষাবাহিনীর সদস্যদের কাছে। এ সব বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে।
স্বর্ণ এবং মাদক এমনকি নকল নোট চোরাচালানের পাশাপাশি সীমান্তে বেড়েছে মাছের পোনা পাচার। সীমান্ত এলাকায় স্বর্ণ চোরাচালানকারীরা ব্যবহার করছে সীমান্ত এলাকার অসচ্ছল ব্যক্তিদের। স্থানীয় লোকজনের সীমান্ত এলাকায় চাষাবাদের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সক্রিয় রয়েছে মাদক, স্বর্ণসহ বিভিন্ন চোরাচালানে জড়িতরা। তবে সতর্কতামূলক পদক্ষেপের কারণে আগের চেয়ে চোরাচালানে জড়িতদের তৎপরতা কমেছে বলে দাবি করেছে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী সদস্যরা।
এছাড়া সময়ে সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধির বিভিন্ন উপায় ও বিবিধ বিষয় আলোচনা হয়। মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫২তম সীমান্ত সম্মেলনে সীমান্ত হত্যা; অবৈধ অনুপ্রবেশ; মাদক, অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং স্বর্ণসহ অন্যান্য চোরাচালান; নারী ও শিশু পাচারসহ বিভিন্ন সীমান্ত অপরাধ, আন্তর্জাতিক সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা-; সীমান্ত নদীর তীর সংরক্ষণ, বিভিন্ন সশস্ত্র উগ্রবাদী-সন্ত্রাসী সংগঠন বা গোষ্ঠীর কর্মকা- সম্পর্কিত তাৎক্ষণিক তথ্য বিনিময়; সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যৌথ উদ্যোগের নানা বিষয় উঠে আসে আলোচনায়। ভারত থেকে বাংলাদেশে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতেও নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরা হয়। বিএসএফ বিশেষ ডিজি (ইস্টার্ন কমান্ড) ওয়াই বি খুরানিয়া বলেন, আমাদের সীমান্ত এলাকা হচ্ছে আমাদের সম্পত্তি। তা দেখভাল এবং নিরাপত্তার জন্য আমরা নিয়োজিত রয়েছি। আমরা আমাদের পেশাদারিত্ব বজায় রেখে কাজ করে যাচ্ছি। সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় অনেক প্রিভেন্টিভ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আত্মরক্ষার স্বার্থে বিএসএফ গুলি চালায়। এছাড়া, নন লিথেল ব্যবহার করে অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিএসএফ সদস্যরা সীমান্তের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। যেকোনও ধরনের অপরাধের নিয়ন্ত্রণে আমরা সক্রিয় রয়েছি। সেই সাথে বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে ধারাবাহিকতায় আমরা তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছি।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবির সাতক্ষীরা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ওমর সাদী বলেন, নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে সীমান্তে কাজ করতে হচ্ছে। সব ধরনের প্রতিকূলতা দূর করে সীমান্ত সুরক্ষিত রাখতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আগের চেয়ে আমাদের দক্ষতা এবং যোগ্যতা অনেকাংশেই বৃদ্ধি পেয়েছে। চোরাচালান প্রতিরোধসহ বিভিন্ন অপরাধীদের সীমান্তে অপরাধপ্রবণতা ঠেকাতে সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছি। অনেক সময় আমরা যৌথ অভিযান পরিচালনা করছি।- বাংলা ট্রিবিউন